এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৩ সেপ্টেম্বর : কিছু কট্টর ইসলামি দল তালিবানের কায়দায় বাংলাদেশের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই সে দেশের হিন্দুদেরর জীবন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে । বিশেষ করে অল্প বয়সী হিন্দু মেয়েরা আজ চরম অসুরক্ষিত বাংলাদেশে । সাম্প্রতিক সময়ে বাড়িতে ঢুকে হিন্দু মেয়ে ও মহিলাদের ধর্ষণ বা গনধর্ষণ এবং অপহরণের একাধিক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে ওই ইসলামি রাষ্ট্রে । এবারে একজন হিন্দু মেয়েকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তা থেকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে । ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাস নামে একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই তথ্য জানিয়ে মেয়েটির বাবার দায়ের করা অভিযোগপত্র ও মেয়েটির ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে,বাংলাদেশের জিহাদিরা পরীমল চক্রবর্তীর মেয়ে তমা চক্রবর্তী (১৮)কে জামালপুর বাজার থেকে দিনের আলোয় অপহরণ করেছে । মেয়েটি জামালপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। তার বাবা বালিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন। কিন্তু কোনো সাড়া নেই ।’
বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা হল বালিয়াকান্দি । অপহৃতা মেয়েটির বাড়ি ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার যাদবপুর গ্রামে । বালিয়াকান্দি থানায় দায়ের করা অভিযোগে অপহৃতা তমা চক্রবর্তীর বাবা পরিমল চক্রবর্তী পুলিশকে জানিয়েছেন,আমার মেয়ে তমা চক্রবর্তী(১৮) জামালপুর নিউজ কলেজে পড়াশোনা করে। অদ্য ইং-০৯/০৯/২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান ১০.১৫ ঘটিকার সময় আমার মেয়ে জামালপুর ডিগ্রী কলেজে যাওয়ার পথে জামালপুর বাজার এলাকা থেকে মোবাইল ফোন (০১৭৭৫-৩৮৫৯৪৫) মাধ্যমে আমার স্ত্রীকে জানায় যে, কে বা কাহারা অসৎ উদ্দেশ্যে আমার মেয়ের পিছু নিয়েছে এবং পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ দেখায়। তাৎক্ষনিকভাবে আমি সহ আমার পরিবারের সদস্যরা জামালপুর বাজারে আসিয়া বাজার সহ আশপাশে আমার মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু কোথাও আমার মেয়েকে খুঁজে পাইনি । এমতাবস্থায় আমার মেয়ের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রহিয়াছে।’ তিনি তার মেয়ের বিশদ বিবরণ অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে হিন্দু শুণ্য করতে দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা চলছে । সেই লক্ষ্যে হিন্দুদের খুন, ধর্ষণ, মেয়েদের অপহরণের পর ধর্মান্তরিত করে নিকাহ করতে বাধ্য করা, ঘরবাড়ি দোকানপাট ও মন্দিরে লুটপাট ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে । শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর পর এখন দুই ইসলামি জঙ্গী গোষ্ঠী জামাত ইসলামি এবং খালেদা জিয়ার বিএনপি পার্টির জঙ্গিরা দেশ থেকে হিন্দুদের নির্মুল করার ষড়যন্ত্র আরও জোরদার করেছে ৷
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২২ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৩৯জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ ওই বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ৮৯ হাজার ৯৯০ একর জমি দখল করা হয়েছে৷ বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭২টি পরিবারকে, দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৪৪৫টি পরিবারকে৷ এছাড়া সারা বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মোট ২২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে বলেও জানানো হয় । এছাড়া ১৫৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে ৮৪৯ জনকে, হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ৪২৪ জনকে এবং আহত করা হয়েছে ৩৬০ জনকে, নিখোঁজ রয়েছেন ৬২ জন, চাঁদাবাজি হয়েছে ২৭ কোটি ৪৬ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা৷ এ সময়ে হিন্দুদের মোট ২২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ বাড়ি ও মন্দির লুট হয়েছে ৩১৯টি, বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৮৯১টি, অগ্নিসংযোগ হয়েছে ৫১৯টি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে ১৭৩টি ৷
ঘরবাড়ি দখল হয়েছে ৫৭টি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ৫০টি এবং মন্দিরের ভূমি দখল হয়েছে ৫১টি৷ দখলের তৎপরতা ৯৮৪ একর ১২ শতাংশ৷ বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭২টি পরিবারকে৷ উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৪ টি পরিবারকে এবং উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছে ৩৫ হাজার ৮১৮টি পরিবারকে ৷
দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৪৪৫টি পরিবারকে, দেশত্যাগের হুমকির মুখে ১৫ হাজার ১১৫টি পরিবার এবং নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবার৷ সংঘবদ্ধ হামলা ৯৫৩টি৷ মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১২৮টি, প্রতিমা ভাঙচুর ৪৮১টি, প্রতিমা চুরি ৭২টি৷ অপহরণ করা হয়েছে ১২৭ জনকে এবং অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৭ জনকে৷ হিন্দু মহাজোটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৯ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭ জন৷ ধর্ষণের পর ১৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে ৷ বলা হয়েছে, ৫৫ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে, ১৫২ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে৷ ধর্মান্তরের চেষ্টা করা হয়েছে ৪০ জনকে৷ সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১২৭টি৷ মিথ্যা মামলায় আসামি গ্রেপ্তার, বরখাস্ত, চাকরিচ্যুত করা এবং জেল-জরিমানার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৭৯১ জন৷
১ হাজার ৬৫৭টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে৷ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘অপবিত্রকরণের’ ঘটনা ঘটেছে ১৭৯টি এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়ার ঘটনা ১২৯টি৷ ‘ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ’ গরুর মাংস খাইয়ে ৩৩৩ জনকে ‘অপবিত্রকরণসহ’ একটি পরিবারের ওপর গোমাংস নিক্ষেপও করা হয়েছে৷ যদিও সেই সময় শাসন ক্ষমতায় ছিলেন কথিত ধর্মনিরপেক্ষ শেখ হাসিনা । কিন্তু এখন দেশ শাসনের ভার কট্টর ইসলামি গোষ্ঠীগুলির হাতে । ফলে কি নিদারুন পরিস্থিতির মাঝে বাংলাদেশের হিন্দুরা রয়েছেন তা সহজেই অনুমেয় ।।