জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১৫ মার্চ : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন । কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই বাড়ছে না রাস্তাঘাট । নিয়ন্ত্রণহীন গতির খেলায় মেতে উঠছে যুব সমাজ । তাদের যেন একটাই মন্ত্র – গতি, গতি এবং আরও গতি । পরিস্থিতি দেখে মনে হবে যমরাজ হয়তো দ্রুত সাক্ষাতের জন্য তাদের সমন পাঠিয়েছে । ফলে বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা । কখনো বাইক বা গাড়ি আরোহী নিজে মরছে । কখনো বা তাদের গতির শিকার হচ্ছে নিরীহ পথচারী । ওদিকে দিনের শেষে আপনজনের বাড়ি ফিরে আসার অপেক্ষায় চিন্তিত মুখে বাড়িতে বসে আছে আত্মীয় স্বজনেরা । দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি ফিরে আসে, তবে জীবিত নয় লাশ হয়ে। মুহূর্তের মধ্যে বিষাদে ভরে ওঠে পুরো পরিবেশ ।
দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য সংবেদনশীল মুখ্যমন্ত্রী ২০১৬ সালে চালু করেছিলেন তার আর এক স্বপ্নের প্রকল্প ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। প্রকল্পটিকে সফল করার জন্য পুলিশ সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে ট্রাফিক গার্ডের কর্মীরা । ব্যতিক্রম নয় পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা ।
গুসকরা শহরে চারটে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো নদীপটি, স্কুলমোড়, বলগোনা মোড় ও রেললাইন পাড়। সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রকল্পকে সফল করার জন্য ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিক অনন্তদেব সাহা তার কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঐ চারটি পয়েন্টে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদা সতর্ক থাকছেন । ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন । প্রয়োজনে জরিমানাও করছেন ।
গত কয়েকদিন ধরে চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষা । করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে প্রায় এক বছর পর বাড়ির বাইরে বেরিয়ে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের নির্দিষ্ট ‘ডিউটি’র বাইরে এক্ষেত্রেও ট্রাফিক গার্ডদের ভূমিকা প্রশংসনীয় । গুসকরা পৌরসভার তিনটি বিদ্যালয়ে চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষা । এরমধ্যে দুটি জাতীয় সড়কের পাশে । যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে তাদের পক্ষ থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির পাশে একটি করে ‘হেল্প ডেস্ক’ গড়ে তোলা হয়েছে । সেখানে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মাস্ক, জলের বোতল এবং দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজার। এমনকি যারা অ্যাডমিট কার্ড আনতে ভুলে যাচ্ছে ট্রাফিকদের পক্ষ থেকে সেগুলি আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ট্রাফিক গার্ডদের এই ভূমিকায় অভিভাবকরা খুব খুশি ।
জনৈকা অভিভাবিকা বললেন, ‘খাকি পোশাক দেখলে আমরা সাধারণত ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু নিজেরা রোদ ভোগ করেও যেভাবে ছাত্রছাত্রীদের পাশে তারা পিতৃস্নেহে দাঁড়িয়েছে তাতে আমরা অভিভূত।’ট্রাফিক আধিকারিক অনন্তদেব বাবু বললেন,’কর্তব্যের খাতিরে গায়ে খাকি পোশাক থাকলেও বা ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য কড়া হলেও আমরা এই সমাজের অংশ । যারা পরীক্ষা দিচ্ছে তারা আমাদের সন্তানতুল্য । ওদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সামাজিক কর্তব্য বলে মনে করি।
ট্রাফিক গার্ডদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে শহর তৃণমূল সভাপতি তথা নব নির্বাচিত পুরবোর্ডের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন,’নিজেদের দৈনন্দিন কর্তব্যের বাইরেও যেভাবে ওরা পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ওদের জন্যেই গুসকরায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে গেছে। আশাকরি আগামীদিনে সংখ্যাটা শূন্যে নেমে আসবে এবং ওরা আরও বেশি করে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবে ।’।