আধুনিক যুদ্ধে ব্যবহৃত ক্ষেপনাস্ত্র সমূহের সঙ্গে মহাভারতের যুগে বর্ণিত অস্ত্রের বহু মিল আছে । মহাভারতে বর্ণিত ব্রহ্মাস্ত্র আসলে কি পারমাণবিক বোমা ছিল ? এছাড়া নারায়ণস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, পাশুপতাস্ত্রসহ এমন কিছু অস্ত্র প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে যেগুলির ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা আধুনিক যুগের কিছু ক্ষেপনাস্ত্রের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়৷ এই প্রতিবেদনে মহাভারতের ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের পিছনের বিজ্ঞান এবং রহস্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে ।
প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে উল্লিখিত অস্ত্রের বর্ণনা পড়ে আধুনিক বিজ্ঞানীরাও অবাক হন। মহাভারতে বর্ণিত ব্রহ্মাস্ত্র, নারায়ণস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্রের মতো অস্ত্রের প্রভাব আজকের পারমাণবিক অস্ত্রের মতো। মহাভারতে বর্ণিত ধ্বংসের দৃশ্যগুলি হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পারমাণবিক হামলার বর্ণনার সাথে অদ্ভুত মিল থাকা নিছক কাকতালীয় হতে পারে না। মহাভারতে বর্ণিত অস্ত্রের প্রভাব আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের সাথে এক আশ্চর্যজনক সাদৃশ্য বহন করে। মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পায় প্রাপ্ত ভিট্রিফাইড ইট এবং তেজস্ক্রিয় কঙ্কাল ইঙ্গিত দেয় যে প্রাচীনকালেও পারমাণবিক প্রযুক্তি বিদ্যমান ছিল।
এই প্রবন্ধে, আমরা গভীরভাবে পরীক্ষা করব যে মহাভারতের যুগে পারমাণবিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আদপেই পরিচিত ছিল কিনা? ব্রহ্মাস্ত্র কি আসলেই একটি পারমাণবিক বোমা ছিল? এবং প্রাচীন ভারতীয় ঋষিরা কীভাবে এত উন্নত বৈজ্ঞানিক নীতি বুঝতে পেরেছিলেন যা আধুনিক বিজ্ঞান কেবল বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কার করেছিল?
১. ব্রহ্মাস্ত্র: মহাভারতের ‘পারমাণবিক বোমা’
মূল বর্ণনা (ভীষ্মপর্ব, অধ্যায় ২০২)
“ব্রহ্মাস্ত্রং প্রজ্জ্বলং মহাজ্বলং তেজোমায়াম্।
তস্য ভেগেন মহাতা জজ্জ্বলং স মহাচলঃ”।।
(অর্থ : ব্রহ্মাস্ত্র থেকে একটি বিশাল শিখা বেরিয়ে এসেছিল, যার তীব্রতা পাহাড়কে পুড়িয়ে দিতে শুরু করেছিল।)
মহাভারতের দ্রোণপর্বে ব্রহ্মাস্ত্রের ব্যবহারের বর্ণনা আধুনিক পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রভাবের সাথে এক আকর্ষণীয় সাদৃশ্য বহন করে। “একটি একক প্রক্ষেপণ, মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তিতে পরিপূর্ণ… এর পূর্ণ তেজ ছিল হাজার সূর্য উদিত হওয়ার মতো উজ্জ্বল, উজ্জ্বল ধোঁয়া এবং শিখা সহ। এর বিস্ফোরণের পরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে যার ফলে জ্বলন্ত ধোঁয়ার মেঘ তৈরি হয়। বিস্ফোরণের পরে ধোঁয়ার মেঘ বিশাল ছাতার খোলার মতো বিস্তৃত বৃত্তে পরিণত হয়। এটি একটি অজানা অস্ত্র, একটি বিপরীতমুখী বজ্রপাত, মৃত্যুর একটি বিশাল দূত,… এটি ছাইতে পরিণত হয়।”
২০২৩ সালের গবেষণা
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স অনুসারে, রাজস্থানের বারান অঞ্চলে উচ্চ তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে, যা মহাভারতে বর্ণিত “কুরুক্ষেত্রের কাছে জনশূন্য ভূমি”-এর সাথে মিলে যায়।
পারমাণবিক বিস্ফোরণের সাথে মিল
মহাভারতের এই বর্ণনা এবং আধুনিক পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রভাবের মধ্যে অনেক মিল দেখা যায়
১ তীব্র আলোর প্রভাব: “হাজার সূর্যের মতো উজ্জ্বলতা” – এটি পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রাথমিক আভাটির একটি সঠিক বর্ণনা।
২ বিস্ফোরণ-পরবর্তী মেঘ: “বিশাল ছাতার খোলার মতো ধোঁয়ার মেঘ” – এটি পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরে তৈরি মাশরুম মেঘের একটি সঠিক বর্ণনা।
৩ বিকিরণের প্রভাব: “দেহগুলি এমনভাবে পুড়ে গেছে যে চিহ্নিত করা সম্ভব নয় । চুল এবং নখ পর্যন্ত পড়ে গেছে, কোনও আপাত কারণ ছাড়াই মাটির পাত্র ভেঙে গেছে এবং পাখি সাদা হয়ে গেছে।” – এগুলি হিরোশিমা-নাগাসাকিতেও পরিলক্ষিত বিকিরণের সমস্ত প্রভাব।
৪ দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব: “কয়েক ঘন্টা পরেই সমস্ত খাদ্যদ্রব্য প্রভাবিত হয়েছিল” – এটি বিকিরণ দ্বারা দূষিত খাবারের বর্ণনা।
বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া
“পারমাণবিক বোমার জনক” নামে পরিচিত বিখ্যাত পারমাণবিক বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমার প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে উল্লিখিত অস্ত্র সম্পর্কে বলেছিলেন,
“প্রাচীন ভারতে, আমরা দৈর্ঘ্যের নির্দিষ্ট পরিমাপের জন্য শব্দ পাই, এক আলোকবর্ষের দূরত্ব আছে, এক পরমাণুর দৈর্ঘ্য আছে। কেবলমাত্র সেই সমাজের জন্যই এই ধরনের শব্দের প্রয়োজন হত যারা পারমাণবিক শক্তির অধিকারী ।”
২. নারায়ণস্ত্র: নির্দেশিত শক্তি অস্ত্র? (নিউট্রন বোমার প্রাচীন সংস্করণ)
মহাভারতের যুদ্ধের পর অশ্বত্থামা যে নারায়ণস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন তা একটি আধুনিক নিউট্রন বোমা বলে মনে হয়। নিউট্রন বোমা জীবন্ত প্রাণীদের হত্যা করে কিন্তু ভবন এবং অবকাঠামোকে রক্ষা করে – ঠিক যেমন নারায়ণস্ত্রের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ।
মহাভারতের দ্রোণ পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে :
“নারায়ণস্ত্র মুক্তা তু সর্বতা প্রত্যদর্শিত।
আকাশে চ মহাশ্বো দিশঃ সর্বঃ প্রাণদয়ন ॥”
(নারায়ণস্ত্র প্রকাশিত হলে, আকাশে একটি তীব্র শব্দ হয় এবং তা অদৃশ্য হয়ে গেল ।)
আধুনিক সমতুল্য:
✔ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র (শব্দের চেয়ে ৫ গুণ দ্রুত)
✔ লেজার অস্ত্র (অদৃশ্য শক্তি রশ্মি)
✔ তড়িৎ চৌম্বকীয় পালস (EMP) – ইলেকট্রনিক্স ধ্বংসকারী অস্ত্র ।
মার্কিন পেন্টাগনের রিপোর্ট অনুযায়ী চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দেশিত শক্তি অস্ত্র নারায়ণস্ত্রের নীতিতে কাজ করে।
৩.পাশুপতাস্ত্র : অ্যান্টি ম্যাটার অস্ত্র?
শিব পুরাণে বর্ণনা :
“पाशुपतास्त्रं गृहीत्वा प्रज्वलितं त्रिलोचनः।
येन दग्धं त्रिपुरं तत्कालं भस्मसात् कृतम्॥”
(শিব পশুপতাস্ত্র দিয়ে ত্রিপুরা ধ্বংস করেছিলেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়।)
ভৌত ব্যাখ্যা :
পদার্থ-বিরোধী(Anti Matter) বিস্ফোরণ: ১ গ্রাম পদার্থ-বিরোধী, ৪৩ কিলোটন TNT এর সমতুল্য শক্তি উৎপাদন করতে পারে। CERN 2024 সাল থেকে অ্যান্টি ম্যাটারের উপর গবেষণা করছে।
৪. আগ্নেয়াস্ত্র: আধুনিক অগ্নিশিখা বা তাপ-প্রদাহমূলক অস্ত্র :
১. খাণ্ডববন দহনের ঘটনা (আদিপর্ব, অধ্যায় ২২৫-২২৬)
শ্লোক (আদিপর্ব ২২৬.১০-১১)
“ततो अर्जुन : समुद्दिश्य खाण्डवं वनमव्ययम्। आग्नेयमस्त्रमसृजत् प्रज्वलन्तमिवानलम्॥
स विसृष्टो महातेजा हुताशनसमद्युतिः।
जगाम खाण्डवं दग्धुं वायुना समुदीरितः॥”
অর্থ: “তারপর অর্জুন অক্ষয় খাণ্ডব বনের দিকে অগ্নিশিখা ব্যবহার করলেন, যা স্বয়ং প্রজ্বলিত আগুনের মতো ছিল। যা অগ্নিদেবের মতো অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং দীপ্তিমান ছিল, যা বাতাসের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে খাণ্ডব বনকে পুড়িয়ে ফেলতে গিয়েছিল।”
২. দ্রোণপর্বে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার (দ্রোণপর্ব, অধ্যায় ১৭০)
শ্লোক (দ্রোণপর্ব ১৭০.২৫)
“आग्नेयमस्त्रं तेजस्वी द्रोणः सम्यगवासृजत्।
सा ज्वाला परमोदारा दिशः सर्वा व्यदीपयत्॥”
অর্থ : “প্রতিভাবান দ্রোণাচার্য আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর বিশাল শিখা সমস্ত দিক আলোকিত করেছিল।
৩. কর্ণ-অর্জুন যুদ্ধ (কর্ণপর্ব, অধ্যায় ৩৪)
শ্লোক (কর্ণপর্ব ৩৪.১২):
“आग्नेयेनास्त्रवर्षेण कर्णः पार्थमवाकिरत्।
ततः प्रत्यास्त्रवर्षेण पार्थस्तमप्यवाकिरत्॥”
অর্থ : “কর্ণ অর্জুনকে আগ্নেয়াস্ত্রের বর্ষণে ঢেকে দিয়েছিলেন। তারপর অর্জুনও তাকে প্রতিশোধমূলক অস্ত্রের বর্ষণে প্রতিহত করেছিলেন।”
৪. আগ্নেয়াস্ত্রের প্রভাবের বর্ণনা (ভীষ্মপর্ব, অধ্যায় ৯৯)
শ্লোক (ভীষ্মপর্ব ৯৯.৭) :
“आग्नेयास्त्रप्रभावेन दह्यमाना मही तदा।
व्याघूर्णित इवाभाति सागरो रत्नसंचयः॥”
অর্থ : “আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে পৃথিবী জ্বলতে শুরু করল। রত্নপাথরে ভরা সমুদ্র (বা সেনাবাহিনী) বিক্ষিপ্তভাবে জ্বলতে শুরু করল।”
৫. বরুণাস্ত্রের প্রয়োগ (দ্রোণপর্ব, অধ্যায় ১৭২)
শ্লোক (দ্রোণপর্ব ১৭২.১৫) :
“आग्नेयं यदि वार्ष्णेय वारुणेन निवारय।
इत्युक्तः स तदा कृष्णः प्रत्यस्त्रं समदर्शयत्॥”
অর্থ : “হে কৃষ্ণ! যদি আগ্নেয়াস্ত্রটি মুক্ত করতে হয়, তাহলে বরুণাস্ত্র দিয়ে তাকে শান্ত করো। এই কথা বলে কৃষ্ণ প্রত্যয়স্ত্র (প্রতিক্রিয়া অস্ত্র) দেখালেন।
বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট: এই শ্লোকগুলি ইঙ্গিত দেয় যে আগ্নেয়াস্ত্রটি একটি রাসায়নিক আগুন (গ্রীক আগুনের মতো), একটি থার্মোবারিক বিস্ফোরক, অথবা একটি প্লাজমা-ভিত্তিক অস্ত্র হতে পারে।
উৎস
এই শ্লোকগুলি গীতপ্রেস মহাভারত (গোরখপুর) এবং বোরি (ভান্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) মহাভারতের সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে।
বরুণাস্ত্র: অগ্নি দমন ব্যবস্থা বা জল ক্ষেপণাস্ত্র
১. দ্রোণপর্ব (অধ্যায় ১৭২) – বরুণাস্ত্রের ব্যবহার
শ্লোক :
“ततः प्रववृते वर्षं वारुणं वारिधारया।
आपूर्यत जगत्सर्वं सलिलेन समन्ततः॥”
অর্থ: “তারপর বরুণাস্ত্র জলের স্রোতধারা বর্ষণ করতে লাগল। সমগ্র বিশ্ব চারদিক থেকে জলে ভরে গেল। দ্রোণাচার্য কর্তৃক অবমুক্ত অগ্নি অস্ত্র বরুণাস্ত্র দিয়ে কৃষ্ণ শান্ত করেছিলেন। এটি ছিল জলের একটি ঐশ্বরিক অস্ত্র, যা আগুন নেভাতে সক্ষম।
২. কর্ণপর্ব (অধ্যায় ৯০) – কর্ণ দ্বারা প্রয়োগ
শ্লোক :
“वारुणं समरे कर्णो मुमोच भरतर्षभ।
तेनाप्लुतं जगत्सर्वं सैन्यं चासीत्समुक्षितम्॥”
অর্থ : “হে ভারতশ্রেষ্ঠ! কর্ণ যুদ্ধে বরুণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিলেন, যা সমগ্র বিশ্বকে প্লাবিত করেছিল এবং সেনাবাহিনী জলে ডুবে গিয়েছিল। কর্ণ এটি অর্জুনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু অর্জুন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এর প্রতিহত করেছিলেন।
বিশেষ তথ্য
১. প্রকৃতি
বরুণাস্ত্র ছিল একটি জল অস্ত্র, যা ভগবান বরুণের আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত হত। এটি আগ্নেয়াস্ত্র, ব্রহ্মাস্ত্রের মতো অগ্নি অস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করতে পারত।
আধুনিক উপমা
এটিকে “অগ্নি দমন ব্যবস্থা” বা “জল ক্ষেপণাস্ত্র” হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মহাভারতেও এটি ব্যবহার করা হয়েছিল বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে।
শাস্ত্রীয় সূত্র
বাল্মীকি রামায়ণে (যুদ্ধকাণ্ড) বরুণাস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। অথর্ববেদ (৪.১৫.৬) এটিকে “অপম বরুণঃ প্রভু” (জলের দেবতা বরুণ) এর সাথে যুক্ত করে।
উপসংহার: বরুণাস্ত্র ছিল এমন একটি অস্ত্র যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখেছিল, যা অতিরিক্ত তাপ বা আগুনকে শান্ত করেছিল। মহাভারতে, এটি কেবল ধ্বংস নয়, যুদ্ধ-নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হত।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি: পারমাণবিক ধ্বংসের প্রমাণ?
★ মহেঞ্জোদারোর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
★ তেজস্ক্রিয় পাথর: ২,৫০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রমাণ (শুধুমাত্র পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকেই সম্ভব)
★ তেজস্ক্রিয় কঙ্কাল: বিকিরণের চিহ্ন পোড়ানো।
★ হঠাৎ বিলুপ্ত সভ্যতা: বাইবেলের সদোম-গোমোরার অনুরূপ ।
ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ডেভিড ডেভেনপোর্ট দাবি করেছেন: “মহেঞ্জোদারোতে একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয়েছিল।”
২. বৈদিক গ্রন্থে পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা
অথর্ববেদে তেজস্ক্রিয়তার ইঙ্গিত (১০.৭.৩৫):
“यदंगारकं यद्विस्फुलिंगकं यद्दहनं यदुपदहनम्।
तत्सर्वं नाशयामसि॥”
(যা কিছু অঙ্গার, স্ফুলিঙ্গ এবং দাহ্য, আমরা ধ্বংস করতে পারি।)
ভৌত মিল
পারমাণবিক বিদারণ: ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর বিদারণ।
শৃঙ্খল বিক্রিয়া: অথর্ববেদে “অনুপ্রবাহ” (ক্রমিক প্রসারণ) শব্দের ব্যবহার।
৩. প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ
কিছু হরপ্পা প্রত্নস্থলে পাওয়া ধ্বংসাবশেষে কাঁচের মতো পদার্থ রয়েছে যা প্রচণ্ড তাপের কারণে তৈরি হতে পারে। এটি পারমাণবিক বিস্ফোরণের মতো প্রভাব দেখায়।
৪. বিকিরণের প্রভাব
মহাভারতে বর্ণিত “মানুষের চুল এবং নখ পড়ে যাওয়া”, “পাখি সাদা হয়ে যাওয়া” ইত্যাদি বিকিরণের প্রভাবের মতো।
৫. তেজস্ক্রিয় অবশিষ্টাংশ
ভারতের কিছু অঞ্চলে এখনও উচ্চ মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়, যা কিছু বিজ্ঞানী প্রাচীন পারমাণবিক যুদ্ধের ফলাফল বলে মনে করেন।
উপসংহার: বিজ্ঞান নাকি পৌরাণিক কল্পনা?
মহাভারত এবং অন্যান্য প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে বর্ণিত অস্ত্রের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অত্যন্ত উন্নত স্তরে ছিল। ব্রহ্মাস্ত্রের মতো অস্ত্রের বর্ণনা আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের সাথে এতটাই মিল যে এটিকে কাকতালীয় বলে বিবেচনা করা যায় না। আধুনিক বিজ্ঞান এখনও ব্রহ্মাস্ত্রের মতো অস্ত্র পুরোপুরি বুঝতে পারেনি, আর CERN অ্যান্টি ম্যাটারের গবেষণা করছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী নির্দেশিত শক্তি অস্ত্র তৈরি করছে। ISRO “ব্রহ্মোস” ক্ষেপণাস্ত্র (ব্রহ্মা + মোস) তৈরি করেছে৷
তবে, আধুনিক প্রেক্ষাপটে প্রাচীন গ্রন্থগুলির ব্যাখ্যা করার সময় আমাদের অবশ্যই তাদের মূল প্রেক্ষাপট এবং দার্শনিক ভিত্তি ভুলে যাওয়া উচিত নয়। প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের মূল লক্ষ্য পদার্থবিদ্যার সাধনা ছিল না বরং মানব জীবনের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জন ছিল।।

