এইদিন ওয়েবডেস্ক,করৌলি(রাজস্থান),০৮ এপ্রিল : পাকিস্থান বা বাংলাদেশ নয় কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানের করৌলির হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বাড়ি,দোকান ছেড়ে নতুন ঠিকানার সন্ধান শুরু করে দিয়েছেন । বিক্রি করে দিতে চাইছেন যাবতীয় পৈতৃক সম্পত্তি । একটি সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিক চ্যানেলের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় জনৈক এক হিন্দু দোকানদার বলেন,’আমাদের এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই । আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। বাজারের টাকাও দিতে হবে । আমি আমার সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি । আমরা এই সন্ত্রাসের পরিবেশে মধ্যে থাকতে পারি না । এই কারণেই আমরা অন্যত্র যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । কারণ এই লোকেরা ভবিষ্যতেও আমাদের অনেক কিছু ক্ষতি করতে পারে ।’করৌলির বাসিন্দা হেমন্ত আগরওয়াল নামে এক দোকানদার অন্য একটি বৈদ্যুতিক চ্যালের কাছে বলেন,’আমাদের দোকান পুড়ে গেছে । সব লুটপাট করে নিয়েছে । আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে । এখন আমরা আর এখানে থাকব না । চলে যাব । ওরা(মুসলিমরা) আমাদের এখানে থাকতে দেবে না ।’
প্রসঙ্গত,গত ২ এপ্রিল হিন্দু নববর্ষ উপলক্ষে মোটরসাইকেল র্যালি বের করেছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন । কিন্তু র্যালিটি মুসলিম অধ্যুষিত করৌলির হাটওয়াদা বাজারের মধ্য দিয়ে যেতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইর্যাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে কিভাবে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন বাড়ির ছাদে উঠে শোভাযাত্রা লক্ষ্য করে ইঁটপাটকেল ছুড়ছে । আর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে । সংঘর্ষে ৪ পুলিশ কর্মীসহ ৪৩ জন আহত হন ।
জানা গেছে, তদন্ত শুরু হলে পিএফআইয়ের একটা চিঠি হাতে পায় পুলিশ । তাতে পরিষ্কার যে সুপরিকল্পিতভাবেই সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো হয়েছিল । আর তার মাস্টার মাইন্ড ছিল কংগ্রেস নেতা মাতবুল আহমেদ । রাজস্থানের রাজ্যপাল কালরাজ মিশ্রও এই হিংসাকে সুপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন । তিনি বলেছিলেন ‘করৌলি হিংসার সময় যেভাবে পাথর ছোড়া হয়েছিল তা প্রমাণ করে যে এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল এবং এটি প্রতিরোধ করাও যেত ।’
রাজ্যপালের এই মন্তব্য রাজস্থান পুলিশের ব্যার্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় । যদিও ঘটনার জন্য সেই দিন বাইক র্যালি বের করা হিন্দুদের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছে রাজস্থানের ডিজিপি মোহন লাল লাথার । তাঁর কথায়,বলেছেন ‘নব সংবৎসর মিছিল যেভাবে ডিজে বাজানো হয়েছিল তা সন্দেহজনক । আপত্তিকর গান বাজানোর কারণেই পাথর ছোড়া হয়েছিল ।’ এমনি শোভাযাত্রার অনুমতি দেওয়া হলে ডিজে বাজানোর কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন ডিজিপি ।
যদিও চন্দ্রশেখর গর্গ নামে এক দোকানদারের কথায়,’সেদিন (২ এপ্রিল) বেলা ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে মুসলিম দোকানদাররা তাদের দোকানপাট বন্ধ করতে শুরু করে । সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাজারে ভিড় জমে উঠলে আমরা ফের দোকানপাট বসাতে শুরু করি । তখন ঐ লোকেরা (মুসলিম) এর বিরোধিতা করে । আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের তাড়িয়ে দেয় । আমাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল । আমাদের বাড়িতে যাওয়ার পর তারা আমাদের দোকান লুট করে অগ্নিসংযোগ করে ।’ অর্থাৎ চন্দ্রশেখর গর্গের কথার স্পষ্ট নব সংবৎসরের বাইক র্যালির আগে থেকেই হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল ।
এদিকে রাজস্থান সরকার করৌলির সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং ১৫ দিনের মধ্যে একটি বিশদ রিপোর্ট চেয়েছে । এই ঘটনায় এযাবৎ ১০৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।।