সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আজ আমরা ইহুদিদের যতটা আগ্রাসী দেখি, ১৫০০ বছর আগে ইহুদিদের মানসিকতা ঠিক তার উলটো ছিল । বিশ্বের সবচেয়ে শিক্ষিত এবং সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও, ইহুদিরা সারা বিশ্বে শুধু ঘৃণার পাত্র ছিল। সমগ্র ইউরোপ ইহুদিদের ইস্যুতে আরবের পক্ষ নিত । শুধু হিটলারই তাদের হত্যা করেননি, তাদের হত্যায় খুশি ছিল গোটা ইউরোপও । বিশ্বে একাকি হয়ে পড়েছিল ইহুদির । সেই কারন ফিলিস্তিনিদের হাতে বারবার মার খেয়েও তারা পালটা প্রতিরোধ করত না । তাদের যোগত্যা বা সামর্থ ছিল না তা নয়, পরন্তু নিজেদের কোনো দেশ না থাকায় তারা কেবল পরিবারের ভরনপোষণ জোটাতে উপার্জনের কথাই ভাবত আর আরবদের হামলা আটকানোর চেষ্টা করত । পালটা হামলার রাস্তায় যেত না । যতক্ষণ না তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে ইহুদিদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব জাগেনি । আর ইহুদিদের আগ্রাসী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি হলেন এক ব্রিটিশ সেনা প্রধান- ক্যাপ্টেন অর্ড উইংগেট (Orde Wingate)। ব্যক্তিগতভাবে ইহুদিদের প্রতি তার প্রচণ্ড সহানুভূতি ছিল । সরকারী ব্রিটিশ নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি ইহুদিদের একত্রিত করতে শুরু করেন এবং তাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন।
অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিদেশ নীতিতে ইহুদিদের প্রতি কোনো সহানুভূতি ছিল না। আপনি যদি লরেন্স অফ আরাবিয়া চলচ্চিত্রটি দেখে থাকেন তবে দেখতে পাবেন যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ এবং আরবদের মধ্যে প্রচুর বন্ধুত্ব ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল । এমনকি যখন সারা বিশ্বের ইহুদিরা ফিলিস্তিনে লুকিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছিল, তখন ব্রিটিশ সরকারের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে অর্ড উইংগেটকে বাধ্যতামূলক প্যালেস্টাইনে নিযুক্ত করা হয় । তিনি প্রথমেই যে কাজটি করেছিলেন, তা হল ব্রিটিশ-ইহুদি পাল্টা-বিদ্রোহ ইউনিট স্থাপন । ইসরায়েলি সামরিক নেতা জেভি ব্রেনার এবং মোশে দায়ান তাঁর শিষ্য হয়েছিলেন। উইনগেট ইসরায়েলিদের আগ্রাসী নীতি শিখিছিলেন । তার আগে, ইসরায়েলিরা শুধু ক্যাম্পে বসে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিত। কখন আরব দলগুলো এসে তাদের আক্রমণ করবে এবং চলে যাবে, ইসরায়েলিরা প্রয়োজনে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেবে ।
একদিন উইনগেট, জেভি ব্রেনারের সাথে কথা বলার সময় জিজ্ঞাসা করলেন,’আপনি জানেন,এই পাহাড়ের ওপারের আরবরা আপনার রক্তের পিপাসু… একদিন তারা এসে আপনাদের অস্তিত্বই মুছে দেবে?’ উত্তরে ব্রেনার বলেন, ‘তারা এটা সহজে করতে পারবে না । আমরা সাহসের সাথে তাদের মোকাবেলা করব ।’
উইনগেট ব্রেনারকে তিরস্কার করে বলেন,’তুমি একজন ইহুদিও নও, তুমি একজন মাশোচিস্ট । তুমি খালি আরবদের হামলা করার জন্য আহ্বান জানাতে শিখেছ । যতক্ষণ না সে তোমার ভাইকে খুন করে, তোমার বোনকে ধর্ষণ করে, তোমার ছুঁড়ে না ফেলে, ড্রেন থেকে তোমার বাবা-মা বাঁচানোর জন্য আর্তি না জানায়, তুমি প্রত্যাঘাত করবে না। অথচ তুমি যুদ্ধ করে জিততে পারো, আমি তোমাকে শিখাবো কিভাবে লড়াই করতে হয় ।’
উইনগেট তখন বেশ কয়েকটি সামরিক অভিযানে ইহুদি সৈন্যদের নেতৃত্ব দেন। তিনি আরবদের আস্তানা খুঁজে বের করতেনে এবং অতর্কিতে হামলা করতেন। আরব হানাদারদের নৃশংসভাবে হত্যা করে কখনও কখনও মৃতদেহ লরিতে ভরে ফিলিস্তিনি থানার সামনে ফেলে দেওয়া করাতেন । উইঙ্গেট শুধু ইহুদিদের সামরিক কৌশলই নয়, তাদের মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন করেছিলেন। তাদের রক্ষণাত্মক থেকে আক্রমণাত্মক করে তুলেছিলেন । উইনগেটই একমাত্র অ-ইহুদি যার মূর্তি ইসরায়েলে স্থাপন করা হয়েছে।
পাকিস্তানি মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রাক্তন ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন অর্ড উইংগেটের নীতি নেওয়ার দাবি তোলেন ভারতের কেউ কেউ । দাবি ওঠে ভারতের অভ্যন্তরে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে নিকেশ করতে আগ্রাসী নীতি নেওয়ার জন্য । কিন্তু ভারতের তথাকথিত সেকুলার রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সেই নীতি গ্রহন করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ।।