এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ অক্টোবর : মহাষ্টমীর দিন কলকাতার গার্ডেনরিচ এলাকার জে-১৯১ ফতেপুর ভিলেজ রোডের নিউ বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবের দুর্গাপুজো মণ্ডপে চড়াও হয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় কিছু মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে । ওই ঘটনার পর বিজয়া দশমীর দিন রাতে মণ্ডপে দেবীকে পুজো দিয়ে আসেন বিরোধী দলের শুভেন্দু অধিকারী । তিনি পুজো কমিটিকে আশ্বস্ত করে বলেছেন,’হিন্দুর বাচ্ছা বেঁচে আছে চিন্তা করবেন না ।’ পাশাপাশি তিনি পুলিশের ভূমিকা তীব্র প্রকাশ করেছেন । শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ যে যারা আক্রান্ত তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ ।
শনিবার বিজয়া দশমীর দিন গার্ডেনরিচ এলাকার নিউ বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবে গিয়ে দেবীকে অর্ঘ্য নিবেদন করেন শুভেন্দু অধিকারী । পরে তিনি উপস্থিত শ্রদ্ধা রুদের উদ্দেশ্যে বলেন,’আজ দশেরা, আজকের দিনেই সমস্ত অশেষ শক্তিকে বিনাশ করেছিলেন ভগবান । আমরা চাইবো অশুভ শক্তির বিনাশ হোক । ভারত ভারতবর্ষের আরেক নাম হলো হিন্দুস্তান । আমি আপনাদের সাথে আছি। যো বাটেগা ও কাটে গা । আমনারা এক থাকবেন । রাষ্ট্রবাদ দেশপ্রেমের জয় হবে ভগবানের জয় হবে৷’ তিনি বলেন,’কয়েকজন হিন্দুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে পুলিশ । সম্পূর্ণ আইনি লড়াই এবং যা যা করণীয় সব দায়িত্ব বিরোধী দলনেতার । হিন্দুর বাচ্ছা বেঁচে আছে চিন্তা করবেন না ।’ এরপর ‘জয় ভবানী’, ‘জয় মা দুর্গা’, ‘জয় শ্রীরাম’ প্রভৃতি শ্লোগান দেয় শ্রদ্ধালুরা ।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, আগেকার দিন আর নেই । মাথা নিচু করবে না কেউ । আমরা তো নিজেদের ধর্ম পালন করছি..আমরা তো কাউকে আক্রমণ করছি না… এটাতো স্বামীজি শিখেই গেছেন আমাদের…নিজের ধর্মের উপর আস্থা রাখো এবং অপর ধর্মকে শ্রদ্ধা করো । এটা কি জিনিস? বাংলাদেশ থেকে শুনে উৎসাহিত হয়েছে নাকি যে ঢাক বাজানো যাবে না, মাইক বাজানো যাবে না ? এগুলো হচ্ছে এখানকার সরকার এবং পুলিশের জন্য । আমরা প্রত্যেকটা ধর্ম রেসপেক্ট করি । এই যে ঔদ্ধত্য… জানে পুলিশ কিছু করবে না কারন আমরা ভোটব্যাঙ্ক । এই কারণে এসব করা হচ্ছে ।’
শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করা হয় পশ্চিমবঙ্গকে কি বাংলাদেশ বানানোর চক্রান্ত হচ্ছে ? উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাইতো হচ্ছে ৷ ওদের যদি কোন অসুবিধা থেকে থাকত তাহলে কমিটির লোকেদের ফোনে জানাতে পারতো । সবাই মিলে মিশে থাকে তো এখানে৷ আইন হাতে তুলে নেওয়া…সোজা পুজো মণ্ডপে ঢুকে যাওয়া…এগুলো তো হবে না…আগে এগুলো করে পার পেয়ে গেছে । ২০২২ সালের লক্ষ্মী পূজার দিন মমিনপুর-ইকবালপুরে হয়েছিল… আমি হাইকোর্টে মামলা করে এনআইএ করেছিলাম । আমি এটাও করব…আমি জনস্বার্থ মামলা করব…ছাড়বো না। ‘
পুলিশের ভূমিকা তীব্র সমালোচনা করে শুভেন্দু বলেছেন,’পুলিশের কোন ভূমিকাই নাই । উল্টে এখানে পুজো কমিটি হিন্দু ছেলেদের ৮ জনের নামে মামলা করেছে । যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের নামেই মামলা করেছে ।’ তিনি বলেন, এই সরকার পশ্চিমবঙ্গে সকলের মিলে মিশে চলার পরিবেশকে নষ্ট করে দিচ্ছে।’
প্রসঙ্গত,মহাষ্টমীর দিন গার্ডেনরিচ এলাকার নিউ বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবের দুর্গাপুজো মণ্ডপে ঢাক,মাইক প্রভৃতি বাজানোর অপরাধে হামলা চালায় বলে অভিযোগ । এই ঘটনায় পূজো কমিটির তরফে গার্ডেনরিচ থানায় একটা এফআইআর দায়ের করা হয় । কমিটির তরফে পুলিশকে জানানো হয় শুক্রবার দুপুর ১:১৩ নাগাদ ৫০-৬০ জন মুসলিম জনতা পুজো মণ্ডপে এই হামলা চালিয়েছে। তারা মহিলা ও ক্লাবের সদস্যদের ঠেলাঠেলির পাশাপাশি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ দেয় বলে অভিযোগ ৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছিলেন,’আজ কলকাতা পুলিশের অধিক্ষেত্রের অঙ্গীভূত গার্ডেনরিচ এলাকার নিউ বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবের দুর্গাপুজোয় দুষ্কৃতীদের বিনা প্ররোচনায় হামলা এবং পূজো বন্ধ করতে হবে নইলে মায়ের মূর্তি, মণ্ডপ সহ পুরো প্যান্ডেল ভাঙচুর করার হুমকি দেওয়া হয়। ক্লাব কতৃপক্ষ ইতিমধ্যেই গার্ডেনরিচ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমি কলকাতা পুলিশের সিপি মাননীয় শ্রী মনোজ কুমার বর্মার কাছে দাবি করছি এই ঘটনায় জড়িত সকলকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই নোংরা মানসিকতা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টার আমি তীব্র নিন্দা করি। দুষ্কৃতীদের এমন প্রবণতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে, এদের বোঝাতে হবে যে এটা কলকাতা, ঢাকা নয়।’
পরে তিনি রাজ্যের হিন্দুদের আশ্বস্ত করে লেখেন, ‘কলকাতায় গার্ডেনরিচে নিউ বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোমণ্ডপে যে অসভ্য ঘটনা ঘটিয়েছে দুষ্কৃতীরা তার পর বহু মানুষ বিশেষতঃ সনাতনীরা পুজো ঠিক ঠাক সম্পন্ন হলো কি না তা নিয়ে ভীষনভাবে উদ্বিগ্ন।
তাই আমি সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে সেখানকার হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগন ঐক্যবদ্ধ ভাবে উচ্ছ্বাসের সাথে রিতি মেনেই পুজোর আচার অনুষ্ঠান করছেন। আমি কলকাতা পুলিশ কে অনুরোধ করবো যাদের কে ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (২০২৩)-এর সঠিক ধারা অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুন যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা দ্বিতীয়বার না ঘটে।’।