এইদিন ওয়েবডেস্ক,হাওড়া,০৯ জানুয়ারী : আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাওড়ায় রামরাজাতলা শীতলা মাতা সেবা সমিতি আয়োজিত অযোধ্যায় মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের ভব্য মন্দির প্রতিষ্ঠার বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে “আনন্দ উৎসব” অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে রাজ্যের হিন্দুদের বেশ কিছু পরামর্শ দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । বাংলাদেশী মৌলবাদীদের সেদেশের হিন্দু ব্যবসায়ীদের বয়কটের জবাবে পাল্টা এ রাজ্যের হিন্দুদের নিজেদের মধ্যে লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি । শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘আমি হাওড়ায় রামরাজাতলার হিন্দু সমাজকে কতগুলো বিষয় বলবো । ধর্ম রক্ষা কমিটি তৈরি করুন । হিন্দুর জনসংখ্যা বাড়াতে আপনাদের নিজেদের সংকল্প নিতে হবে । আপনাদের আর্থিক লেনদেন, সামাজিক মেলবন্ধন, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলুন । আপনার অর্থ হিন্দু কে দিন আর হিন্দুর অর্থ আপনি নিন । বুঝতে পারছেন আমি কি বলছি ?’
কেন এই পরামর্শ দিলেন সেটাও স্পষ্ট করে দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’বাংলাদেশের মৌলানা কয়েকদিন আগে বলেছে এই শিল আর পরামানিকরা চুল দাড়ি কাটে । আমরা ওদের কাছে কাটবো না৷ ময়রারা মিষ্টি তৈরি করে, আমি ওদের কাছ থেকে মিষ্টি কিনব না,বাড়িতে মিষ্টি বানাবো । তাহলে উল্টোটা আপনাকে কি করতে হবে বুঝতে পারছেন ?’ অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে যেকোনো আর্থিক লেনদেন যেন একমাত্র হিন্দুদের মধ্যেই করা হয় ।
রামনবমী থেকে শুরু করে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, লক্ষ্মীপুজো এবং সর্বশেষ কার্তিক পুজোতে পূজা মন্ডপের হামলার ঘটনা বন্ধ করতে হিন্দুদের করণীয় কি তাও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন । এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’নতুন নতুন জায়গায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে । এই আক্রমণ রূপে গেলে শুধু ভান্ডারা আর ভাষণ দিয়ে হবে না । প্রতিরোধ করতে হবে । ঝুঁকি থাকবে, আত্ম বলিদানের সম্ভাবনা থাকবে । কিন্তু আমাদের এগিয়ে আসতে হবে । এটা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই ।’
ফের রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ইসলামী মৌলবাদীদের মত কথাবার্তার তীব্র সমালোচনা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেছেন,’এই রাজ্যের মন্ত্রীদের ভাষা শুনলে আমরা অবাক হয়ে যাই । এরা কি সংবিধানকে সামনে রেখে শপথ নিয়েছে নাকি কেবলমাত্র নিজের ধর্মীয় আলোকে আলোকিত ? একজন মন্ত্রী বলেছেন আমি যে ধর্মের জন্মেছি আমি সৌভাগ্যবান । বাকিরা দুর্ভাগা ৷ আমরা হিন্দু, শিখ, জৈন সবাই অভাগা । ফিরহাদ হাকিমের ধর্মই একমাত্র সৌভাগ্যবান । তিনি বলছেন আমি দাওয়াত-এ- ইসলাম দিচ্ছি। তিনি বলছেন আমি উর্দুতে কথা বলি এবং সেই দিন খুশি হব যেদিন ৫০ ভাগ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি উর্দুতে কথা বলবে। তিনি বলছেন ভারতে আমরা ১৭ শতাংশ এবং রাজ্যে ৩৩ শতাংশ । কি ভয়ঙ্কর কথা !’
শুভেন্দু অধিকারী এরপর বলেন,’২০১১ সালের শেষ জনগণনা হয়েছে । তাতে মুসলিম জনসংখ্যা উঠে এসেছে ২৭ শতাংশ । ফিরহাদ হাকিম বলছেন… মেয়র… ক্যাবিনেট মিনিস্টার… শাসক দলের নেতা, তিনি বলছেন আমরা এখন ৩৩ শতাংশ৷ তার মানে উনি দায়িত্ব নিয়ে বলছেন । বলছেন এই সংখ্যা ৫০ পার করাতে হবে । আর ৫০ পার করালেই আমাদের রাজত্ব কায়েম হবে ।’ এরপর তিনি বলেন, এখনো যে হিন্দুরা রাজনীতির নামে, চাওয়া পাওয়ার নামে, চাকরি বাঁচানোর নামে, দোকান খোলার নামে ভাগাভাগি হয়ে আছেন তারা শুনে রাখুন আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং এখন বাংলাদেশ দেখছেন, আগামী দিনে এই বাংলা দেখতে হবে আপনাদের ।’
শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত জনতাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন,’৫০ শতাংশ পেরিয়ে যাওয়ার পরে সংবিধান চলে ? লাল ঝাণ্ডার বাবুরা সংবিধান চলে ? সেকুলারিজম চলে ? ধর্মনিরপেক্ষতা চলে ? চলেনা । তখন কি চলে ? শরিয়া কানুন চলে । মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের আইন চলে । তাই মোহন ভাগবত জি এই বিষয়ে দুটো কথা বলেছেন…তিনি বিজয়া দশমীর দিন বলেছেন ‘পৃথিবীর হিন্দু বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে দাঁড়ান’ । আমরা যদি প্রকৃত হিন্দু হই আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো৷ আমি তো প্রথম দিন থেকেই ডেপুটি হাই কমিশনার অফিস থেকে শুরু করে পেট্রোপল বর্ডার ও বসিরহাটের ঘোজাডাঙ্গা পর্যন্ত আমি লড়েছি । আর আমার সঙ্গ দিয়েছে হাজার হাজার হিন্দু যুবক ও মহিলা৷ আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ । আজকে স্বরসঙ্ঘচালক বলছেন যে জনসংখ্যা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে ।’
মমিনপুর ইকবালপুরে হিন্দুদের উপর হামলার প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মমিনপুর ইকবালপুরে হিন্দুরা আক্রান্ত হয় । আমি তখন বিরোধী দলনেতা, হাইকোর্টে ছুটি চলছে,আমি এনআইএ করি, এনআইএ অর্ডার হয়, ২৫ জন এখনো জেলে আছে । মমিনপুর ইকবালপুরে হিন্দুরা এখন রামনবমীও পালন করে আর ফিরহাদ হাকিমও বলতে পারেনা ‘ইহা ভি এক মিনি পাকিস্তান হ্যায়’ । বন্ধ করে দিয়েছি ।’
হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’২০২২ সালে রামনবমীতে হুগলি জেলার রিষড়া, হাওড়ার শিবপুরের পিএম বস্তি,উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলাতে জয় শ্রী রামের ধ্বনি দিয়ে নিরস্ত্র মিছিল যাচ্ছিল । সেই মিছিলে পাথর আর বোমা বৃষ্টির মত পড়েছে । পুলিশের কিছু করার নেই । যদি করে তাহলে ট্রান্সফার করে দেবে । কারণ ওরা (মুসলিমরা) বলে সরকার তো আমাদের । আমরা তো ভোটে জিতিয়েছি এই সরকারকে অতএব আপনারা ও কিছু করতে পারবেন না৷ পুলিশও কিছু করতে পারেনি । তাদের হাত আর পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে । এই সরকার ভোটব্যাংকের রাজনীতির জন্য তোষামোদে ব্যস্ত৷ আমি বিরোধী দলনেতা হিসেবে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় । হাইকোর্টে অনেক লড়াই এর পরে মুখ্য বিচারপতি এনআইএর অর্ডার দেয়৷’ তিনি বলেন,’এই রাজ্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে দাঙ্গাবাজদের বাঁচানোর জন্য অভিষেক মনুসিংভি, কপিল সিব্বালের মত আইনজীবী রাখে । যাদের পারিশ্রমিক ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা । সরকার তাদের সুপ্রিম কোর্টের দাঁড় করায় এনআইএ বন্ধ করার জন্য । সরকারের তো এটা কাজ নয় । সরকারের কাজ গুন্ডা দমন করা । কিন্তু এই সরকার তুষ্টিকরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে যায় । সুপ্রিম কোর্টের আগের মুখ্য বিচারপতির বেঞ্চ এনআই-এর তদন্ত বহাল রাখেন ।’
তিনি বলেন,’রিষড়ায় ৩৭, হাওড়াতে ১৭ এবং ডালখোলাতে ২৭ জন জিহাদি,গুন্ডা জেলের ভেতরে যায়৷ আর এই কারণে ২০২৩ এবং ২৪ সালে রাম নবমী আপনাদের শান্তিতে হয়েছে ৷ ২০২৫ এও হবে ।’।