এইদিন ওয়েবডেস্ক,মুম্বাই,৩০ মার্চ : হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে ওঠা বহু শিল্পির ব্যক্তিগত জীবন আমাদের আজও অজানা । হিন্দু বহুল রাষ্ট্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে এক সময়ে অনেক মুসলিম অভিনেতা হিন্দু নাম নিয়ে রূপালি পর্দায় অবতীর্ণ হয়েছেন । যদিও আজ সেই ট্রেন্ড বন্ধ হয়ে গেছে । শাহরুখ-সলমন-আমিররা নিজের নামেই বিখ্যাত হয়েছেন । এছাড়া বহু হিন্দু অভিনেত্রী মুসলিম অভিনেতাকে বিয়ে করেছেন এবং বিয়ে টিকিয়ে রাখতে ধর্মান্তরিত হয়েছেন । কিন্তু এই বিষয়ে জানেন খুব কম চলচিত্র অনুরাগী । আজ সেই সমস্ত অভিনেত্রীদের কথিত সেকুলারিজমের পাঠ পড়াতে দেখা যায় । সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন উঠছে যে হিন্দি ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রি বলিউড কি ধীরে ধীরে ইসলামিকরণের দিকে এগিয়ে চলেছে ?
সবাই জানেন যে সঞ্জয় দত্তের বাবা সুনীল দত্ত ছিলেন একজন হিন্দু এবং তার স্ত্রী ফাতিমা রশিদ অর্থাৎ নার্গিস ছিলেন একজন মুসলিম। কিন্তু নার্সিগকে বিয়ে করার জন্য সঞ্জয় দত্ত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন । কিন্তু তিনি এতটাই স্মার্ট যে তিনি তার ছবির নাম পরিবর্তন করেননি। কারন মুসলিম নাম নিয়ে অভিনয় করলে তার ব্যবসার উপরে প্রভাব পড়ত । উলটো দিকে এমন অনেক জনপ্রয় অভিনেতা রয়েছেন যাদের স্ত্রী হিন্দু । যেমন শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরী ছিব্বর একজন হিন্দু। আমির খানের স্ত্রী রীমা দত্ত/কিরণ রাও এবং সাইফ আলী খানের স্ত্রী অমৃতা সিং/কারিনা কাপুর উভয়েই হিন্দু। সাইফ আলী খানের বাবা নবাব পতৌদিও হিন্দু মেয়ে শর্মিলা ঠাকুরকে বিয়ে করেছিলেন। ফারহান আখতারের স্ত্রী অধুনা ভাবানি এবং ফারহান আজমির স্ত্রী আয়েশা টাকিয়াও হিন্দু।অমৃতা অরোরা শাকিল লাদাক নামের একজন মুসলিমকে বিয়ে করেছেন। সালমান খানের ভাই আরবাজ খানের প্রাক্তন স্ত্রী মালাইকা অরোরা একজন হিন্দু ছিলেন যিনি এখন তালাকপ্রাপ্ত । সালমানের ছোট ভাই সুহেল খানের স্ত্রী সীমা সচদেবও একজন হিন্দু। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে হিন্দু অভিনেত্রীদের তাদের বিয়ে বাঁচাতে ধর্ম পরিবর্তন করতে হয়েছে।আমির খানের ভাগ্নে ইমরানের হিন্দু স্ত্রীর নাম অবন্তিকা মালিক। সঞ্জয় খানের ছেলে জায়েদ খানের স্ত্রী মালেকা পারেখ। ফিরোজ খানের ছেলে ফারদিনের স্ত্রীর নাম নাতাশা। ইরফান খানের স্ত্রীর নাম সুতপা সিকদার। নাসরুদ্দিন শাহের হিন্দু স্ত্রী হলেন রত্না পাঠক ।
একটা সময় ছিল যখন মুসলিম অভিনেতারা হিন্দু নাম নিতেন কারণ তারা ভয় পেতেন যে দর্শকরা যদি জানতে পারে যে তারা মুসলমান, তাহলে কেউ তাদের ছবি দেখতে আসবে না। এই ধরনের অভিনেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নামটি হল ইউসুফ খান, যাকে আমরা কয়েক দশক ধরে দিলীপ কুমার হিসাবে ভেবে এসেছি ।
আমরা বদরুদ্দিন জামালুদ্দিন কাজীকে জনি ওয়াকার এবং হামিদ আলি খানকে ভিলেন অজিত হিসাবে দেখি । হিন্দু নামেই ওই দুই মুসলিম অভিনেতা জনপ্রিয় হয়েছেন । এখনও বহু চলচিত্র অনুরাগী জানেন না যে এক সময়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী রীনা রাইয়ের আসল নাম ছিল সায়রা খান। আজকের সফল শিল্পী জন আব্রাহামও একজন মুসলিম । তার আসল নাম ফারহান ইব্রাহিম।
কিন্তু বিগত ৫০ বছরে এই পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে । এখন বলিউডের মুসলিম শিল্পীরা হিন্দু নাম রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না, বরং তাদের মুসলিম নাম তাদের ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে ।
তবে কংগ্রেসের রাজত্বকালে বলিউডকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম । ওই পলাতক সন্ত্রাসী বলিউডে অর্থায়ন করত এবং সুপরিকল্পিত ভাবে বলিউডের ইসলামিকরণ করে যাচ্ছিল । দাউদ ইব্রাহিমের কথাতেই প্রায় প্রতিটি ছবিতেই নায়ক মুসলিম ছেলে আর নায়িকা হিন্দু মেয়ে হত । ছোট করে দেখানো হত হিন্দু ধর্মকে । টি-সিরিজের মালিক গুলশান কুমার তার কথায় কান না দিলে দাউদ বাহিনীর হাতে তাকে খুন হতে হয় । আজও, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা মুসলিম নায়ককে চুক্তিবদ্ধ করার সাথে সাথে দুবাই থেকে সহজ শর্তে ঋণ পান বলে দাবি করা হয় । ইকবাল মির্চি এবং আনিস ইব্রাহিমের মতো সন্ত্রাসী এজেন্টদের সাথে সাত তারকা হোটেলে প্রকাশ্যে দেখা করতে দেখা যায় সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খান, সাইফ আলি খান, নাসিরুদ্দিন শাহ, ফারহান আখতার, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, ফাওয়াদ খানের মতো অনেক নামি অভিনেতাদের । মনোজ কুমার এবং রাকেশ রোশনের মতো চলচ্চিত্র নির্মাতারা এই সন্ত্রাসীদের চোখের কাঁটা। টাবু, হুমা কুরেশি, সোহা আলি খান এবং জারিন খানের মতো প্রতিভাবান অভিনেত্রীদের ক্যারিয়ার জোর করে শেষ করা হয়েছিল কারণ তারা মুসলিম এবং ইসলাম ধর্মান্ধরা তাদের কাজকে ধর্মহীন বলে মনে করত ।
চলচ্চিত্রের গল্প লেখার কাজটি সেলিম খান এবং জাভেদ আখতারের মতো মুসলিম লেখকদের ঘিরেও আবর্তিত হয়েছিল, যাদের গল্পে একজন ভাল-সৎ মুসলমান, একজন ভণ্ড ব্রাহ্মণ, একজন অত্যাচারী-ধর্ষক ক্ষত্রিয়, একজন কালোবাজারী বৈশ্য, একজন বিশ্বাসঘাতক হিন্দু নেতা, একজন দুর্নীতিগ্রস্ত হিন্দু ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। একজন পুলিশ অফিসার এবং একজন দরিদ্র দলিত মহিলা একটি বাধ্যতামূলক শর্ত ছিল তথকার ছবিতে । উদ্দেশ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করা৷ যাতে তারা অনেকাংশে সফলও হয়েছে । এই ছবির গীতিকার ও সুরকারদেরও মুসলমান হতে হবে, তবেই মওলার নামে গান তৈরি হবে এবং গায়ককে পাকিস্তান থেকে আসতে হবে । নিজের ছবিতে অরিজিৎ সিংকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানি গায়ককে দিয়ে গান গাওয়াতে দেখা গেছে সলমন খানকে ।
কিন্তু ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসতেই বলিউডের পট পরিবর্তন শুরু হয়েছে । দেশের কথিত ‘অসহিষ্ণুতা’র কথা বলে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে ফ্লপ হয়েছে আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’র মত বিগ বাজেটের ছবিও । উলটো দিকে তৈরি হয়েছে কেরালার লাভ জিহাদের উপর নির্মিত “দ্য কেরালা স্টোরি” নামে যুগান্তকারী একটি ছবি । যার ফলে আঁতে ঘা লাগছে কথিত সেকুলারিজমের নামে মুসলিম তোষামোদকারী ব্যক্তি,সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলির ।।