প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ অক্টোবর : ভারতের নদী থেকে মিললো বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ।আর সেই ইলিশ মাছ নিয়ে শুক্রবার ব্যাপক উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে।শুধু তাই নয়,বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপ অঞ্চলের পদ্মা,মেঘনা ও যমুনা নদীর মোহনার ’রুপলি শস্য’ ইলিশ মাছের দামোদরে আগমন নিয়েও চর্চা তুঙ্গে উঠেছে। তবে চর্চা যাই থাক শারদোৎসবের বাজারে দামোদরের ইলিশের মার্কেট ভ্যালু অবশ্য পদ্মার ইলিশের মার্কেট ভ্যালুকেও কার্যত টপকে দিয়েছে।জামালপুরের মাছের আড়তে একুশ শো টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে যায় দামোদরে জেলের জালে ধরা পড়া ইলিশ মাছটি ।
বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব শারদোৎসব। সেই উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে।শারদোৎসবের সময় বাংলাদেশের ইলিশের কদর বাড়ে পশ্চিম বাংলায় ।এই সময় বাংলাদেশের রফতানি করা ইলিশ মাছের স্বাদ পাবার জন্য মুখিয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি কুল।এমন সময়েই বিড়াট চমক দেওয়া কাণ্ড ঘটলো জামালপুরে।দুর্গাপুজোর প্রথমাতে নোনা জলের “রুপোলি” শস্য মিলে গেল মিষ্টি জলের দামোদর নদে । জেলে জালে ধারা পড়লো একেবারে এক কেজি ওজনের ইলিম মাছ । তরতাজা জ্যান্ত সেই ইলিশ মাছ নিয়ে জেলে শুক্রবার সকালে জামালপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাছে আড়তে হাজির হতেই শোরগোল পড়ে যায় । ওই ইলিশ মাছটি দেখতে মাছের আড়তে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়।
দেবীপক্ষ শুরুর আগে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও তার সাথে ডিভিসির জলাধার থেকে দফায় দফায় জল ছাড়ার ফলে দামোদর নদ প্লাবিত হয় । তার কারণে বানভাসি হয়ে পড় জামালপুরের বিভিন্ন এলাকা।মৎসজীবীদের ধারণা,হয়তো ডিভিসির ছাড়া জলের বিপরীতে আসতে আসতে মোহনা থেকে কিছু ইলিশ দামোদর নদের জামালপুর এলাকায় এসে পড়েছে।জামালপুরের মাছের আড়তের ব্যবসায়ীদের কথায় জানা যায়, স্থানীয় উত্তর মোহনপুর এলাকা নিবাসী জেলে তপন বিশ্বাস প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতে দামোদরে জাল ফেলেন। শুক্রবার ভোরে জাল টেনে তুলতেই তিনি দেখেন তাঁর আটকা পড়েছে এক কেজি ওজনের একটি রুপোলি ইলিশ মাছ । বেলায় সেই ইলিশ মাছটি নিয়ে তিনি মাছের আড়তে আসতেই হইচই পড়ে যায় ।
জেলে তপন বিশ্বাসের জালে ধরাপড়া ইলিশ মাছটিকে নিয়ে মাছের আড়তে হু হু করে দাম উঠতে শুরু করে । আড়তদার প্রভাত পাত্র মাছটি নিলামের ডাক ১২০০ টাকা থেকে হাঁকা শুরু করেন।ওই সময় আড়তে উপস্থিত থাকা জামালপুরের বাসিন্দা লক্ষণ বিশ্বাস ২১০০ টাকা দরে মাছটিকে কে নিলাম করে কেনেন । জ্যান্ত ইলিশ কিনে খুশিতে ডগমগ বলেন,’১কেজি ওজনের জীবন্ত ইলিশ মাছ পেয়ে আমি খুবই খুশি। পুজোর সময় বাড়ির সকলের টাটকা ইলিশ খাওয়ার স্বাদ পুরণের জন্য টাকার পরোয়া না করেই ২১০০ টাকা কেজি দরেই মাছটা কিনে নিয়েছি ।’ তিনি এও জানান,’ ১৫-২০বছর আগেও দামোদরে ইলিশ পাওয়া যেত। দীর্ঘদিন পর আবার দামোদরে জেলের ফেলা জালে ইলিশ ধরা পড়লো’। কিন্তু ইলিশতো যেখানে থাকে ঝাঁক বেঁধেই থাকে।তাহলে ধরা পড়া ইলিশ সংখ্যায় শুধুমাত্র একটা কেন? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মাছের আড়তের কারুর কাছেই মেলেনি !
এ বিষয়ে জামালপুরের মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক নিত্যানন্দ মণ্ডল বলেন,ইলিশ অ্যানোট্রোনাস মাইগ্রেটরি ফিশ। এরা পরিযায়ী । লোনা জল থেকে মিষ্টি জলে ডিম পাড়তে আসে। সম্ভবত সেভাবেই জামালপুরের দামোদরে মাছটি ধরা পড়েছে। আশার কথা শুনিয়ে নিত্যানন্দ বাবু বলেন,’ইলিশ মূলত ঝাঁকের মাছ। আগামীদিনে আরো ইলিশ মাছ ধরা পড়তে পারে।’।