এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৭ সেপ্টেম্বর : প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার পর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় এখন কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী সংগঠনগুলির হাতে । কট্টরপন্থীরা ক্ষমতায় ফেরার পরেই শেখ হাসিনার সময়ে জেলবন্দি সমস্ত সন্ত্রাসীদের মুক্তি দিয়ে দিয়েছে । ওই সমস্ত সন্ত্রাসীরা এবং জামাত ইসলামি-বিএনপি এর মত জঙ্গি সংগঠনগুলি নিদারুন নিপিড়ন চালাচ্ছে সেদেশের হিন্দুদের উপর । এবারে বাংলাদেশের একটা জঙ্গি সংগঠন পোস্টার সাঁটিয়ে হিন্দুদের হুমকি দিয়েছে বলেছে যে হাসিনার যুগ শেষ,এবারে শরিয়া আইনে দেশ চলবে,হিন্দুদের বাধ্যতামূলক ভাবে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে ।’
পোস্টারটির ছবি দিন পাঁচেক আগে ‘ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাস’ নামে একটা এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করা হয়েছে । পোস্টারে লেখা হয়েছে,’প্রিয়া হিন্দু ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম, ইতিমধ্যে আপনারা বুঝতে পেরেছেন শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার পরেই, ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রন করা হবে। এই জন্য বাংলাদেশে যত হিন্দু আছে সবাইকে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করতে হবে বাধ্যতামূলক। ইতিমধ্যে আমরা হিন্দুদের ধর্মীয় মন্দির সহ মূর্তি ভাংচুর অগ্নিসংযোগ শুরু করেছি, আগামীতে এগুলো আরো বেশি করা হবে। হিন্দুদের বাড়ি ঘর লুটপাট করা হবে, মেয়ে ছেলেদের বিভিন্ন ভাবে তুলে নেওয়া হবে। হিন্দুদের কোনো প্রকার চাকরি প্রদান করা হবে না।দ্রুত বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়া হোক আজ । ভদ্রভাবে বলা হলো পরবর্তীতে কাফনের কাপড় দেওয়া হবে।’ নিচে লেখা হয়েছে,’ইসলামী ঐক্য’ এবং ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য : বিভিন্ন প্রকার চাঁদা দেওয়া জন্য প্রস্তুত থেকো’ এবং ‘টার্গেট হিন্দু’ ।
তবে এই পোস্টার কোথায় সাঁটানো হয়েছিল তা স্পষ্ট করা হয়নি । এইদিন-এর পক্ষেও ঘটনার সত্যতা যাচাই করা যায়নি । তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করা হচ্ছে যে ইতিমধ্যেই হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ জামাত ইসলামি । অভ্রনীল হিন্দু কয়েকটি ছবিসহ এক্স-এ পোস্ট করেছে,’জামাত বাংলাদেশে হিন্দুদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করা শুরু করেছে। বাংলাদেশে গত ৭ সেপ্টেম্বর,শনিবার বিকেল ৪ টায়, লালমনিরহাট কলমাটি ২ নম্বর ওয়ার্ডের ২৭ জন গ্রামবাসীকে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় ধর্মের অপপ্রচার এবং দেশত্যাগ ও হত্যার হুমকি দিয়ে ।’
এদিকে বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ রিপোর্ট করেছে যে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষী দিয়েছিলেন ময়মনসিংহের ফুলপুরের অজিত কুমার সরকার ওরফে পেনু (৬৫)। যাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছিলেন, দুই বছর আগে কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অজিতের বাড়িতে হামলা হয়। মামলায় সাক্ষী দেওয়ায় তাঁকে তুলে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। অজিতের বাড়ি ফুলপুরের বালিয়া ইউনিয়নের ডোমকোনা গ্রামে। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পাশের মইশাউন্দা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে করা মামলার সাক্ষী ছিলেন অজিত। একসময় তিনি ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাড়িতে হামলার পর ওই মামলার বাদী ও অন্য সাক্ষীরাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। অজিতের স্ত্রী পূর্ণিমা রানী সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট বিকেল ৪টার পর ৩০-৪০ জনের একটি দল বাড়িতে হামলা করে। গোয়ালের গরুসহ গৃহস্থালির সব জিনিস লুট করে। জানালা ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় স্বামী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি ঘরেই ছিলেন। একপর্যায়ে বাড়ির পেছনের গেট দিয়ে তিনি সন্তানদের প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে আসেন। তাঁর স্বামী পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা পাশের বাড়ি থেকে তাঁর স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর পূর্ণিমা রানীও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৫ দিন পর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন।
পূর্ণিমা রানী বলেন, ‘আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকে অনেক কথা বলছে। কেউ বলছে, মউশাউন্দা বাজারে নিয়ে মারধর করেছে, মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি সেটি দেখিনি। স্বামী বেঁচে আছে না মরে গেছে, বলতে পারি না। যদি বেঁচে থাকত অবশ্যই ফোন করত। কিন্তু তার তো কোনো সন্ধান নেই।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,’অজিত সরকারকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি ফুলপুর থানার সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমানকে জানিয়েছিলেন স্থানীয় লোকজন। ১৬ আগস্ট তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছিল। ঘটনার দু-এক দিন পরে আমাদের কাছে তারা এসেছিল। আমরা শুধু নাম-ঠিকানা লিখে রেখে দিয়েছি। পরিস্থিতির কারণে আমরা ওদিকে যেতে পারিনি।’ থানার নতুন ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অনুসন্ধান করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।।