এইদিন ওয়েবডেস্ক,হলদওয়ানি,১০ ফেব্রুয়ারী : উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানি শহরে হিংসার ঘটনার মাস্টারমাইন্ড সমাজবাদী পার্টির নেতা মতিন সিদ্দিকীর ভাই জাভেদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।এক হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে ।গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে । হলদওয়ানির ঘটনার পর গোটা উত্তরাখণ্ড জুড়ে যে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল তা আজ শনিবার কিছুটা শিথিল করা হয়েছে । হলদওয়ানি শহরের উপদ্রুত এলাকায় রয়েছে কড়া নিরাপত্তা ৷ নিরাপত্তার দৃষ্টিকোন থেকে ৭টি জোনে ভাগ করা হয়েছে গোটা শহরকে ।
উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানিতে আদালতের আদেশের পরে, প্রশাসন অবৈধ মসজিদ-মাজার ভেঙে ফেলার জন্য বুলডোজার নিয়ে এসেছিল, কিন্তু মুসলিম জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। এর পর দফায় দফায় হিংসা, অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণ হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা ও পেট্রোল পাম্প। যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বৃহস্পতিবার হলদওয়ানি শহরে হিংসার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়, সেই সঙ্গে দাঙ্গাবাজদের দেখলেই গুলি করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন । এ সহিংসতায় আহত সাংবাদিকসহ আহত ৭ জন নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ৬০ জন আহতদের মধ্যে বেশিরভাগকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হলদোয়ানির সহিংসতাপ্রবণ বনভুলপুরা থানা এলাকা এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবারও গোটা এলাকায় নজরদারি রাখা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের সরকার। সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে শান্তিপূর্ণ রাজ্যে যারা এই ধরনের সহিংসতা উসকে দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমায়ুন বিভাগের কমিশনারের কাছে মুখ্য সচিবের পাঠানো চিঠিতে, বনভুলপুরা থানা এবং হলদওয়ানি শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে তা সংবেদনশীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে যে কুমায়ুন বিভাগের কমিশনারের একটি ম্যাজিস্ট্রিয়াল তদন্ত সম্পন্ন করা উচিত । সেই অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনার নিরপেক্ষ ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।দেরাদুন, হরিদ্বার, রামনগর, উধম সিং নগরের সর্বত্র সতর্ক থাকতে এবং এ জাতীয় যে কোনও প্রকার ঘটনা মোকাবেলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
হালদওয়ানি সহিংসতার পর সেখানকার পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে বেশিরভাগ জায়গা থেকে কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে বনভুলপুরায় এখনও কারফিউ জারি রয়েছে। এদিকে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে সমাজবাদী পার্টির নেতা মতিন সিদ্দিকীর ভাই জাভেদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তে সহিংসতার মূল পরিকল্পনাকারী আব্দুল মালিক হাজির নামও বেরিয়ে এসেছে। যেখান থেকে অবৈধ মসজিদ উচ্ছেদ করা হয়েছে সেই জমি তার দখলে ছিল। ওই সরকারি জায়গাটি ব্যক্তিগত মালিকানা দাবি করে ৫০ টাকা স্টাম্প পেপারে চুক্তি করেছিল হাজি । এছাড়াও তদন্তে সমাজবাদী পার্টির আরও এক নেতার নাম উঠে এসেছে। তাদের একজনের নাম আরশাদ আইয়ুব। বনভূলপুরার কাউন্সিলর জিশান পারভেজও পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।
পাশাপাশি হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। সিসিটিভির সাহায্যে দাঙ্গাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ড্রোনের মাধ্যমে এলাকাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন রয়েছে ভারী পুলিশবাহিনী । এরই মধ্যে নিহতদের ওপর যে নৃশংসতা ঘটেছে তা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক তথ্য এসেছে। দাঙ্গাবাজ জনতা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। এখন সেই মৃতদের পরিবারের সদস্যদের কান্নার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে ।।