প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ মে : এ যেন পাঁচ দশক আগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।দেশের পঞ্চম লোকসভা নির্বাচনের সময় তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তুলেছিলেন ’গরিবি হাঠাও’ স্লোগান। অর্থাৎ ভারত থেকে দারিদ্র দূরীকরণের কর্মসূচি।স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই স্লোগানই ছিল এক মাইল ফলক।এই শ্লোগান বা কর্মসূচিতে দেশের কত মানুষ আস্থা রেখেছিলেন তার প্রমান সেবারের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর বিপুল সাফল্য।দেশে এখন অষ্টদশ লোকসভা নির্বাচন চলছে। প্রধানমন্ত্রী এখন নরেন্দ্র মোদি।ভোটের প্রচারে বেরিয়ে, মোদিও এবার দিচ্ছেন দেশ থেকে গরিবি মুক্তির সেই একই আশ্বাস।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে শুক্রবার বর্ধমানে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের সমর্থনে এদিন তিনি বর্ধমানের সাই কমপ্লেক্সের মাঠে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। জনসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে মোদি বলেন,“ ঈশ্বর রূপী দেশের জনতা জনার্দন আমাকে এত আশীর্বাদ দিয়েছেন যা দুনিয়ার কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না। লাগাতার আশীর্বাদ করছেন। বছর বছর আশীর্বাদ বেড়ে চলেছে। আমি আরাম করার জন্য জন্মাইনি। আমি আমার জন্য বাঁচতে চাই না। আমি দেশের ১৪২ কোটি বাসিন্দার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে সেবা করার জন্যেই বেরিয়েছি। আমার আরো আশীর্বাদ চাই, যাতে করে আমি দেশের মানুষের আরও সেবা করতে পারি। আমার ওয়ারিশ কেউ নেই। আমার কারুর নামে কিছু করে যাওয়ারও নেই। আপনারা এবং আমার ভারতই আমার পরিবার।
দেশের সব মানুষকে নিজেদের পরিবার বলে দাবি করার পাশাপাশি দেশের গরিবি মানুষদের জন্যে এদিন অনুতাপের সুরও শোনা যায় মোদির গলায়। তিনি বলেন,“যখন আমি গরিবি ,পরিসানিয়া দেখি ,
তখন আমার অস্বস্তি বেড়ে যায়। তখন বেচান হয়ে যাই।আমার তখন মনে পড়ে যায় আমার ছোট বেলার কথা, আমার পরিবারের কথা। আমি চাইনা একজনও ভারতীয় গরিবি নিয়ে বাঁচতে বাধ্য হোক। আমার ভারত আমার পরিবার গরীবি নিয়ে বাঁচবে না। পূর্বের দশ বছরে দেশের ২৫ কোটি লোক গরিবি থেকে রেহাই পেয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে আরো মেহনত করব। যাতে সবাই গরীব থেকে মুক্তি পায়। ভারত দীক্সিত হলে প্রত্যেক ভারতীয় রায় বাড়বে। প্রত্যেক ভারতীয়র আয় বাড়লে বাংলার লোকেরও আয় বাড়বে বলে মোদিজি এদিন আশ্বস্ত করেন।
বিজেপি পার্টির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস । তাই লোকসভা ভোটের প্রচারেও মোদি থেকে শুরু করে মোদির ডেপুডি অমিত শাহ,সবাই কংগ্রেসের বিরোধীতায় একাট্টা। তবু দেশ থেকে গরিবি মুক্তি নিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা
গান্ধীর পথই যেন মোদিরও পথ হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।ইন্দিরা গাঁধীর ‘গরিবি হঠাও’ স্লোগান বা কর্মসূচি১৯৭১ সালের নির্বাচনে তাকে যে বিপুল নির্বাচনী সাফল্য দিয়েছিল সেটা দেশের সব রাজনীতিকরাই জানেন।তবে গরিবি হঠাও শ্লোগান বা কর্মসূচীর নেতীবাচক ফলও পরবর্তী সময়ে ইন্দিরা গান্ধীকে পেতে হয়েছিল।সেটা জেনেও এখন এই লোকসভা ভোটের সময় মোদিও দেশের মানুষকে গবিবি অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন!তাই প্রশ্ন উঠেছে ’যথেষ্ট ভাবনা চিন্তা’ করেই কি মোদি এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?এতে অতীত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো ? রাজনীতির গোলক ধাঁধায় এইসব প্রশ্নই এখন জনমানসে ঘুরপাক খাচ্ছে।।