এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,২৫ জানুয়ারী : ইরানের ২২ বছরের কুর্দি তরুনী মাহাসা আমিনিকে উপযুক্তভাবে হিজাব না পরার জন্য হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছিল ইরানের নৈতিকতা পুলিশ । তারপর থেকে ইসলামি মৌলবাদী শাসকের পতনের দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ । বিক্ষোভ দমন করতে একের পর এক তরুণ-তরুনীকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে ইরান সরকার । এখনো তা অব্যাহত আছে । বিগত কয়েকদিন ধরেই একের পর এক যুবককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে ।
ইরানের শাসকের সমালোচনা করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) বলেছে যে ইরানে অন্তত ১১ জন বন্দীর আসন্ন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যার মধ্যে আটজন কুর্দি এবং দুজন বেলুচ রয়েছে । ইরানি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে মৃত্যুদণ্ড বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে এইচআরডবলু ।
ইরান ওয়্যারের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইরানের
দক্ষিণ-পশ্চিম খুজেস্তান প্রদেশের ডিজফুল বিপ্লবী আদালতের দ্বিতীয় শাখা গত সপ্তাহে মালেক মুসাভি নামে একজন ২৩ বছর বয়সী জাতিগত আরব যুবক যিনি রাস্তার ধারে তরমুজ বিক্রি করছিলেন তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড জারি করেছেন । মুসাভির বিরুদ্ধে “ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের” অভিযোগ আনা হয়েছিল । একই মামলায় আব্বাস খোশোরজি নামে আরেক ব্যক্তিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মুসাভি এবং তার বন্ধু খশোরজি আধাসামরিক বাসিজ বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে “আগুন লাগিয়ে” বলে অভিযোগ।
তার বাবার মৃত্যুর পর, মুসাভি তার কিশোর বয়সে স্কুল পড়া ছেড়ে দিয়ে ফল বিক্রি শুরু করতে বাধ্য হন। মুসাভির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, মালেক মরশুমে রাস্তার ধারে তরমুজ বিক্রির পাশাপাশি অন্য সময় শ্রমিকের কাজ করতেন।
সুত্রের খবর,এর আগেও মুসাভিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর । সে তিন মাস নির্জন কারাবাসেও কাটিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা ইরান ওয়্যারকে জানিয়েছে,এই যুবক সত্যিকার অর্থেই নির্দোষ। একটি দরিদ্র পরিবার থেকে আসা, তার আইনি লড়াইয়ের জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ পর্যন্ত করতে পারেনি পরিবার ।
অন্যদিকে পৃথক একটি ঘটনার অভিযোগে ইরানের একটি আদালত এক জাতিগত আরব যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে এবং তার নাবালক ভাইকে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম খুজেস্তান প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রিপোর্টকারী কারুন নিউজ এজেন্সির মতে, মাহশাহর বিপ্লবী আদালত আলি ওবেদাভিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে এবং তার ভাই হোসেনকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, চার বছর আগে মাহশহরে আধাসামরিক বাসিজ বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে হামলার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বিচার বিভাগ দাবি করেছে যে হামলার সময় বাহিনীর একজন মহিলা সদস্য তার প্রাণ হারিয়েছেন । ওবেদাভী ভাইদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল। আলী এবং হোসেন ওবেদাভি বর্তমানে মাহশহরের নাভা কারাগারে আটক রয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে,আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ওই ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না । এটা জীবনের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন ।
ইরান সরকার প্রায়শই “ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতা” এবং “পৃথিবীতে দুর্নীতি” সহ “অস্পষ্ট” অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে । অন্যান্য দেশগুলিকে এই ধরনের অভিযোগের জন্য মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য ইরানের উপর চাপ দেওয়া উচিত বলে জানিয়েছে এইচ আর ডবলু । এইচআরডব্লিউ-এর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ডেপুটি ডিরেক্টর মাইকেল পেজ বলেছেন যে মৌলিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভকে দমাতে ইরানি কর্তৃপক্ষ অন্যায় বিচারের পর মানুষের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে জনমানসে ভীতির সঞ্চার করতে চাইছে ।
ইরানি কর্তৃপক্ষ গত ২৩ জানুয়ারী এর আগে দু’জনকে ফাঁসি দেওয়ার পর এই বিবৃতি জারি করা হয়েছিল ।
অ্যাক্টিভিস্ট HRANA নিউজ এজেন্সি অনুসারে, ইরানে গত বছর কমপক্ষে ৭৪৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। কুর্দিস্তান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অন্তত ৩৪ টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রিপোর্ট করেছে । ইরানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিকেই মূলত মৃত্যুদণ্ডের দ্বারা অসমভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয় বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে ।।