এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ অক্টোবর : আজ রবিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্বাচনী এলাকা কলকাতার ভবানীপুর বিধানসভায় জনসভা করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । অরফ্যানগঞ্জ রোডের একটা ভিড়ে ঠাসা মাঠে তিনি এসআইআর ম্যাপিংয়ের ফলাফলের পরিসংখ্যান তুলে মমতার উদ্দেশ্যে বলেন,’এতো সবে সকাল৷ এখনো দুপুর হয়নি । মাননীয়া খালা এবারে আপনি যা দেখবেন তা জীবনে কল্পনা করতে পারবেন না ।’
পাশাপাশি উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বললেন,”বাট না মত-কাট না মত-ঝুকনা মত,একে হারাবই” । তিনি বলেন,’জোট বাধুন, তৈরি হন, এই সিট জিততেই হবে । দীপাবলি গেছে, ছট শুরু হয়ে গেছে, একদম শপথ নিয়ে হারাতেই হবে । অভয়ার আত্মা শান্তি পাবে । কোন বোন, দিদি,মেয়ে সুরক্ষিত নয় । চাকরি প্রার্থীরা কাঁদছে। রতন টাটা বলে গিয়েছিলেন আমি ব্যাড “এম” কে ছাড়লাম গুড “এম” এর কাছে যাচ্ছি। ব্যাড এম-এর নাম টা কি ? গুড এম এর নামটা কি?’ আত্মবিশ্বাসী শুভেন্দু বলেন,যদি মমতা ব্যানার্জি মেটিয়াবুরুজেরা পালিয়ে যান তাহলে ভবানীপুরে একে হারাবোই ।’
ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় এসআইআর-এর ম্যাপিং এর পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন,’মোট ভোট : ২ লাখ ৫ হাজার ৮২৩ । বুথ : ২৬৭। তার মধ্যে ২৬৬ বুথে ম্যাপিং সমাপ্ত । ম্যাপ উইথ রোল : ৮৫ হাজার ৩৯৯ । পার্সেন্টেজ : ৪১.৪৯ । আর একটা বুথ ধরলে ৪২ শতাংশ ম্যাপিং আসবে ।’ তিনি বলেন,’আর এস আই আর হলে ভুত সব ভেগে যাবে । ভবানীপুরে দু লাখ নেমে গেছে ৮৬ হাজারে। ভাবতে পারেন ? এখানে যারা গুজরাটি,মারওয়ারিরা আছেন, যাদের ২০০২ সালের নাম নেই, সব নাম উঠবে, আমরা তাদের নাম তুলব ।’
তৃণমূলের আরএসআই-এর বিরোধিতার সমালোচনা করে শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তোলেন,’এসআইআর নিয়ে এত আপত্তি কেন ? এসআইআর কি নতুন ? নো । এস আই আর ইজ এ কন্টিনিউয়াস প্রসেস । শেষ ২০০২ সালে হয়েছিল । ২৬ লক্ষ নাম বাদ গেছে ।’ তিনি এও অভিযোগ করেন যে যেভানে সিএএ-কে এনআরসি বলে মিথ্যা প্রচার করে মমতা ব্যানার্জি এরাজ্যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন, ঠিক একই কায়দায় এসআইআর-কে এনআরসি বলে মানুষকে তাতাচ্ছেন তিনি । শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,আপনার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা বলছে, কালকে মিটিং করে কাঁপিয়ে দেব । কেন এই উস্কানি? কতবার উস্কাবেন? ২০১৯ সালে উসকে দিয়েছিলেন সিএএ-কে এনআরসি বলে । হাজারদুয়ারি ট্রেন পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। মালদার সামসি, মুর্শিদাবাদের ঔরঙ্গাবাদ, বেলডাঙ্গা, রেজিনগর, সব রেলস্টেশন পুড়িয়ে দিয়েছিল । নবান্নের কাছে সাঁতরাগাছিতে ৩৭ টা বাসে একসঙ্গে আগুন লাগিয়েছিল । তার মধ্যে বাইশটা সরকারি বাস । উলুবেরিয়ায় করমন্ডল এক্সপ্রেসে পেসেন্ট পার্টিকে পাথর মেরে আহত করে দিয়েছিল । এর জন্য দায়ী মমতা ব্যানার্জি । তখন বলেছিল সিএএ মানে এনআরসি । সব মুসলমান ডিটেনশন ক্যাম্পে যাবে । সিএএ চালু হয়ে গেছে । একজনও গেছে ? পহেলগামের সন্ত্রাসের হামলায় মারা যাওয়া বিতান অধিকারী স্ত্রীকে এক মাসের মধ্যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে । কোন মুসলমানের ক্ষতি হয়েছে ? এর পাল্লায় কেন পড়ছেন আপনারা? ঠিক একইভাবে এসআইআর-কে এনআরসি বলে ভোট ব্যাংকের পলিটিক্স করছে । আবার তাতাচ্ছে ।’
তবে তিনি বলেন,’তাতাক । আমরা তো মজা দেখছি । ভোটার লিস্ট না হলে ভোট হইব না । ভোট না হইলে সরকার হইবো না । সরকার না হইলে পাঁচুই মে ২০২৬ রাষ্ট্রপতি শাসন হইয়া যাইবো । কাউকে চিৎকার করতে হবে না। অতএব এসআইআর এদের গলায় আটকে গেছে । না গিলতে পারছে না উগলাতে পারছে ।’
পাশাপাশি বিগত লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার থেকে শুরু করে প্রতিটি আসনে কিভাবে ওয়েব কাস্টিং ক্যামেরা অফ করে ছাপ্পা ভোট মারা হয়েছিল তার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেন শুভেন্দু । আজও তিনি শুনিয়ে দেন যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলসদেশি মুসলমানদের এদেশে কোনো জায়গা হবে না । তিনি প্রশ্ন তোলেন,’অভারতীয়দের ভোটে আমাদের বিধায়ক নির্বাচন হবে কেন ? সেই বিধায়করা জিতে মুখ্যমন্ত্রী বানাবে কেন ? অভারতীয়রা এমপি করবে কেন ? এই এমপিরা জিততে প্রধানমন্ত্রী করবে কেন ? এদেশের অধিকার ভারতীয়দের অ ভারতীয়দের অধিকার নেই। তাই আপনারা এত চিৎকার করছেন কেন ? আর এসআইআর হলে ভুত সব ভেগে যাবে ।’ অবশ্য ধর্মীয় উৎপীড়নের কারনে পালিয়ে আসা হিন্দু,শিখ, খ্রিস্টানরা সিএএ মারফত আবেদন করলেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন বলে আশ্বস্ত করেন বিরোধী দলনেতা ।।

