শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),২৭ মে : স্ট্রোকে মৃত যুবক সন্তানের দেহ দান করে গ্রহীতাদের দীর্ঘ জীবন কামনা করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর শোকার্ত মা । শুক্রবার কলকাতার অ্যাপেলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় পূর্বস্থলী থানার বৈদিকপাড়ার বাসিন্দা সৌমেন ভদ্র নামে ওই যুবকের । ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মুমুর্ষু রোগীদের দান করতে রাজী হয়ে যান মা ইতি ভদ্র । যুবকের শরীর থেকে খুলে নেওয়া হয় কিডনি, হৃৎপিন্ড, লিভার,চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ । তারপর মৃতদেহ প্রথমে গ্রামে আনা হয় । দেহ আসতেই শোকে ভেঙে পড়ে যুবকের পরিবার পরিজন । বাড়ি থেকে নবদ্বীপ শ্মশানঘাটে সৌমেনের দেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় ।
আজ শনিবার মৃতের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে পূর্বস্থলীর বৈদিকপাড়ায় ভদ্র বাড়িতে প্রচুর মানুষের ঢল নামে । তারই মাঝে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে কাঁদতে কাঁদতে ইতিদেবী বলেন,’আমার ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে যেন অন্যরা সুস্থ ভাবে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে । এই আশা নিয়েই আমি আমার ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দান করেছি। আমার ছেলে মহান হয়ে ওদের মধ্যে বেঁচে থাকুক, এটাই আমি চাই । আমার মতো কোন মাকে যেন আর এভাবে কাঁদতে না হয় ।’ তিনি বলেন,’যাদের শরীরে আমার ছেলের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হল আমি শুধু তাদের একবার দেখতে চাই ।’
পূর্বস্থলীর বৈদিকপাড়ার বাসিন্দা সদানন্দ ভদ্র ও ইতি ভদ্রের দু’ছেলের মধ্যে বড় ছিলেন সৌমেন । সদানন্দবাবু বাড়ি বাড়ি কাপড় ফেরি করেন । এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসাবে সুখ্যাতি ছিল সৌমেনের । বছর পাঁচেক আগে কাটোয়ার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি । পারুলিয়া এলাকার মেয়ে অঞ্জনার সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল । তাঁদের একটি শিশুসন্তানও রয়েছে । মঙ্গলবার জানা গেছে, গভীর রাতে সৌমেনের মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয় । তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েব । তাঁকে দ্রুত পূর্বস্থলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখান থেকে কালনা হাসপাতাল হয়ে কলকাতার অ্যাপেলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ।
এদিকে শোকে বিহ্বল মা ইতিদেবী ছেলের অকালে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি । তিনি চেয়েছিলেন অন্যদের মধ্যে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুক তার ছেলে । মূলত ইতিদেবীর ইচ্ছাতেই মৃত সৌমেনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করা হয় । তারপর কাল বিলম্ব না করে কলকাতা পুলিশের সহায়তায় গ্রীন করিডর করে ইতিদেবীর ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে পৌছে দেওয়া হয় । সেখানে বেশ কয়েকজন মুমুর্ষু রোগীর দেহে তা প্রতিস্থাপন করা হয় বলে জানা গেছে । একথা জানতে পেরে শোকের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে মৃত মৃত যুবকের পরিবারের চোখে মুখে । তবে শুধু ইতিদেবীই নন,সৌমেনের বাবা সদানন্দবাবু এবং স্ত্রী অঞ্জনাদেবীও ওই সমস্ত ব্যক্তিদের একবারের জন্য চোখের দেখা দেখতে চেয়েছেন ।।