এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,১৯ আগস্ট : বর্তমান সময়ে ইসলামি দেশগুলি থেকে আগত অনুপ্রবেশকারীরা মূর্তিমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অমুসলিম দেশগুলির কাছে । অনুপ্রবেশের পর তারা সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে । সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানি, ফ্রান্সের মত ইউরোপীয় দেশগুলিতে ব্যাপক নাশকতা চালিয়েছিল আশ্রয়প্রার্থীরা । তবে ভারত,নিউজিল্যান্ড ও গ্রীসের মত কিছু দেশ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে । খবর পাওয়া যাচ্ছে যে গ্রীস প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সময় ফের যাতে ফিরে না আসতে পারে সেজন্য তাদের পায়ের গোড়ালিতে ইলেকট্রনিক চিপ বসিয়ে গতিবিধির উপর নজর রাখবে ।
গ্রিস সরকার জানিয়েছে, নির্বাসনের তালিকায় থাকা অভিবাসীদের গোড়ালিতে মনিটর পরতে হবে৷ গত
সোমবার দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী থানোস প্লেভরিস বলেছেন, প্রত্যাখ্যাত কোনো আশ্রয়প্রার্থী যদি নির্বাসন আদেশ অমান্য করেন, তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে৷ এজন্য, অভিবাসন নীতি সংস্কারের আওতায় চলতি বছরের মধ্যেই এই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে৷
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় বেতার ইআরটি রেডিওকে প্লেভরিস বলেন,’ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করবে যে তারা দেশ ছেড়ে গেছে কিনা ।’ তিনি বলেন,’আশ্রয় দাবি প্রত্যাখ্যান এবং আপিল শেষ হওয়ার পরে অভিবাসীদের যখন ৩০ দিনের মধ্যে গ্রিস ছেড়ে যেতে বলা হবে, তখন শেষ ৩০ দিনের জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে তাদের উপর নজর রাখা হবে ।’
থানোস প্লেভরিস আরও বলেছেন,’যারা স্বেচ্ছায় এই শর্ত মেনে চলবেন তাদের জন্য সরকার দুই হাজার ইউরো প্রত্যাবাসন বোনাস দেওয়ার কথাও বিবেচনা করছে৷’
উল্লেখ্য, ভারতের মতই অবৈধ অনুপ্রবেশের সমস্যায় ভুগছে গ্রীস । সেই কারনে অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে দেশটির সরকার৷ সম্প্রতি অভিবাসনপ্রবাহ মোকাবিলায় উত্তর আফ্রিকার উপকূল থেকে সমুদ্রপথে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় অধিকার তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে৷ সাধারণত তুরস্কের উপকূল থেকে এজিয়ান সাগর পেরিয়ে আসা উদ্বাস্তুদলের লক্ষ্য থাকে গ্রিক দ্বীপ ক্রিট বা গাভদোসে পৌঁছানো৷ চলতি গ্রীষ্মে লিবিয়ার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ক্রিট দ্বীপে আসা অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা তীব্রভাবে বেড়ে যায়৷
এই দ্বীপগুলোর প্রধান অর্থনীতি পর্যটন৷ গ্রীষ্মকালে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে৷ কিন্তু হঠাৎ করে অনুপ্রবেশকারীদের আগমন বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয়রাও৷ তারা মনে করছেন, অনুপ্রবেশকারীরা সেখানে আসতে থাকলে পর্যটকেরা আগ্রহ হারাবেন, তাতে ক্ষতির মুখে পড়বে তাদের অর্থনীতি৷ এমন প্রেক্ষাপটে রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসের সরকার তিন মাসের জন্য আশ্রয় অধিকার স্থগিত করেছে৷
সরকারের নেওয়া নতুন পদক্ষেপ অনুসারে সমুদ্রপথে আসা অনুপ্রবেশকারীদের আটক করা হবে এবং তাদের লিবিয়া বা টিউনিশিয়া ফেরত পাঠানো হবে৷ এছাড়াও সমুদ্রপথে আসা একজন অনুপ্রবেশকারীকে সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য আটক রাখা হতে পারে৷ এরপরও যদি কোনো অনুপ্রবেশকারীরা গ্রিসে থাকার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাগারে পাঠানো হবে ৷গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে এই পদক্ষেপগুলো আইনি রূপ পাবে৷
আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মুসলিমরাই মূলত উত্তর আফ্রিকার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগরে পেরিয়ে ইউরোপে ঘাঁটি গাড়ে । তাদের যত না জীবিকার তাগিদ থাকে,তার থেকে বেশি থাকে জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে সেই দেশের দখল নেওয়া । তাদের অনেকেই ইউরোপে ঢুকতে গ্রিক উপকূলকে করিডর হিসাবে ব্যবহার করে । তাই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভূমধ্যসাগরে দুটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের সিদ্ধান্তও নিয়েছে গ্রিস৷
যদিও গ্রিসের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে ইউরোপের ভন্ড সেকুলারদের দল । সীমান্তে আসা উদ্বাস্তুদের পুশব্যাক করা হয় বলেও গ্রিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে তারা৷ আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে আশ্রয় স্থগিতের ঘোষণায় গ্রিসের নিন্দা করেছে অভিবাসী ও মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা৷ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এই ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে ৷ যদিও এই ইউএনএইচসিআর এর ভন্ডামির জন্য প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাদের ।।

