এইদিন ওয়েবডেস্ক,গাজা,০৭ ডিসেম্বর : স্বাধীনতার নামে লড়াই করা ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের কুকীর্তি একে একে প্রকাশ্যে আসছে । যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় যে আন্তর্জাতিক সহায়তা আসছে, তা সব লুটপাট চালিয়ে হামাস তার গোপন টানেলে মজুত করে রাখছে বলে অভিযোগ তুলছে খোদ গাজার বাসিন্দারা । এদিকে গাজার সাধারণ মানুষ অনাহার, অর্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে । কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা চ্যানেলের সামনে কাঁদতে কাঁদতে এমনই অভিযোগ তুলেছেন গাজার এক বৃদ্ধা । তিনি বলেন,’সমস্ত সাহায্য ভূগর্ভে চলে যায় এবং জনগণের কাছে পৌঁছায় না ।’
আল-জাজিরা চ্যানেলের সাথে ওই সাক্ষাৎকারটি জনসমক্ষে এবং লাইভ হওয়ায় চ্যানেল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পারেনি । টিভি নেটওয়ার্কের প্রতিবেদক গাজার ওই বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘পরিস্থিতি কঠিন, আপনার কাছে কি কোনো সাহায্য আসছে না ?’ বৃদ্ধা দুবার চিন্তা করেননি এবং হামাসের তীব্র সমালোচনা করে বলেন,’সমস্ত সাহায্য টানেলে নেমে যায় – এবং জনগণ বা জাতির কাছে পৌঁছায় না ।’
এতে আল-জাজিরার প্রতিবেদক সাফাই দেয় যে ‘সামান্য সাহায্য আসে এবং এটি বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ করা হয় ।’ কিন্তু ওই বৃদ্ধা তার হাত নেড়ে হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রেখে বলেন,’সমস্ত সাহায্য তাদের বাড়িতে যায়, তারা তা নেয়। তারা আমাদের গুলি করে এবং তারা আমাদের সাথে যা খুশি তাই করে ।’ প্রতিবেদক বৃদ্ধাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয় । কিন্তু হামাস সন্ত্রাসীদের প্রতি বৃদ্ধার এতটাই রোষ যে তখনো বৃদ্ধাকে বলতে শোনা যায় ‘সিনওয়ার, আল্লাহ তোমার প্রতিশোধ নেবেন, অপহৃতদের মুক্তি দাও ।’
গতকাল (বুধবার) একটি ফিলিস্তিনি রেডিও স্টেশনে প্রচারিত টেলিফোন সাক্ষাৎকারে গাজার বাসিন্দা, যিনি রাফাহ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, তাকে হামাস এবং এর নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে কথা বলতে শোনা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি হামাস সরকারকে একটি বার্তা দিতে চাই। আল্লাহ তোমার প্রতিশোধ নেবেন, আল্লাহ তোমাকে, তোমার পিতাকে এবং যিনি তোমাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন তাকে অভিশাপ দিন। সিনওয়ার, আল্লাহ তোমার প্রতিশোধ নেবেন। তুমি আমাদের ধ্বংস ডেকে এনেছ ।’ তিনি আরও বলেন,’আমাদের গাজা থেকে খান ইউনিস এবং খান ইউনিসকে রাফাতে নির্বাসিত করা হয়েছিল, আমাদের পরিবার, আমাদের শিশু এবং আমাদের মহিলাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল । অপহৃতদের মুক্তি দিন ! সিনওয়ার মাটির নিচে লুকিয়ে আছে, সে এবং মুহাম্মদ দাফ এবং তার সাথে জঘন্য কাজ। এদিকে আমাদের কাছে জলও নেই।’
গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের একজন বলেছেন, ‘আমি বিস্মিত এবং হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম প্রচুর পরিমাণে গুদামগুলিতে সাহায্য সামগ্রী স্তূপ করা হয়েছিল । গতকাল প্রকাশিত নথিপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে যে গাজার ইউএনআরডব্লিউএ গুদাম খাদ্য ও পানীয়তে পূর্ণ, যা স্পষ্টতই গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি যারা খাবারের জন্য ক্ষুধার্ত ছিল এবং হামাস তা লুট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । গাজা স্ট্রিপের বাসিন্দারা আজ ইউএনআরএ গুদামে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে চাল, মসুর, আটা এবং তেল খুঁজে পেয়েছে। যখন মানুষ ক্ষুধার্ত এবং খাওয়ার জন্য একেবারে কিছুই নেই ।’ ইউএনআরএ-র একজন নিম্ন-পদস্থ কর্মী ফিলিস্তিনিদের দ্বারা বর্ণিত সমস্যাযুক্ত ঘটনাটি স্বীকার করে উল্লেখ করেছেন, ‘গুদামগুলিতে স্তূপ করা খাবার পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী, গদি এবং তাঁবুর পরিমাণ দেখে আমি বিস্মিত এবং হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম ।’
প্রসঙ্গত,যে হামাস স্বাধীনতার কথা বলে খোদ ফিলিস্তিনিদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, সেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সমর্থনে গলা ফাটানো বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের মানসিকতা নিয়ে সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন উঠছে । ভারতেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার নামে হামাসের সমর্থকের সংখ্যা কম নেই । ভারতের হামাসপন্থীদের কট্টরপন্থী মানসিকতা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ।।