এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১২ ডিসেম্বর : সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করছে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমরা । এবারে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম কট্টরপন্থীরা হুমকি দিয়েছে যে গোমাংস রান্না না হলে এলাকার সমস্ত হোটেল,রেস্টুরেন্ট বয়কট করা হবে । হাতে প্লাকার্ড নিয়ে রীতিমতো তারা বিক্ষোভও করেছে । বিক্ষোভের মুহূর্তের কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । প্লাকার্ডগুলোর কোনোটিতে লেখা আছে, “গরুর গোস্ত খাওয়া ঈমানের অঙ্গ” । একটিতে লেখা, “নো-বিফ খাবার হোটেল বর্জন করুন” । ইসলামী জঙ্গিদের হাতে একটা বড় ব্যানারে লেখা আছে, “নো-বিফ খাবার হোটেল বর্জনের প্রতিবাদে সমাবেশ”৷ একজন জঙ্গির হাতে ধরা প্লাকার্ডে লেখা, “যে হোটেলে গরুর গোস্ত নাই সেটা হিন্দু হোটেল” । একটি দল যারা নিজেদেরকে ‘মুসলিম কনজিউমার রাইটস কাউন্সিল’ বলে দাবি করে মঙ্গলবার এই সমাবেশের আয়োজন করে যে রেস্তোরাঁগুলো গরুর মাংস পরিবেশন করে না তাদের বয়কটের দাবিতে। দলটি পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় হোটেল আল রাজ্জাকের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়, “বিফ রেস্তোরাঁরা ভারত ও হিন্দুত্বের দালাল। এ ধরনের স্থাপনা বয়কট করুন” এবং “গোবর না গরুর মাংস? গরুর মাংস! গরুর মাংস!” তারা দাবি করেছিল যে সমস্ত রেস্তোরাঁকে তাদের মেনুতে গরুর মাংসের খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাধ্যতামূলক করা উচিত, যারা মেনে চলতে ব্যর্থ হবএ তাদের জন্য বয়কটের হুমকি দেয় ওই জঙ্গিরা । এতে স্পষ্ট যে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার সমস্ত হিন্দু হোটেল বন্ধ করার জন্য এই ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে ঢাকার ইসলামী মৌলবাদীরা ।
আসলে জানা গেছে যে পুরানো ঢাকায় ‘হোটেল আল রাজ্জাক’ বলে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। যেহেতু হোটেলটির আশেপাশে হিন্দুরা বেশি সংখ্যায় বাস করে, সেই কথা মাথায় রেখে ব্যবসার সুবিধার্থে এই হোটেলটিতে কোনো গো-মাংস বিক্রি করা হয় না। সেখানে নো-বীফ বোর্ড ঝোলানো আছে। এদিকে একজন মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও হোটেলে গোমাংস বিক্রি না করায় স্থানীয় মুসলিম মৌলবাদীদের আঁতে ঘা লাগে । ওই হোটেলটি বন্ধ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে তারা চেষ্টা চালিয়ে আসছিল । কিন্তু বহু চাপ সত্ত্বেও ‘হোটেল আল রাজ্জাক’ কর্তৃপক্ষ তার ব্যবসা বন্ধ করেননি । এতে চরম ক্ষুব্ধ হয় ইসলামী মৌলবাদীরা ।
জানা গেছে, সম্প্রতি কিছু ইসলামপন্থী মৌলবাদী ওই হোটেল মালিকের ওপর চড়াও হয়ে হামলা চালায় । মালিককে বেদম মারধরও করা হয় । কিন্তু তাতেও কাজের কাজ না হওয়ার এখন তার হোটেল বয়কটের ডাক দিচ্ছে ইসলামী মৌলবাদীরা । মঙ্গলবার হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ওই হোটেলের সামনে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শনও করে । পাশাপাশি তারা ফতোয়া জারি করে যে যেসব মুসলিম দোকানে গরু পাওয়া যায় না তা বয়কট করতে হবে । তাদের স্লোগানগুলোও ছিল হিন্দুবিদ্বেষী ।
মুসলিমদের ওই সমাবেশের সময়, কাউন্সিলের বক্তারা জোর দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের জনসংখ্যার সিংহভাগ ৯৮% – মুসলিম। তারা যুক্তি দিয়েছিল যে মুসলমানরা তাদের খাবারে গরুর মাংস রাখতে পছন্দ করে, কিন্তু কিছু রেস্তোরাঁ, যেগুলিকে তারা দাবি করে যে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ সমর্থন করে, তারা গরুর মাংসের উচ্চ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবেশন করতে অস্বীকার করে, এইভাবে মুসলিম ভোক্তাদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।কাউন্সিলের আহ্বায়ক মুহাম্মদ আরিফ আল খাবির বলেছে, ‘গরুর মাংস খাওয়া বাধ্যতামূলক (ফরদ) নয়, তবে এটি ইসলামিক পরিচয়ের প্রতীক। গরুর মাংস খাওয়া ঈমানের একটি অংশ এবং তাই বাধ্যতামূলক।’ ওই জঙ্গি কোরানের সূরা আল-বাকারাহ থেকে আয়াত ২০৮ উল্লেখ করেছে, এর প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেছে বলেছে,’যদিও উটের মাংস খাওয়া বাধ্যতামূলক নয়, ইহুদিদের খাদ্যতালিকাগত আইনের সাথে সংযোগের কারণে এটি একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। একইভাবে, হিন্দু বিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে গরুর মাংস খাওয়া মুসলমানদের জন্য ঈমানের ঘোষণা হয়ে যায়।’ অর্থাৎ তার ইঙ্গিত স্পষ্ট যে যেহেতু হিন্দুরা গরুকে পুজো করে তাই তাদের পূজনীয়দের মাংস ভক্ষণ করে নিজেদের বীরত্ব প্রমাণ করতে চায় । এদিকে ইসলামিক কট্টরপন্থীদের এহেন ফতোয়ায় এমতবস্থায় স্থানীয় হিন্দু হোটেলের মালিকরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।।