এইদিন ওয়েবডেস্ক,প্যারিস,০২ জুলাই : শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পরিনতি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ফ্রান্স । গত মঙ্গলবার নাহেল এম নামে ১৭ বছর বয়সী এক মুসলিম কিশোর পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার পর থেকে এখনো ফ্রান্সে দাঙ্গা অব্যাহত রয়েছে । দাঙ্গাকারীরা শত শত যানবাহন,বেশ কিছু সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে । সেইন-সেন্ট ডেনিসে স্কুল, টাউন হল এবং প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিকের সদর দফতর সহ পাঁচ শতাধিক বেসরকারি ভবনগুলিও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । শত শত পুলিশ কর্মী আহত হয়েছে । দাঙ্গাবাজদের কাছ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি পাওয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ব্রেস্টের এলজিবিটি বার “হ্যাপি ক্যাফে”।
প্যারিসের শহরতলির নান্টেরে বিশৃঙ্খল গোষ্ঠী একটি হলোকাস্ট স্মৃতিসৌধে ঘৃণ্য স্লোগান স্প্রে করেছে । তাতে গালাগালি দিয়ে লেখা হয়েছে,’তারা পুলিশকে ঘৃণা করে। তারা রাষ্ট্রকে ঘৃণা করে এবং তারা ইহুদিদের ঘৃণা করে ।’ এমনকি ফরাসি পতাকা জ্বালানোর ঘটনাও ঘটেছে । এদিকে ফ্রান্সের বামপন্থীদের বিরুদ্ধে গোপনে অভিবাসীদের সাহায্য করার অভিযোগ উঠছে ৷ দাঙ্গা মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত প্যারিসে ৫,০০০ সহ গোটা ফ্রান্স জুড়ে ৪০,০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিনের মতে, শুক্রবার ফ্রান্সে দাঙ্গা তৃতীয় দিনে প্রবেশ করেছে, রাতারাতি ৬৬৭ জনেরও বেশি দাঙ্গাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । একটি টুইট বার্তায়, দারমানিন বলেছেন যে বিক্ষোভকারীদের সাথে সংঘর্ষে পুলিশ “বিরল” সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছিল ।
তবে ফ্রান্সের মুসলিম অভিবাসীদের দ্বারা সৃষ্ট দাঙ্গা এই প্রথম নয় । একই রকম ভাবে ২০০৫ সালেও ফ্রান্সে তারা দাঙ্গা বাধিয়েছিল । ওই বছর ২৭ অক্টোবর প্যারিসের শহরতলী সেইন-সেন্ট-ডেনিসে ক্লিচি-সুস-বোইসে দুই কিশোর-কিশোরী পুলিশের ভয়ে পালিয়ে একটি বৈদ্যুতিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকে । সেখানেই তারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় । মৃতদের একজন আরব বংশোদ্ভূত এবং অন্যজন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ।
তারপর প্রায় এক মাস ধরে দাঙ্গা চলে । ফ্রান্সের ২৭৪ টি শহরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে । প্রায় ১০,০০০ গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় । ২৩৩টি সরকারি ও ৭৪টি বেসরকারি ভবনে আগুন দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্কুল এবং জিম থেকে হোটেল পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল । দাঙ্গায় মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি ইউরো । যার বর্তমান মূল্য ১৭৯৪ কোটি টাকা । দাঙ্গায় ১০ থেকে ১৫ হাজার যুবক জড়িত ছিল । ১৫ জন করে যুবকের ছোট ছোট দল এই দাঙ্গা পরিচালনা করে । দাঙ্গাবাজদের গড় বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। আটক ৪,৮০০ জনের মধ্যে ১,০০০ জন নাবালক। তাদের মধ্যে ফ্রান্সের নাগরিকদের পাশাপাশি অনেক বিদেশী নাগরিকও ছিল । যাদের অধিকাংশই ছিল আরব ও আফ্রিকান মুসলিম ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন যে চলমান দাঙ্গা ২০০৫ সালের ফরাসি দাঙ্গার চেয়েও খারাপ সহিংসতা হয়েছে, যেখানে ৩,০০০-এরও বেশি বেসামরিক ও পুলিশ আহত হয়েছিল এবং ৮,০০০ টিরও বেশি গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে ; তিনি আরও বলেছেন যে ক্রাইসিস ইউনিটের সাথে বৈঠক করে তিনি দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন । কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিনি কেন দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেননি এনিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।।