এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,৩০ সেপ্টেম্বর : চলতি দুর্গাপূজায় প্রতিমার মহিষাসুরের দাড়ি-গোঁফের সঙ্গে নিজেদের দাড়ি-গোঁফের মিল খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশের মৌলদাদীরা । তারা বিষয়টি “ধর্মনিন্দা” হিসাবে দেখে অবিলম্বে মহিষাসুরে দাড়ি-গোঁফ চেঁচে ফেলার জন্য হুঁশিয়ারিও দিয়েছে । সেই হুঁশিয়ারির পর কুষ্টিয়া জেলার গোপালগঞ্জ শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড শহর চেচানিয়া কান্দি শিতলা মন্দিরে, অসুরের গোঁফ দাড়ি থাকার কারনে, স্থানীয় প্রশাসন অসুরের মুখ ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দেয় । যা ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয় । শুধু তাইই নয়,বেশ কয়েকটি মণ্ডপের মহিষাসুরের মুখ নতুন গামছা দিয়ে ঢেকে দিয়ে যায় পুলিশ । এছাড়া মহাসপ্তমীর পূজো চলাকালীন রাত ১২:৪০ নাগাদ ঠাকুরগাঁও-এর ১৭ নম্বর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি দুর্গাপ্রতিমার অসুরের দাড়ি খুলে দিয়ে যায় পুলিশ ।
এবারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ বাস টার্মিনাল তেলপাম্প সংলগ্ন দুর্গা মন্দিরে মহাসপ্তমীর আরতী শেষে উপস্থিত ভক্তরা যখন যে যার বাড়ি চলে যান তখন চুপিসারে মণ্ডপে ঢুকে মহিষাসুরের দাড়ি চেঁচে দিয়ে চলে যায় পুলিশ । পরে পুজো কমিটির সদস্যদের অসুরের মুখের অস্বাভাবিক রূপ পরিবর্তন নজরে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে । এ ঘটনায় পুজাকমিটির সদস্য ও পূজারীরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
জানা গেছে,সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মহাসপ্তমীর রাতে আরতী শেষে যখন ভক্তরা মন্দির ত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন, তখন দেখা যায় অসুরের রূপ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায় মনে করছে, এমন বিকৃতি শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতই হানে না, বরং শারদীয় দুর্গোৎসবের মহিমাকেও ক্ষুণ্ণ করে।
এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর এবং কুমিল্লার কিছু পূজামণ্ডপে অসুরের রূপ বিকৃতভাবে উপস্থাপনের ঘটনা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদও এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হিন্দু অধিকার গোষ্ঠীর নেতৃত্বরা বলছেন, অসুরের প্রতিমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলার কারণে বিকৃত রূপে প্রদর্শন করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁরা দাবি করেছেন, সনাতনী সমাজের ধর্মীয় আবেগকে সম্মান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক হতে হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ঘটনাটি সামনে আসার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সাধারণ ভক্তরা মনে করছেন, দুর্গাপূজার আনন্দ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসন ও আয়োজকদের আরও সতর্ক হওয়া জরুরি। তারা প্রতিমার দাড়ি-গোঁফের সঙ্গে মৌলবাদীদের নিজের ধর্মকে না জড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছেন ।
বাংলাদেশের হিন্দুরা এটাও প্রশ্ন তুলছেন যে “এখন অসুরের দাড়ি নিয়ে সমস্যা, আগামীতে বলবে না তো যে দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতীকে হিজাব পড়াতে হবে?”