এইদিন ওয়েবডেস্ক,কক্সবাজার,২৪ মার্চ : বাংলাদেশে ফের এক কলেজে হিন্দু পড়ুয়াদের অজান্তে তাদের গরুর মাংস খাওয়ানোর অভিযোগ উঠল । এবারে অভিযোগটি উঠেছে কক্সবাজার সরকারি কলেজে । দিন ছয়েক আগে ওই ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা আদালতের অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায় । কক্সবাজারের বাসিন্দা বুলবুল তালুকদারের পক্ষে পাঠানো ওই নোটিশে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘খাদ্য তালিকায় সুকৌশলে বিভাজনের সৃষ্টি করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের দেওয়াল তোলার’ কথা বলা হয়েছে । পাশাপাশি এই ঘটনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ‘স্বাধীন বাংলাদেশের পরিপন্থী ও সাম্প্রদায়িক’ বলেও চিহ্নিত করেছেন ওই আইনজীবী । কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র তথা আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান,কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধক্ষ্য গিয়াস উদ্দিন,প্রাক্তন অধক্ষ্য ফজলুল করিম, কলেজের কর্মী মাহমুদুল হক চৌধুরী,এবং সহকারী অধ্যাপক মুহম্মদ উল্লাহকে অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ ২০২৩) লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে ।
জানা গেছে,গত ১৮ মার্চ কক্সবাজার সরকারি কলেজে হীরক জয়ন্তী উদযাপন হয় । দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল । মুসলিম পড়ুয়াদের জন্য গরুর মাংস রান্না করা হলেও হিন্দু পড়ুয়াদের জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি । ফলে দুপুরে হিন্দু পড়ুয়া প্যান্ডেলে খেতে গিয়ে দেখে তাদেরও গরুর মাংস পরিবেশন করা হয়েছে । এরপর তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন । যদিও তার পরেও হিন্দুদের পৃথক খাবারের ব্যবস্থা না করায় শতাধিক পড়ুয়াকে অভুক্ত থাকতে হয় ।
এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের হিন্দু শিক্ষার্থীরা । দুর্জয় নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্ট করেন, ‘হীরকজয়ন্তী অনিয়ম নিয়ে পোস্ট করলে অনেকের অনুভুতিতে আঘাত লাগবে…! অন্যদিকে আমাদের, আমার প্রথম পরিচয় আমি হিন্দু কিন্তু আমাদের খাবার থালায় কেন গরুর মাংস ? কেন আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে বার বার ছোট করে দেখা হয়? দক্ষিণ চট্টগ্রাম সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ,তাহলে কেন এই সাম্প্রাদায়িকতা ? এই অব্যবস্থাপনার দায় কে নেবে?’ এই প্রশ্নের জবাব কে দিবে ?’
অন্তর দাস নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘কক্সবাজার সরকারি কলেজে হীরক জয়ন্তীর উপহার, হিন্দুদের খাওয়ানো হলো গো-মাংসাহার।’ অন্তর দাসের পোস্টের উত্তরে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন,’দাদা এতো বাজে ব্যবস্থাপনা ছিল এতো বড় একটা অনুষ্ঠানের এটা খুবই ধিক্কার জনক।’
তবে হিন্দু পড়ুয়াদের অজান্তে তাদের গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনা এই প্রথম নয় । এর আগে গত বছর ৫ নভেম্বর ঢাকার “পাইওয়নিয়ার ডেন্টাল কলেজ” কর্তপক্ষের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিল । কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরনী উপলক্ষে ওই দিন দুপুরে কলেজে মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল । তার আগে হিন্দু পড়ুয়াদের বলা হয়েছিল তাদের জন্য খাসির মাংসের বিরিয়ানির ব্যবস্থা থাকবে । কিন্তু কলেজের চেয়ারম্যান রকিবুল হোসেন রুমি খাসির মাংসের পরিবর্তে গরুর মাংসের বিরিয়ানি সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছিল ক্যাটারারকে । আর এই কাজটি তিনি করেছিলেন অত্যন্ত গোপনে এবং মূল অনুষ্ঠানের তিন চার দিন আগে । এদিকে দুপুরে খেতে গিয়ে হিন্দু পড়ুয়ারা বুঝতে পারেন জিহাদি চেয়ারম্যান পরিকল্পিতভাবে তাদের গরুর মাংস খাওয়ানো করিয়েছে । ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা । চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে তারা কলেজের গেটের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনও করেন । জানা গেছে,”পাইওয়নিয়ার ডেন্টাল কলেজ”-এ ৩০-৩৫ শতাংশ পড়ুয়া অমুসলিম । তার মধ্যে বেশ কিছু পড়ুয়া পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ।।