এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ আগস্ট : বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নাকি বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর আক্রমণ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে এক বছর ধরে মাসিক ৫,০০০ টাকা অনুদান দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন । এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শ্রমশ্রী’ । নাম নথিভুক্ত করতে ইতিমধ্যে একটা পোর্টালও চালু করেছে রাজ্য সরকার । কিন্তু ভিন রাজ্যে কর্মরত বাংলার শ্রমিকরাই এখন প্রশ্ন তুলেছেন যে এক বছর পরে কি হবে ? ওই স্বল্প টাকার অনুদানে কিভাবে চলবে তাদের সংসার ?
এদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আজ শুক্রবার এক্স-এ একটা ভিডিও পোস্ট করেছেন । যাতে তিনি দাবি করেছেন যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের উপর আস্থা রাখতে না পেরে কাতারে কাতারে যুবকের দল ভিন রাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন । ভিডিওটি পুরুলিয়া রেলস্টেশনের বলে তিনি দাবি করেছেন । যেখানে টিকিট কাউন্টারের সামনে বিশাল লাইন দেখা গেছে । কোনো সংগঠনের তরফে তাদের হাতে একটা করে লাল গোলাপ ফুলও তুলে দিতে দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে ।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’মাননীয়া শুভনন্দন !
আমার প্রিয় জেলা পুরুলিয়ার চিত্র তুলে ধরলাম। চিত্রটি পুরুলিয়া রেল স্টেশনের। এলাকার শ’য়ে শ’য়ে যুবকরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে কাজের জন্য।
আপনার ঢপের ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে ওরা পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে বাইরের রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে মাসে পাঁচ হাজারের থেকে অনেক বেশি টাকা আয় করার জন্য। এই চিত্র দেখলে দুটো ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়; প্রথমত আপনার শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থানের এমন বেহাল দশা যে বাঙালিদের বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হয় কাজের খোঁজে, দ্বিতীয়ত ভারতবর্ষের কোনো প্রান্তেই কোথাও কোন বাংলাভাষীদের হেনস্থা করা হচ্ছে না কিংবা বাঙালি অস্মিতা আক্রান্ত নয়। সবটাই আপনার মনগড়া, ভোট রাজনীতির পরিকল্পনা। পশ্চিমবঙ্গের সকল সচেতন নাগরিক তা ভালো ভাবে বুঝেছেন।’
তিনি আরও লিখেছেন,’এই শ্রমিকদের যদি নিজের রাজ্যে রেখে দিতে চান, আগামী বছরের নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সৃষ্ট প্রকল্প ‘শ্রমশ্রী’ না চালু করে কর্মসংস্থানের সুযোগের ‘শ্রীবৃদ্ধি’ ঘটানোর চেষ্টা করুন। তবে আপনি সক্ষম নন এটা করতে, হলে আগেই তা করে দেখাতেন, নির্বাচনের পূর্বে এক বছরের জন্যে ভাতার প্রলোভন দেখিয়ে, পরিযায়ী দের ভোট নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁদের ফেরত আনার চেষ্টা করতেন না। আগামী বছর বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যে কর্মসংস্থানের ‘শ্রীবৃদ্ধি’ হবে। এবং এই সকল যুবকদের বাইরের রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে যেতে হবে না। নিজের রাজ্যে কর্মসংস্থান পাবে। সেই দিন বেশি দুরে নয়।’
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ । তখন থেকেই পাকিস্তানি ও পাকিস্তানপন্থী বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর দাবি উঠছিল । কেন্দ্র সরকার পাকিস্তানের ভিসা বাতিল করে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয় । পরে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ করে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি জবরদখল করা সরকারি জায়গা পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করে গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ,আসাম, দিল্লি,উড়িষ্যা ও মধ্যপ্রদেশের মত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি ।
বাংলাদেশিরা মূলত পশ্চিমবঙ্গকে করিডর করে অনুপ্রবেশের পর স্থানীয়দের সহায়তায় ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেশের অনান্য রাজ্যে চাড়িয়ে যায় এবং সেখানে কয়েক দশক ধরে তারা শ্রমিকের কাজ করে রীতিমতো সংসার ফেঁদে বসেছিল বলে অভিযোগ ওঠে ৷ ফলে ওই সমস্ত রাজ্যগুলিতে জনরোষের সৃষ্টি হয় । প্রশাসনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির স্থানীয় বাসিন্দারাও অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে পথে নামে । কোথাও কোথাও হামলার শিকারও হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা । আর বিদেশি নাগরিকদের জন্য বাংলার প্রকৃত নাগরিকদেরও গনরোষের শিকার হতে হচ্ছে সেখানে । যাকে তৃণমূল কংগ্রেস,তৃণমূল সমর্থিত “বাংলাপক্ষ” নামে একটি সংগঠন, বামপন্থী এবং এরাজ্যের মুসলিম সংগঠনগুলি বাঙালির উপর আক্রমণ বলে প্রচার শুরু করে দিয়েছে । বিশেষ করে বাঙালি অস্মিতা রক্ষার নামে মমতা ব্যানার্জি রীতিমতো একটা আন্দোলনেরও সূচনা করে দিয়েছেন বোলপুর থেকে । যদিও বিজেপি বলছে যে ২০২৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনকে বাঙালি হিন্দু ভোট টানতে এটা মমতা ব্যানার্জির একটা পরিকল্পিত রননীতি ।।