আজ দেশের দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্মজয়ন্তী । একজন হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী এবং অন্যজন হলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী । “দেশের লাল” লালাবাহাদুরকে সকলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন । কিন্তু গান্ধী জয়ন্তীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হয়েছে বিভিন্ন কটাক্ষের মধ্য দিয়ে । কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস গান্ধীর জন্মজয়ন্তীতে মুর্তিতে মাল্যদান থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রদ্ধা জানিয়ে পোস্ট করলেও এরাজ্যের বিজেপির কোনো নেতানেত্রী (একমাত্র অগ্নিমিত্রা পাল ছাড়া) কেউই কথিত “মহাত্মা”কে স্মরণ করেননি । তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যথারীতি রাজঘাটে ফুল মালা দিয়ে গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ।
এদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে গান্ধী সম্পর্কে যে দৃষ্টিকোণ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লক্ষ্য করা তা চমকে দেওয়ার মত । আনন্দ রঙ্গনাথন দাবি করেছেন পন্ডিত লক্ষণচার্য্য রচিত “পতিত পাবন সীতারাম”-লিরিক চুরি করে গান্ধী “রঘুপতি রাঘব রাজারাম” লিখেছিলেন । তিনি গান্ধীজয়ন্তীর শুভেচ্ছা বার্তায় এক্স-এ লিখেছেন,’হিন্দুরা যদি মুসলিমদের ধ্বংস করে আমাদের সবাইকে হত্যা করতে চায়, তবুও তাদের উপর তাদের ক্রোধ পোষণ করা উচিত নয়। আমাদের সাহসের সাথে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া উচিত। যদি মুসলিমরা সমস্ত হিন্দুকে হত্যা করে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে আমরা একটি নতুন ভারতের সূচনা করতাম। মহাত্মা গান্ধী আপনাকে গান্ধী জয়ন্তীর শুভেচ্ছা।’
কেউ গান্ধীর ব্রহ্মচর্যের নামে ১৪ বছর বয়সী নাতনির সঙ্গে নগ্ন হয়ে এক বিছানায় শুয়ে থাকার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে গান্ধীকে “মহাত্মা” মানতে অস্বীকার করেন । কেউ গান্ধীর সাদামাটা জীবনের আড়ালে বিপুল ব্যায়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় । কেউ গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গোডসের ছবিতে “হ্যাপি বার্থ ডে গান্ধীজি” লেখা পোস্টার পোস্ট করেছেন ।
কিন্তু মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী সম্পর্কে এত ঘৃণা কেন সাধারণ মানুষের মধ্যে । কেউ কেউ বলছেন যে এটা বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবি “দ্য কাশ্মীর ফাইলস”- এর এফেক্ট ! আসলে ১৯৪৬ সালের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কলকাতায় এবং ওই বছর কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের নোয়াখালীতে চলা হিন্দু নরসংহারের ঘটনার উপর নির্মিত ওই ছবিতে গান্ধীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে । একটা সিনে কলকাতায় হিন্দুদের ত্রাতা গোপাল মুখার্জি(পাঁঠা) ও গান্ধীর কথপোকথন আছে৷ যেখানে গোপাল মুখার্জিকে অস্ত্র সমর্পন করার কথা বলেছেন গান্ধী । তখন গোপাল মুখার্জি প্রশ্ন করেন, ফের আমাদের মা-বোনের উপর নির্যাতন হলে কি করব আমরা ? উত্তরে গান্ধী হিন্দু মেয়েদের দাঁতে ঠোঁট চেপে ধরে দমবন্ধ করে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন । একথা শুনে ক্ষিপ্ত গোপাল মুখার্জি অস্ত্র সমর্পণ করতে অস্বীকার করেন । এই দৃশ্য সাধারণ হিন্দু দর্শকদের মধ্যে গান্ধীর প্রতি তীব্র ঘৃণার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে । ওই সিনে গোপাল মুখার্জির ডায়লগের পর প্রেক্ষাগৃহেও প্রচুর হাততালি পড়ে৷
কয়েকজন নেটাগরিকের গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষে পোস্ট নিচে তুলে ধরা হল :
প্রতীশ তরফদার নামে একজন লিখেছেন,’সারাদিন খুব খাটনি গেছে তাই ন’টার সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । হঠাৎ স্বপ্ন দেখলাম বাপুকে জন্মদিনে উইশ করতে গেছি। জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললাম #ভোটচুরি নিয়ে পাপ্পু এতো লাফালাফি করছে, আপনি কিছু বলবেন? গান্ধীজি বললেন যেদিন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৫৮০/১৩৭৭ ভোটে কংগ্রেসের সভাপতি পদে জয়ী হয়েছিলেন, আর আমি বলেছিলাম “সিতারামাইয়ার পরাজয় আমার পরাজয়” সেদিনই ভোট চুরি হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে স্বাধীনতার আগেই কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কংগ্রেস কমিটির সভাপতি নির্বাচনে ১২ টির মধ্যে ১২ টি ভোট সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল পাওয়ার পরেও আমি লম্পট নেহেরুকে সভাপতি বানিয়েছিলাম সেদিনই #ভোটচুরি হয়েছিল। সেদিনের সেই ভুলগুলোর জন্যই আজ কাশ্মীরের একটা অংশ পাকিস্তানের দখলে, আকশাই চিন চিনের দখলে। নেহেরুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব না দেখালে ভারত আজ অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র তৈরি হতো, গান্ধী ফ্যামিলি তিন পুরুষ ধরে দেশটা লুটেপুটে খেত না।
তিনি আরও লিখেছেন,উনি ওনার কৃত কর্মের জন্য সত্যিই অনুতপ্ত দেখলাম, শেষে উনি আরো বললেন দেশের প্রতিটি হিন্দুর এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করা উচিত, ওনার হাত শক্ত করা উচিত। নরেন্দ্র মোদীই পারবে দেশটাকে শক্ত হাতে মোল্লাদের গজওয়া- ই-হিন্দ থেকে রক্ষা করতে, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে। আমিও বললাম শুভ জন্মদিনে আপনাকেও, অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা বাপু ।
সোশ্যাল নলেজ সেন্টার নামে একটা ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে,’আজ গান্ধী জয়ন্তীতে আমাদের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে কিছু তথ্য না জানালে আপনারা হয়তো জানতেই পারবেন না। মোহনদাস গান্ধী অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। ১৯২২ সালে যখন তিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে পুনের জেলে ছিলেন তখন তাঁর জন্য জেলের মধ্যে দুটি ঘর বরাদ্দ করেছিল চির’শত্রু ইংরেজ। একটি ঘর শোয়ার জন্য, আরেকটি চরকা চালানো ইত্যাদি কাজকর্মের জন্য। তাঁর রোজকার খাদ্য তালিকায় ছিল –
● ২৫০ গ্রাম আটার রুটি
● মাখন
● সওয়া এক কিলোগ্রাম ছাগলের দুধ
● চারটে কমলা লেবু
● দুটো পাতি লেবু
● ৫০ গ্রাম কিসমিস
● খাবার সোডা
জেনেও প্রাণ কাঁদে। কি কষ্টেই না থাকতেন তিনি।।