এইদিন স্পোর্টস নিউজ,২৭ জানুয়ারী : লা লিগায় টানা চার ম্যাচে পয়েন্ট হারানোর পর জয়ের দেখা পেল হান্সি ফ্লিকের দল। তেতে থাকা বার্সেলোনার আগুনে পুড়ল ভালেন্সিয়া। অবনমন অঞ্চলের দলটির জালে গোল উৎসব করে চার ম্যাচ পর লা লিগায় জয়ে ফিরল হান্সি ফ্লিকের দল।সম্পূর্ণ একপেশে ম্যাচে রবির রাতে ৭-১ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। জোড়া গোল করেছেন ফের্মিন লোপেস। একটি করে রবের্ত লেভানদোভস্কি, রাফিনিয়া, ফ্রেংকি ডি ইয়ং ও ফেররান তরেস। অন্যটি ভালেন্সিয়ার আত্মঘাতী।
ফ্লিকের কোচিংয়ে মাত্র ৩২ ম্যাচে গোলের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছে বার্সেলোনা। এর চেয়ে কম ম্যাচে দলটি শতগোল করেছে কেবল হেলেনিয়ো এররার কোচিংয়ে; সেই ১৯৫৯ সালে, ৩১ ম্যাচে। লা লিগায় সবশেষ চার ম্যাচে জয়শূন্য থাকলেও প্রথম পছন্দের কয়েক জন খেলোয়াড়কে বাইরে রেখে একাদশ সাজান ফ্লিক। তবে লেভানদোভস্কি, পেদ্রিদের অনুপস্থিতি বোঝা যায়নি একবারের জন্যও। তৃতীয় মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। পায়ের কারিকুরিতে দুই ডিফেন্ডারের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে ডি-বক্সে ক্রস করেন লামিনে ইয়ামাল। অরক্ষিত ডি ইয়ং প্রথম স্পর্শে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেকটা শুয়ে পড়ে পোস্ট ঘেঁষে জাল খুঁজে নেন। কিছুই করার ছিল না ভালেন্সিয়া গোলরক্ষক জিওর্জি মামার্দাশভিলির।
পঞ্চম মিনিটে রাফিনিয়ার বুলেট গতির শট বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে। অষ্টম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তরেস। আলেহান্দ্রো বাল্দের চমৎকার ক্রসে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে প্রথম স্পর্শে ঠিকানা খুঁজে নেন তিনি।।নিজের প্রাক্তন দলের বিপক্ষে গোল উদযাপন করেননি তরেস। দুই হাত উঁচু করে একরকম যেন ক্ষমাই চেয়ে নেন এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর মরিয়া হয়ে ওঠে অবনমন অঞ্চলে থাকা ভালেন্সিয়া। বার্সেলোনার রক্ষণে চাপ বাড়ায় তারা। তাদের হতাশ করে প্রতি-আক্রমণ থেকে চতুর্দশ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায় বার্সেলোনা। ইয়ামালের ব্যাকহিলে বল পেয়ে যান লোপেস। প্রথম স্পর্শে এই তরুণ খুঁজে নেন রাফিনিয়াকে। বিপদ দেখে ডি-বক্সের বাইরে বেরিয়ে আসেন মামার্দাশভিলি। তাকে এড়িয়ে আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। চলতি আসরে এটি তার ১২তম গোল। ২৪তম মিনিটে স্কোর লাইন ৪-০ করে ফেলেন লোপেস। মাঝমাঠ থেকে পাউ কুবার্সির বাড়ানো বল প্রথম স্পর্শে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, একটু এগিয়ে জোরাল শটে জালে পাঠান এই তরুণ। শুরুতে অফসাইডের ইশারা দেন রেফারি। পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোলের বাঁশি বাজান তিনি।চলতি আসরে ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের এটাই প্রথম গোল।
২৭তম মিনিটে পঞ্চম গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল বার্সেলোনা। খুব কাছ থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তরেস। আট মিনিট পর উগো দুরোকে বার্সেলোনা গোলরক্ষক ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ভালেন্সিয়া। পরে ভিএআর মনিটরে তাদের আক্রমণের শুরুর অংশ দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান রেফারি। উল্টো প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের কাছাকাছি জায়গায় বার্সেলোনাকে দেন ফ্রি কিক। যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে ফের জালের দেখা পান লোপেস। রাফিনিয়ার বুলেট গতির শট ক্রসবার ও পোস্টের সংযোগস্থলে লেগে ফিরলে সুযোগ পেয়ে পান লোপেস। ছুটে গিয়ে নিচু শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। ৫-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা।প্রথমার্ধে গোলের জন্য কোনো শটই নিতে পারেনি ভালেন্সিয়া। একই রকম আক্রমণাত্মক ফুটবলে দ্বিতীয়ার্ধে ভালেন্সিয়ার রক্ষণে চাপ ধরে রাখে বার্সেলোনা। তৈরি করতে থাকে একের পর এক সুযোগ। ৫৪তম মিনিটে খুব কাছ থেকে বল বাইরে মেরে দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন তরেস।
অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে ৫৯তম মিনিটে ব্যবধান কমায় ভালেসন্সিয়া। দিয়েগো লোপেসের ক্রসে খুব কাছ থেকে জাল খুঁজে নেন দুরো। ৬৬তম মিনিটে ফের ৫ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। লোপেসের কাছ থেকে বল পেয়ে দুই স্পর্শে জায়গা করে নিয়ে আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন একটু আগে রাফিনিয়ার বদলি নামা লেভানদোভস্কি।এবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা এই পোলিশ স্ট্রাইকারের আসরে গোল হলো ১৭টি।
৭২তম মিনিটে তরেসের শট ফিরিয়ে ব্যবধান আরও বাড়তে দেননি মামার্দাশভিলি। পরের মিনিটে বার্সেলোনার জালে বল পাঠায় ভালেন্সিয়া। তবে আক্রমণের শুরুতে লুইস রাইয়োহা অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল। ৭৫তম মিনিটে তরেসের শট আবার ঠেকিয়ে দেন ভালেন্সিয়া গোলরক্ষক; কিন্তু বিপদ কাটেনি পুরোপুরি। ফিরতি বলে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের শট ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের জালেই পাঠিয়ে দেন সেসার তারেগা।
২১ ম্যাচে ১৩ জয় ও তিন ড্রয়ে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ফিরেছে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে চূড়ায় রেয়াল মাদ্রিদ, ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদ। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ১৯ নম্বরে আছে ভালেন্সিয়া ।।