প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ জানুয়ারি : বিয়ের পর থেকে গৃহবধূ যে দুটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সেই দুটি সন্তানই কন্যা সন্তান। শুধুমাত্র সেই কারণে গৃহবধূর যৌনাঙ্গে রড, লাঠি ঢুকিয়ে নির্মম পাশবিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠলো স্বামীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা জানাজানি হতেই শনিবার সকাল থেকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের কালনার বাঘনাপাড়ার বিজার গ্রামে। ঘটনা নিয়ে এলাকার অন্য মহিলারা প্রতিবাদে স্বোচ্চার হতেই গা ঢাকা দিয়েছে গৃহবধূর স্বামী তৌফিক শেখ । গুরুতর জখম অবস্থায় গৃহবধূকে উদ্ধার করে এদিনই কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেছেন বাপের বাড়ির লোকজন।কালনা থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে । শুরু হয়েছে অভিযুক্ত নিষ্ঠুর স্বামীর খোঁজ স্বামীর এমন নিষ্ঠুরতার নিন্দা করেছে আপামোর কালনাবাসী ।
গৃহবধূর বাবা ভোলা শেখ জানিয়েছেন ,’২০১৬ সালে তাঁর মেয়ে শরিফার সঙ্গে বিয়ে হয় কালনার বিজারা গ্রামের যুবক তৌফিক শেখের।বিয়ের পর থেকে তাঁর মেয়ে যে দুটি সন্তানের জন্ম দেয় সেই দুটি সন্তানই কন্যা সন্তান । শরিফা পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে না
পারায় তার উপর বেজায় চটে যায় জামাই
তৌফিক।সে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে দেয় তাঁর স্ত্রী শরিফার উপর। কখনো শরিফার যৌনাঙ্গে রড কিংবা লাঠি ঢুকিয়ে দিয়ে,আবার কখনো যৌনাঙ্গের পাশে সিরিশ কাগজ ঘষে দিত তৌফিক ।’ ভোলা শেখ তাঁর অভিযোগে আরও বলেন,’এত অত্যাচার চালিয়েও তাঁর জামাইয়ের নিষ্ঠুর স্পৃহা মিটতো না।সে নিজের স্ত্রীর বুকে পর্যন্ত বেপরোয়া ভাবে মারতো । বেশ কয়েক মাস ধরেই তৌফিক এই ভাবেই নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিল তাঁর স্ত্রী শরিফার উপর ।এমনকি শরিফাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেবে বলেও তৌফিক জানায়। শরিফা তাঁর স্বামীর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে সরব হয় । তার জন্য শরিফার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় তৌফিক । গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে দিয়ে শরিফাকে প্রাণে মারার চেষ্টাও করে জামাই । এই পরিস্থিতিতে একান্ত নিরুপায় হয়ে গৃহবধূ শরিফা তাঁর স্বামীর নির্যাতনের কথা বাপের বাড়িতে জানায় ।
গৃহবধূর বধূর বাবা সহ বাপের বাড়ির অন্যরা শনিবার জামাই তৌফিকের বাড়িতে পৌছান । তাঁরা সেখান থেকে জখম অবস্থায় শরিফাকে উদ্ধার করে কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়েগিয়ে ভর্তি করেন । তারই মধ্যে গা ঢাকা দেয় তৌফিক। গৃহবধূ এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।এদিনই গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোকজন মৌখিক ভাবে তৌফিকের বিরুদ্ধে পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছেন। ভোলা শেখ বলেন ,লিখত ভাবেও তাঁরা জামাই তৌফিকের নির্যাতনের কথা পুলিশের কাছে জানাবেন ।
গৃহবধূ জানিয়েছেন,’তিনি পর পর দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছ এটাই তাঁর অপরাধ । সেই কারণে তাঁর স্বামীর নিষ্ঠুর অত্যাচার তার উপর চালিয়ে গিয়েছে । এমনকি প্রাণে মেরে দেবার চেষ্টাও করেছে । নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে তিনি বাপের বাড়িতে স্বামীর কুকীর্তির কথা জানাতে বাধ্য হন ।’ কালনা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও )সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন,
‘পুলিশের একটি টিম হাসপাতালে গিয়ে গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলেছে । ঘটনার বিষয়ে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে । লিখিত অভিযোগ এখনও গৃহবধূর পরিবারের কেউ থানায় জমা দেন নি । অভিযোগ পেলে আইন মাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’।