প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ ফেব্রুয়ারি : ‘বড় দুঃখের রেল’ এবার যাত্রীদের ’বড় সুখ’ দিতে চলেছে।বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাঁকুড়া থেকে মসাগ্রাম হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন সোজা পৌছে যাবে হাওড়া স্টেশনে। মসাগ্রাম স্টেশনে মিলে মিশে যাবে পূর্ব রেল এবং দক্ষিণ পূর্ব রেল । এই খবরে যারপরনাই খুশি বাঁকুড়া ও পূর্ব বর্ধমান জেলার দক্ষিণ দামোদর এলাকার বাসিন্দারা । তাঁরা চাইছেন যত দ্রত সম্ভব ভারতীয় রেল দফতর এই পরিষেবা চালু করুক।তাহলে শুধু সাধারণ মানুষজনই নয়,দুই জেলার কৃষকরাও প্রভূত উপকৃত হবেন।
বাঁকুড়া দামোদর রিভার রেল,যা বি ডি আর নামেই
বিশেষ পরিচিতি পেয়ে আসছে।একটা সময়ে বি ডি আর বড় দুঃখের রেল নামেই জনমানসে পরিচিত ছিল।রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রী সভায় রেলমন্ত্রী থাকা কালে বি ডি আর- এর দুঃখের অবসান ঘটাতে উদ্যোগী হন । তার পরেই ,১৯১৬-১৭ সালে তৈরি হওয়া ন্যারো গেজের এই রেল পথটিকে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা নেয়। সেই অনুযায়ী ২০০০ সালে শুরু হয় এই রেল পথকে ’ন্যারোগেজ’ থেকে ’ব্রডগেজে’ রপান্তরিত করে বাঁকুড়া থেকে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার মসাগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যাবার কাজ।মসাগ্রামে গড়ে তোলা হয় জংশন স্টেশন। নতুন করে গড়েতোলা এই রেল পথের উদ্বোধন হয় ২০০৫ সালে ।এর পর শুরু হয় বাঁকুড়া থেকে মসাগ্রাম পর্যন্ত ১১৮ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল পথের বৈদ্যুতিকরণের কাজ । ২০২১ সালের প্রথমার্ধেই রেলদফতর সেই কাজ শেষ করে ফেলে। আর এবার এই রেল পথ দিয়েই যাত্রীবাহী ট্রেন বাঁকুড়া থেকে মসাগ্রাম হয়ে হাওড়া যাবে। সেই ব্যবস্থা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত এবার পাকাপাকি ভাবে নিয়ে ফেললো রেল দফতর । মসাগ্রামেই মিলে মিশে যাবে পূর্ব রেল আর দক্ষিণ পূর্ব রেল ।রেল
সূত্রে খবর এই কাজ পুরোটাই করবে পূর্ব রেল ।কেন্দ্রের রেল দফতর তার জন্য খরছ ধরেছে ৩৯ কোটি টাকা । কাজটি শেষ করার সময়সীমা ধরা হয়েছে ১০ মাস ।
বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল কয়েক মাস আগে পর্যন্ত ভারতীয় রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছিলেন। মঙ্গলবার সুনীল মণ্ডল বলেন,আমি এখন রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে অতিথি সদস্য হিসাবে আছি ।একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন,বাঁকুড়া থেকে মসাগ্রাম পর্যন্ত রেলপথে বৈদ্যুতীকরণের কাজ সম্পূর্ণ যখন হয় তখনও আমি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে ছিলাম। ওই সনয়েই এই রেলপথকে পূর্ব রেলের হাওড়া- বর্ধমান কর্ড শাখার সঙ্গে সংযুক্ত করে ট্রেন হাওড়া পর্যন্ত নিয়ে যাবার বিষয়টি আমি ট্র্যান্ডিং কমিটিতে তুলি। পরবর্তি সময়ে স্ট্যান্ডিং কমিটি তা অনুমোদন করে ।এবার এই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা মাত্র । সাংসদ সুনীল মণ্ডল এও জানান, বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী থাকা কালে বি ডি আর- এর দুঃখ ঘোচানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হন ।বাঁকুড়া থেকে হাওড়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গেলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কৃষিজীবীরাও প্রভূত উপকৃত হবেন। চাষের সবজি নিয়ে চাষিরা হাওড়া ও কলকাতার বাজারে বিক্রি করতে যেতে পারবেন । দুর্গাপুর ,আসানসোলের বাজারেরও চাষের ফসল বিক্রি করতে নিয়ে যেতে পারবে চাষিরা । একই ভাবে গো পালকরাও দুধ, ছানা নিয়ে কলকাতা, কিংবা দুর্গাপুর, আসানসোলের বাজারে বিক্রি করতে পারবেন । এমনটা করতে পারলে বাঁকুড়া ও পূর্ব বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমার চাষিদের রোজগারও বাড়বে । পাশাপাশি এই রেলপথকে আঁকড়ে খুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখাধা গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও তৈরি হবে বলে সাংসদ সুনীল মণ্ডল দাবি করেছেন’। একই দাবি করেছেন,খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবিনচন্দ্র বাগ , রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারা ও জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি ।
জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার গোটা দেশের মানুষের বিকাশের কথা ভাবে । তাই বাংলার মনুষের আর্থ সামাজিক উন্নতির কথা ভেবে কেন্দ্রের রেল দফতরও বাঁকুড়া ও বর্ধমান দুই জেলার মানুষের দাবিকেই মান্যতা দিয়েছে। এখন যেমন বাংলার রেলপথ দিয়ে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটছে,তেমনি আর কয়েকমাস পর জঙ্গলমহল বলে পরিচিত মানুষজন এক ট্রেনে চেপেই বাঁকুড়া থেকে সোজা হাওড়া পৌছো যাবেন ।।