এইদিন ওয়েবডেস্ক,১৩ নভেম্বর : ইসরায়েলের হামলা চালিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে,শিরোচ্ছেদ করে, গুলি করে ১,৪০০ শিশু, মহিলা,পুরুষ এমনকি বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে নির্মমভাবে খুন করেছে ইরান সমর্থিত ফিলিস্থিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস । এত নৃশংসতা সত্ত্বেও বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলি এবং ভারতসহ অমুসলিম রাষ্ট্রের মুসলমানরা হামাসকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ দল বলে অবিহিত করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে । কিন্তু এই
হামাসের নৃশংস কর্মকাণ্ডে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছিলে খোদ জেলবন্দি হামাস নেতা শেখ হাসান ইউসেফের ছেলে মোসাব হাসান ইউসুফ । যিনি দ্য গ্রিন প্রিন্স নামে পরিচিত । তিনি হামাস ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদের উপর এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিষেবা শিন বেটের জন্য গোপনে কাজ করেছিলেন । শিন বেট তাকে হামাসের নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান উৎস বলে মনে করত । ইউসুফ যে তথ্য সরবরাহ করেছিলেন তাতে কয়েক ডজন আত্মঘাতী হামলা এবং ইসরায়েলিদের হত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছিল । অনেক হামাস সন্ত্রাসীকে খতম করতে সক্ষম হয়েছিল ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স ৷ এমনকি নিজের বাবা তথা হামাস নেতা শেখ হাসান ইউসেফকে কারারুদ্ধ করতে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছিলেন মোসাব হাসান ইউসুফ ওরফে দ্য গ্রিন প্রিন্স । ২০১০ সালের ৪ মার্চ তিনি হামাসের পুত্র (Son Of Hamas) শিরোনামে তার আত্মজীবনী প্রকাশ করেন । যাতে তিনি ইসলামের সন্ত্রাসবাদের খোলাখুলি সমালোচনা ও বিশ্বের অপরাপর ধর্মের গুণাবলি তুলে ধরেছেন ।
২০১০ সালের ১২ মার্চ মেমরি (MEMRI TV) টিভিতে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে নিজের ধর্মত্যাগের কারন ব্যাখ্যা করেছিলেন মোসাব হাসান ইউসুফ । তার প্রতিটি কথায় হামাস,ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ও ইসলামের নবী মুহাম্মদের নীতির উপর ক্ষোভ উগরে দেন । সেই পুরনো সাক্ষাৎকারে ইউসুফের বক্তব্যের ইংরাজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হল : মোসাব হাসান ইউসুফ বলেছিলেন,’আমি বলেছি, এবং বলতে থাকবো, আমার সমস্যা হামাস বা মুসলমানদের সাথে নয়। আমার সমস্যা ইসলামের ঈশ্বর এবং ইসলামের নবীর সাথে। এই বিষয়ে… ক্রমাগত দ্বন্দ্ব ছিল, যা আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল যে আমি আমার জীবনকে কোন দিকে নিয়ে যেতে চাই। অবশ্যই, কারাগারে হামাসের জনগণের উপর নির্যাতন চালানো হয়, তাদের মূর্খতা এবং তাদের রাজনৈতিক অযোগ্যতা আমাকে কথা বলতে বাধ্য করেছিল।’
তিনি বলেন,’কে বলেছে হামাসের ইসলাম আর আল-কায়েদার কোনো ইসলাম আছে ? না, আমি তা বলছি না। আমি যেটা বলছি ইসলামই ইসলাম, আর কোরানই কোরান। কোরান একটি বিভক্ত ব্যক্তিত্বে ভুগছে, এবং ইসলামের ঈশ্বর একটি বিভক্ত ব্যক্তিত্বে ভুগছেন। ইসলামের ঈশ্বরকে অনুসরণকারী সমস্ত মুসলমানরা তাদের পছন্দ মতো ইসলামকে ব্যাখ্যা করে, কিন্তু এটি ইসলামের সন্ত্রাসী এবং হত্যাকাণ্ডের চরিত্রকে অস্বীকার করে না, যা মানুষকে কোরানের মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করতে এবং নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করে ।’
তিনি বলেন,’সূরা আল-তওবা, আয়াত ৫ এবং ২৯- এ যান। সমস্যা হল মুসলিমরা তাদের নিজেদের ধর্ম বোঝে না। আমি মুসলমানদেরকে তাদের কোরান পড়ার এবং বোঝার আহ্বান জানাই, তারা বলবে যে ইসলাম শান্তি ও সহানুভূতির ধর্ম । অথচ এই ইসলামের ঈশ্বরই যেকোনো অমুসলিমকে হত্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসলামের ঈশ্বর আজ আমাকে হত্যা করার জন্য ডাকছেন।’
মুসাব হাসান ইউসুফ বলেন,’বেশ কিছু ইসলামী চিন্তাবিদদের বেশ কিছু অবিশ্বস্ত মতামত রয়েছে, কিন্তু তাদের কর্তৃত্ব ইসলামের ঈশ্বরের কথাকে ছাড়িয়ে যায় না, যিনি বলেছেন,’আহলে কিতাবকে যেখানেই পাও সেখানে হত্যা কর। বেশ কিছু ইসলামী চিন্তাবিদদের বেশ কিছু অবিশ্বস্ত মতামত রয়েছে, কিন্তু তাদের কর্তৃত্ব ইসলামের ঈশ্বরের কথাকে ছাড়িয়ে যায় না, যিনি বলেছেন: “আহলে কিতাবকে যেখানেই পাও সেখানে হত্যা কর।” আপনি যদি আমার সাথে তর্ক করতে চান – আসুন তর্ক করি। ইসলামের এই নবী মুহাম্মদ কি মুসলমানদের জন্য সর্বোচ্চ আদর্শ ?’
ইউসুফ বলেন,’মুহাম্মদ কি খায়বারের ইহুদিদের হত্যা করেছিলেন, নাকি করেননি? তুমি আমাকে বলো, ঘটনা বিকৃত করছ কেন? মুসলমানদের অবশ্যই নিজেদের এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সৎ হতে হবে। মুহাম্মদ – মুসলমানদের জন্য সর্বোচ্চ আদর্শ – খায়বার, কুরাইজা এবং নাধিরের ইহুদিদের হত্যা করেছিলেন। সে তাদের শিশুদের হত্যা করেছিল এবং তাদের নারীদের বন্দী করেছিল। আর সেই মুসলমানদের জন্য সর্বোচ্চ আদর্শ ! আমার সমস্যা সেই ভন্ড নবী মুহাম্মদ এবং ইসলামের ঈশ্বরের সাথে(My problem is with that false prophet, Muhammad, and with the God of Islam) ৷
তিনি বলেন,’মুসলমানরা স্বভাবতই সন্ত্রাসী নয়। তারা আমার মতে সেরা জাতির মধ্যে রয়েছে। যাইহোক, মুসলিমরা যদি সন্ত্রাসীদের সমর্থন করতে থাকে এবং সন্ত্রাসীদের গৌরব ও সম্মান করতে থাকে যারা নিজেদের উড়িয়ে দেয়, শিশুদের হত্যা করে, তারা সহযোগী হতে থাকবে,যেমন আমার বাবা ।
ইসরায়েল সহিংসতার সাথে কাজ করছে এবং নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এটি একটি কারণ সহ বা কারন ছাড়া মানুষ হত্যা, কিন্তু কিছু ভুল ঘটতেই পারে । পৃথিবীর প্রতিটি দেশই ভুল করে, শুধু ইসরাইল নয়।’
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে ইউসুফ বলেন,’ হত্যা একটি ভুল – হত্যাকারী যেই হোক না কেন – কিন্তু হামাসের কোন নীতি, কোন আইন এবং কোন সীমা নেই, যেখানে ইসরাইল আইন ও সংবিধান দ্বারা আবদ্ধ। যদি একজন বর্ণবাদী ইসরায়েলি থাকে, তাহলে তার বিচার হবে। আমাকে একজন হামাস কর্মকর্তার উদাহরণ দিন যিনি বিচারে দাঁড়িয়েছিলেন। আমার দৃষ্টিতে যদি ইসলামকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করা হয়, তাহলে এটি আরব ও মুসলিম বিশ্বের – প্রকৃতপক্ষে সমগ্র বিশ্বের – ধ্বংসের কারন হবে- কারণ প্রতিটি মুসলমানই বিন লাদেন হয়ে উঠবে।’
তিনি বলেন,’খ্রিস্টানরা গত ১৪ শতাব্দী ধরে নির্যাতিত হয়েছে – মুসলমানদের দ্বারা নয়, ইসলামের ঈশ্বরের দ্বারা। নিপীড়ন শুরু হয় কোরানে এবং ইসলামের নবীর আচরণে ।’
মোসাব হাসান ইউসুফ জেরুজালেমের উত্তরে ১০ কিলোমিটার দূরে রামাল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন ।
তার বাবা শেখ হাসান ইউসুফ ছিলেন একজন হামাস নেতা যিনি বহু বছর ধরে ইসরায়েলি কারাগারে কাটাচ্ছেন । পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় মোসাব হাসান ইউসুফ । ১৯৯৯ সালে, ইউসুফ খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন । নিজের নাম রাখেন জোসেফ এবং তিনি ২০০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে যান । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান ২০১০ সালে । বর্তমানে
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোতে বসবাস করেন ।।