প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ এপ্রিল : বাংলা আবাস যোজনার প্রকৃত উপভোক্তার ভাগ্যে জোটেনি ঘরের টাকা। অথচ সেই টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে উপভোক্তা নয় এমন ব্যক্তিতে।এমনই অভিযোগ এনে একের পর এক উপভোক্তা দ্বারস্থ হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনা ১ ব্লক প্রশাসনের।তাঁদের মধ্যে এক প্রতিবন্ধী উপভোক্তাও রয়েছেন।এই ঘটনা সামনে আসতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে কালনার প্রশাসনিক মহলেও। ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিরোধীরাও। তারা এই দুর্নীতির জন্য তৃণমূল পরিচালিত কালনার নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েতকেই কঠগড়ায় তুলেছেন ।
বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে এদিন কালনা ১ ব্লক বিডিও অফিসে হাজির হন মহসীন মণ্ডল নামে এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি । তিনি জানিয়েছেন,তাঁর বাড়ি নান্দাই পঞ্চায়েতের দুপসা গ্রামে। মহসীন বাবু প্রশাসনকে অভিযোগে জানিয়েছেন,কাগজে কলমে তিনি বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন । তবে ঘরের টাকা তিনি পাননি ।মহসীন বাবুর অভিযোগ,অন্যায় ভাবে তাঁকে প্রকল্পের সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে ।তার বদলে অন্যায় পথেই তাঁর নামে থাকা বাংলা আবাস যোজনার ঘরের ’আইডি’ ব্যবহার করে অন্য ব্যক্তিকে সেই ঘর পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও গ্রাম সদস্যা মিলে এই প্রতারণা কাজটি করেছে বলে প্রতিবন্ধী মহসীন মণ্ডল সরাসরি অভিযোগ এনেছেন ।পাশাপাশি তিনি এও বলেন ,“এদিন আমি বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছি বলে আমায় ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি যিনি ফোন করেছিলেন তিনি ঘরের টাকা আমায় ফেরৎ পাইয়ে দেবেন বলেও শুনিয়েছে । কিন্তু আমি সেইসব কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে ঘটনার বিহিত চেয়েছি ।’
মহসীন মণ্ডলের মতোই বুলু দেবনাথ নামে
অপর এক ব্যক্তিও আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে এদিন বিডিও-র দ্বারস্থ হন । প্রশাসনকে তিনি জানান ,“ তাঁর বাড়ি নান্দাই পঞ্চায়েতের আশ্রম পাড়া এলাকায় । বিডিওকে তিনি জানিয়েছেন,বাংলা আবাস যোজনায় তাঁর নামে ঘর অনুমোদন হয় । কিন্তু তিনি ঘরের টাকা পান নি । পরে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন আবাস যোজনা প্রকল্পে তাঁর ’আই ডি’ নম্বর ব্যবহার করে আশ্রম পাড়ার সদস্যার স্বামী ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। তথ্য সহ এই বিষয়ে এদিন বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে বুলু দেবনাথ জানিয়েছেন“ । এইসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য নান্দাই পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুমুর ঘোষ ও উপপ্রধান লিয়াকত শেখ কে ফোন করা হয় । কিন্তু দু’জনের কেউ ফোন রিসিভ না করায় তাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।
যদিও কালনা ১ ব্লকের বিডিও সেবন্তী বিশ্বাস জানিয়েছেন,’দু’দিনে নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের কাজ নিয়ে ৪-৫ টি অভিযোগ পেয়েছি । অভিযোগকারীরা দাবী করেছন ,তাঁরাই প্রকৃত বেনিফিসিয়ারি (উপভোক্তা)। কিন্তু তাঁরা প্রকল্পের সুবিধা পাননি ।সেই সুবিধা গ্রাম পঞ্চায়েত অন্য কাউকে পাইয়ে দিয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন।অফিসারদের নিয়ে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে । এই সংক্রান্ত ’ডকুমেন্টারি ফাইল’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে । বেনিয়ম কিছু হয়ে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’।