এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ জুন : কলকাতার মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার রবীন্দ্রনগর থানার মহেশতলা পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আজ বুধবার সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩৫-৪০ জন আহত পুলিশ কর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ ১২ টা পুলিশের গাড়ি ভেঙেছে ৷ মহেশতলার আজকের হিংসায় পুলিশকে কার্যত অসহায় অবস্থায় দেখা গেছে । সেকারণেই আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আধাসেনা নামানোর দাবিতে ভবানীভবনে ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ তার সঙ্গে ছিলেন শঙ্কর ঘোষ সহ ৫ জন বিজেপি বিধায়ক । কিন্তু ডিজি তাদের সাথে সাক্ষাৎ না করায় ভবানীভবনের ভিতরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা । ক্ষিপ্ত শুভেন্দু অধিকারী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন সরকারকে “মুসলমানদের সরকার, জঙ্গিদের সরকার, জিহাদিদের সরকার” বলে অবিহিত করেন। পাশাপাশি ডিজি রাজীব কুমারকে “মমতার চামচা,সারদার প্রমান লোপাটকারী” বলে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন ।
বিরোধী দলনেতা বলেন,’আমাদের দলের পাঁচ এমএলএ ভদ্রভাবে বলতে গিয়েছিলাম আপনার পুলিশ আহত, পুলিশের গাড়ি ভেঙেছে, হাইকোর্টের নির্দেশ আছে যেখানে খুশি আপনি প্যারামিলিটারি ফোর্স চাইতে পারেন । ৩০ শে জুলাই অব্দি অর্ডার আছে৷ পুলিশকে নিরাপত্তা পর্যন্ত দিতে পারছেন না । এসি ঘরে বসে আছেন সাক্ষাৎ পর্যন্ত করলেন না ।’ তিনি বলেন,’হিন্দুরা অত্যাচারিত হচ্ছে৷ পুলিশও আহত । একাধিক পুলিশ কর্মী আহত । একাধিক গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে । কিন্তু পুলিশ কোন কাজ করছে না৷ পুলিশ এবং স্থানীয় হিন্দুদের রক্ষা করতে তাদের প্যারা মিলিটারি ফোর্স নিয়োগ করা উচিত । সাধারণ পুলিশ কর্মী এবং হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির রাজত্বে সুরক্ষিত নয় ।’
এরপর তিনি ডিজির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘ওর বউকে ইনফরমেশন কমিশনে বসিয়েছে৷ আগামী বছর রাজীব কুমার তোমাকে চাকরি করতে হবে । পালাতে তোমাকে দেব না । মমতা মুখ্যমন্ত্রী থাকবে না । আজ ২০২৬ সালের ১১ই জুন, লিখে রাখুন মমতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হবেই । রাজীব কুমারকেও থাকতে হবে । আজকের দিন, সময় আমি নোট করে নিয়ে ভবানী ভবন ছাড়ছি ৷’
কলকাতার মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার রবীন্দ্রনগর পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত মহেশতলা পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আজ বুধবার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায় । দফায় দফায় সংঘর্ষে কার্যত রনক্ষেত্রের চেহেরা নেয় গোটা এলাকা । পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইঁটপাটকেল ছোড়া হয় । কার্যত অসহায় অবস্থায় দেখা যায় পুলিশকে । ব্যাপক ভাঙচুর ও একাধিক বাড়ির ছাদের উপর থেকে ঢিল ছোঁড়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। কিন্তু পুলিশের উপরেই হামলা চালানো হয় । থানার সামনে বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় দাঙ্গাকারীরা । পাশাপাশি চলে দেদার পাথরবাজি । পাথর ছুড়ে ভাঙা হয়েছে পুলিশের গাড়ির কাচ। মাথায় ইটের আঘাত লেগে গুরুতর আহত হন একজ মহিলা কনস্টেবল । রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কি বললেন দিলীপ ঘোষ
সাম্প্রদায়িক হিংসার সূত্রপাত সম্পর্কে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ ফেসবুকে লিখেছেন,’হিন্দুদের উপর অত্যাচারের খেলায় মেতেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার মুসলিম অধ্যুষিত মেটিয়াবুরুজ। মহেশতলা পৌরসভার রবীন্দ্রনগর থানার পাশে শিব মন্দিরের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ফলের দোকান বানায় এক মুসলিম। মন্দিরের ভক্তগণের বারবার বলা সত্ত্বেও সেই দোকান সরানো হয়নি। তারপর সেখানে মন্দির কমিটির লোকজন তুলসী মঞ্চ বানিয়ে দিলে মুসলিম জনতা এসে তুলসী মঞ্চ, শিব মন্দির এবং আশেপাশে হিন্দু দোকানে ভাঙচুর চালায়। প্রথম মন্দির চত্বরে হামলা করা হয়, তারপর হিন্দুদের উপর হামলা চালানো হয়।’
তিনি লিখেছেন,’রবীন্দ্রনগর থানা থেকে সন্তোষপুর স্টেশন অবধি (৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ড) দলবদ্ধভাবে ভাঙচুর করা হয়। ভাঙা হয় হিন্দুদের দোকানও। পুলিশের উপর পাথর ছোঁড়া হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাইক, গাড়ি এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।বাধ্য হয়ে এলাকায় র্যাফ নেমেছে। মাথা ফেটেছে বহু পুলিশকর্মীরও। কেন মন্দির চত্বরে বিধর্মীরা দোকান দেবে ? আপনারা কি দেখেছেন কখনো মসজিদের মধ্যে ফুলের দোকান আছে আর সেটি হিন্দুরা চালাচ্ছে? তাহলে কেন হিন্দুদের আস্থার জায়গায় বারবার আঘাত হানা হয় পশ্চিমবঙ্গে? শাসক দলের প্রশ্রয় ছাড়া এই আক্রমণ সম্ভব নয়। আর শাসক দল তৃণমূল চুপ করে মজা দেখে আর ভোটব্যাঙ্কের হিসেব করে। কেন পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু অধিকার সুরক্ষিত নয়?’

