এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,১৩ নভেম্বর : দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে এলাকারই বাসিন্দা এক বধূর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছিল এক বিবাহিত যুবক । কোনো ভাবেই স্বামীকে এঁটে উঠতে পারছিলেন না যুবকের স্বী । শেষে তিনি যুগলকে হোটেলে অপ্রীতিকর অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলেন । কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় স্ত্রী ও সন্তানদের ফেলে চলন্ত টোটো থেকে লাফ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন ওই যুবক । নদীয়া জেলার শান্তিপুরের ঘটনা । আজ বৃহস্পতিবার বেলা পর্যন্ত রামপ্রসাদ বিশ্বাস নামে ওই যুবকের কোনো হদিশ মেলেনি বলে জানা গেছে । যুবকের স্ত্রী পুষ্প বিশ্বাস জানান যে তিনি তার স্বামী,শ্বশুর রঞ্জন বিশ্বাস, শাশুড়ি গীতা বিশ্বাস ভাসুর ও জায়ের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন সহ একাধিক অভিযোগে এফআইআর দায়ের করবেন ।
জানা গেছে,রঞ্জন বিশ্বাস ও গীতা বিশ্বাসের দুই ছেলের মধ্যে ছোট রামপ্রসাদ । দুই ছেলেই বিবাহিত । একই বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে যৌথ সংসারে থাকেন তারা । রামপ্রসাদ বিশ্বাস ও পুষ্প বিশ্বাসের দুই নাবালক সন্তান রয়েছে । রামপ্রসাদ একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় ঋণ নিয়ে একটি চারচাকা গাড়ি কিনে ভাড়ায় খাটান । তিনি নিজেই গাড়ি চালান ।
পুষ্পদেবীর অভিযোগ,গবারচড় তালতলা পাড়ার তার শ্বশুরবাড়ির অদূরে গঙ্গার পাড়ের বাসিন্দা এক মহিলার সঙ্গে বিগত প্রায় ৫ বছর ধরে পুরকীয়া সম্পর্ক চলছে তার স্বামীর । স্বামীর মোবাইলে রেকর্ড করা ওই মহিলার সঙ্গে ভিডিও কল ও ছবি শ্বশুর শাশুড়িকে দেখিয়ে বিষয়টি জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি । এদিকে তার স্বামী গাড়ির কিস্তি পরিশোধের জন্য তাকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য জোর জবরদস্তি করে । অস্বীকার করলে বাচ্ছাদের সামনে তাকে মারধরও করে । তাঁর অভিযোগ,এতে শ্বশুর শাশুড়ী, ভাসুর ও জায়ের প্রশ্রয় আছে ।
পুষ্পদেবী বলেন,’কলকাতায় আমার এক মামা থাকে । গত মঙ্গলবার মামা আমায় ফোন করে বলেন যে এলাকার একটি হোটেলের ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছে আমার স্বামী ও মহিলা । তিনি আমার বলেন যে যদি তাকে হাতেনাতে ধরতে চাও, তাহলে এখুনি কলকাতায় চলে এস । এরপর আমি প্রতিবেশীদের সঙ্গে কলকাতায় যাই । সেখানে হোটেলের ঘরে ও মহিলাকে দেখতে পাই ।’
জানা গেছে, আচমকা ঘরে ঢুকে স্বামী ও প্রতিবেশী মহিলাকে পুষ্প বিশ্বাসরা অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন । গুনধর স্বামীর প্রেমিকাকে উত্তমমধ্যম দেন পুষ্পদেবী । অন্যদিকে প্রতিবেশী যুবকরা রামপ্রসাদকে বেদম পিটিয়ে দেয় । সমগ্র ঘটনা মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে রাখা হয় । সেই ভিডিও এখন ভাইরাল হচ্ছে ৷ তবে তার পরের ঘটনা আরও নাটকীয়তায় মোড়া ।
জানা গেছে,বুধবার রামপ্রসাদকে সাথে নিয়ে কলকাতা থেকে ট্রেনে চড়ে শান্তিপুর স্টেশন এসে নামেন পুষ্প বিশ্বাসরা । তারপর একটা টোটোয় চড়ে তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু টোটোটি হবিবপুরের কাছে আসতেই চলন্ত অবস্থায় লাফিয়ে পড়েন রামপ্রসাদ । তারপর দৌড়ে কিছুটা দূরে একটা বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়েন । পুষ্পদেবীরা তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো হদিশ করতে না পারে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন । কিন্তু ঘটনার কথা কানাকানি হতেই ক্ষিপ্ত প্রতিবেশীরা রামপ্রসাদের বাড়িতে এসে তার বাবা-মায়ের কাছে দাবি জানান যে বসত বাড়ি ও যা কিছু সম্পত্তি আছে তাদের ছোটো ছেলের অংশ পুষ্প বিশ্বাস ও তার দুই নাবালকের নামে রেজিস্টি করে দিতে হবে । এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা শুরু হয় । শেষে ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা রঞ্জন বিশ্বাস ও গীতা বিশ্বাসকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয় । খবর পেয়ে গভীর রাতে পুলিশ এসে তালা খুলিয়ে তাদের মুক্ত করে । কিন্তু আজ সকাল থেকে ফের উত্তেজনা শুরু হয় । পুলিশ আসে এবং পুষ্প বিশ্বাসকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেয় । বধূ জানিয়েছেন যে তিনি স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সমস্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করবেন । যদিও ছেলেকে প্রশ্রয় দেওয়া ও বধূ নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুষ্প বিশ্বাসের শ্বশুর শাশুড়ি৷।

