এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০২ মে : মমতা ব্যানার্জির আমন্ত্রণে বুধবার দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে সস্ত্রীক হাজির হয়ে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এখন নিজের দলেরই চক্ষুশূল হয়ে গেছেন । কোলাঘাটে বিক্ষোভের মুখে পরার পর পশ্চিম মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের ছবিতে জুতোপেটা করেন বিজেপি কর্মীরা । বিধানসভার ভোটের আগে তাকে সমস্ত পদ থেকে সরানোরও দাবি তোলা হয়েছে । পাশাপাশি বিজেপি কর্মীরা দাবি করছে যে দিলীপ ঘোষ নাকি ‘তৃণমূলের হনিট্রাপে ফেঁসেছেন’ । আর তারা এই মন্তব্য দিলীপ ঘোষের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের কমেন্ট সেকশনে করছেন ।
আসলে, বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে গত সপ্তাহে বিয়ে করেছেন দিলীপ ঘোষ । বিয়ের দিনেই দিলীপ ঘোষকে শুভেচ্ছাবার্তা, ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিয়ে হওয়ার পরে বিজেপি নেতাকে শুভেচ্ছা জানান তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্টে অভিষেক লিখেছিলেন, ‘দিলীপ ঘোষ এবং রিঙ্কু মজুমদারকে আন্তরিক অভিনন্দন তাঁদের সুন্দর শুরুর জন্য। ভালোবাসার নিজস্ব সময়, ছন্দ রয়েছে। আপনাদের এক হওয়া সেই সত্যের একটি সুন্দর প্রমাণ। জীবনের এই নতুন অধ্যায়ে আপনাদের দু’জনের জীবনের হাসি, শান্তি এবং একে অন্যের সাহচর্য কামনা করছি।’ শুভেচ্ছার তালিকায় ছিল অনুব্রত মণ্ডল, কুণাল ঘোষ-সহ আরও অনেক তৃণমূলের নেতার নাম । তারপর দিঘায় মমতা ব্যানার্জির পাশে সস্ত্রীক বসে খোশ মেজাজে গল্প করায় বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে তোলপাড় ।
দিলীপ ঘোষের একটা পোস্টের কমেন্ট সেকশনে চান্দা বসু লিখেছেন,’আপনার বিয়ের খবরে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি আপনার স্ত্রী তৃণমূলের হানি ট্র্যাপ। আপনি তার শিকার হয়েছেন এবং সমস্ত রকম বোধবুদ্ধি লুপ্ত হয়েছে। আপনার অধঃপতনের শুরু।’ উত্তম মণ্ডল লিখেছেন,’আপনার স্ত্রী তৃণমুলের হানি ট্রাপ। আপনি তার শিকার হয়েছেন, ফালতু আপনি ।’ অভিজিৎ ভাস্করের কথায়,’দিলীপ ঘোষের জীবনটা ঝিংকু করে দিল রিঙ্কু ।’
বিজয় মিশ্রের কথায়,’একে বলে বিয়ের পর বউর কথায় চলা ।’ সৌমেন বারিক লিখেছেন,’২১ শে জুলাই আসছে দিন দিলীপ বাবু ব্রিগেডের মঞ্চে দেখা দিন।’
এদিকে বুধবার দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে দিলীপ ঘোষের সস্ত্রীক হাজির হওয়া নিয়ে একটা চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন সাংবাদিক সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ফেসবুকে একটা পোস্টে লিখেছেন,’মমতার ডাকে দিলীপের দীঘা যাওয়া, প্ল্যান ফাইনাল হয়েছিল বহু আগে । মমতার সঙ্গে ফোনে ।
দু দিন আগে দিলীপকে কলকাতার এক খুব পরিচিত আমার ঘনিষ্ঠ এক অধ্যাপক ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন – শুনছি, দিলীপদা, এটা কি ঠিক যে আপনি মমতার ডাকে কাল যাচ্ছেন দীঘায়, জগন্নাথ ধামে ? দিলীপের উত্তর ছিল এমনই – হ্যাঁ যাচ্ছি । শুভেন্দুর বুকে পা দিয়েই যাচ্ছি ।’
তিনি লিখেছেন,’এই প্লটকে কি বলবেন ? এটা বলা বাহুল্য বাংলায় মমতার এক এবং একমাত্র ঘোষিত মূল শত্রু শুভেন্দু । দিলীপেরও তাই ? অবাক পৃথিবী ! এই দিলীপকে বিজেপিতে কেউ কি সত্যিই থামানোর নেই ? বিশ্বাসযোগ্য ? রাজ্যে বসে আছেন সুনীল বনসল, মঙ্গল পান্ডে, সতীশ ধোন্ড, আশা লাকরা, অমিত মালব্য । আর এস এসের প্রচারক ছিলেন এত বছর । কেশব ভবনের কেউ ? থামাতে পারছেন না ? নাকি থামাবেন না ?’
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন,’দিল্লিতে দলের মাথারা সবাই চেনেন তাঁকে । থামাচ্ছেন না কেন ? কোথায় ঠিক অসুবিধে ? কিসের অসুবিধে ? ডঃ সুকান্ত মজুমদার বলছেন – এটা পার্টির লাইন নয়, পার্টি এনডোর্স করে না । দায়িত্ব শেষ ? দিল্লিকে বুঝিয়ে দ্রুত দিলীপকে ডেকে পাঠানো যেত না ? ব্যবস্থা নেওয়া যেত না ? বুঝতে কি পারছেন না যে এতে দলের নীচু তলার কর্মীদের মনোবল কোথায় কি অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ? ভেবে দেখেছেন এভাবে ? একবারও ?’
সন্ময়বাবু বলেছেন,’যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না । নীচের তলায় যা মুড, যে কোনোদিন নিচের তলায় দিলীপ ব্যাপক হেনস্থার মুখে পড়বেন । আজই কোলঘাটে মার খেতে খেতে বেঁচেছেন । দিলীপ অনুগামী পশ্চিম মেদিনীপুরে ব্যাপক মার খেয়েছেন জেলা সভাপতি । কিল চড় ঘুষি সব কিছু । মারতে মারতে গাড়ি ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিয়েছেন কর্মীরা । সব জেলাতেই অবস্থা এখন তাই । পেলেই মারবে, মুড । এদিকে ১১ মাস বাদে বিধানসভা নির্বাচন । ঠিক তার আগে তৃণমূল দিলীপকে মাঠে নামিয়ে দিল । প্ল্যান করে, অঙ্ক কষে । কুণালকে লাগিয়ে রেখে । এরপরও এ বি পি আনন্দে কোন যুক্তিতে এখনও তর্কে নামছেন ? আগে দলটাকে তো বাঁচান । তারপর না হয় অনেক সময় পাবেন, তর্ক করার । ভেবে দেখবেন ড: মজুমদার । যা লিখলাম ।’।