দীর্ঘ ১৫ বছর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা শীলা দীক্ষিতের কথা মনে আছে ? কমনওয়েলথ গেমসে কেলেঙ্কারিতে তার নাম জড়িয়েছিল । তবে, এই প্রতিবেদন তার দুর্নীতি নিয়ে নয়,বরঞ্চ তার পারিবারিক জীবন নিয়ে,যা ছিল ট্রাজেডিতে ভরা । আর সেই ট্রাজেডির কারন তার কথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি । ব্রাহ্মণ পরিবারের গৃহবধূ শীলা দীক্ষিত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেস দলের নেত্রী হওয়ায় রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মের ভেদাভেদ মানতেন না । মেয়ে লতিকা দীক্ষিতও ছিলেন ঠিক তার মায়ের মতই । ভালোবেসে বিয়ে করেন পেশায় স্থপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরানকে । কিন্তু শীলা দীক্ষিতের মুসলিম জামাই তাদের জীবন কার্যত নরকে পরিনত করে দিয়েছিল । আসুন জেনে নেওয়া যাক ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে পরাজিত হওয়ার পর শীলা দীক্ষিত ও তার মেয়ের জীবনকে কিভাবে তার জামাই সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান নরক করে দিয়েছিল ।
দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত মারা গেছেন । কিন্তু তার শেষ দিনগুলি কেটেছিল প্রবল মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে । আর এজন্য দায়ি তার মেয়ে লতিকা দীক্ষিতের প্রেম । কারণ তার মেয়ে ‘লাভ জিহাদে’ ফেঁসে গিয়েছিল এবং তার অহিন্দু জামাই সবকিছু লুট করে শীলা দীক্ষিতের ভাইঝির সাথে পালিয়ে গিয়েছিল ! মেয়ে লতিকার মুসলিম স্বামী সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরানের কাছ থেকে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে গভীরভাবে আহত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন শীলা দীক্ষিত । সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান মা ও মেয়ে উভয়ের উপার্জিত সম্পদ নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, লতিকাকে ফেলে রেখে শীলার ভাইঝির সাথে । এই ঘটনার পর তার মেয়ে লতিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত এবং বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন শীলা দীক্ষিত ।
শীলা দীক্ষিতের মেয়ে লতিকা ১৯৯৬ সালে ইমরান মোহাম্মদকে বিয়ে করেন । যিনি বিয়ের ২০ বছর পর ২০১৬ সালে তার সমস্ত টাকা নিয়ে পালিয়ে যান এবং জালিয়াতির মাধ্যমে তার জমি ও বাড়ি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করেন । ২০১৪ সালে, লতিকার এফআইআর -এর ভিত্তিতে ইমরানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। লতিকা অভিযোগ করেন যে তার স্বামী সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান ১৯৯৬ সালে তাদের বিয়ের পর থেকে সুখে বসবাস করছিলেন কিন্তু তার মা ২০১৩ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। লতিকা দিল্লি পুলিশের কাছে তার অভিযোগে বলেছিলেন,আমার মা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ইমরানের আচরণ হঠাৎ বদলে যায়। সে আক্রমণাত্মক এবং অভদ্র হয়ে ওঠে এবং আমাকে নির্যাতন করতে শুরু করে ।’ যার পর ইমরানকে পারিবারিক সহিংসতা, চুরি এবং ব্যভিচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ ।
লতিকা তার অভিযোগে যে চুরি হওয়া জিনিসপত্রগুলি তুলে ধরেন তার মধ্যে একটি হল নৈনিতালে তার মালিকানাধীন একটি জমির কাগজপত্র । তিনি পুলিশকে জানান যে হেইলি রোডের তার বাড়ি থেকে গয়না এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে গেছে এবং যখনই তিনি ইমরানকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেন, তখনই তিনি এড়িয়ে যেতেন। এছাড়াও তার স্বামীর সাথে একজন মহিলার অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগও করেছিলেন তিনি এবং সেই কারণেই তার স্বামী তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ ছিল তার । পুলিশ এই মামলায় একজন মহিলাকেও তখন গ্রেপ্তার করেছিল । অবশ্য গ্রেফতারের ২ বছর পর জামিনে ছাড়া পেয়ে যান ইমরান ।
এদিকে এটি যেকোনো মায়ের জন্য উদ্বেগের বিষয় এবং বৃদ্ধ বয়সে সন্তান এবং অর্থের প্রতি আসক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। দিল্লির রাজনৈতিক মহলের গুঞ্জন অনুসারে, শীলা দীক্ষিতের এই মুসলিম জামাতাই তাঁর সারাজীবনের উপার্জনের সমস্ত হিসাব রাখতেন। এমনকি ভোটের সময় মুসলিম জামাতার নাম ভাঙিয়ে মুসলিম ভোটব্যাংক নিজের দিকে টানার আপ্রাণ চেষ্টাও চালাতেন শীলা দীক্ষিত । কিন্তু পরে সেই জামাতাই তার সমস্ত সম্পদ আত্মসাৎ করে নিয়েছিলেন, শীলার মেয়েকে রেখে তার ভাইঝিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন । বিষয়টি পুলিশের কাছেও গড়িয়েছিল, কিন্তু মুসলিম জামাইয়ের কাছ থেকে তার আয়ের গোপন তথ্য প্রকাশ করার হুমকি বা ব্ল্যাকমেইলিং হয়ে শীলা দীক্ষিত চুপ থাকাই শ্রেয় বলে মনে করেছিলেন। এখন আপনি বুঝতে পারছেন যে, কোন মুসলিম জামাই কারো মেয়েকে ফেলে এবং ছোট ভাইঝিকে নিয়ে যদি পালিয়ে যায় এবং ভুক্তভোগীর সারা জীবনের সঞ্চয়ও কেড়ে নেয়, তাহলে ভুক্তভোগী যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সে অবশ্যই গভীরভাবে আহত হবে এবং টেনশনে পড়বে। এত কষ্ট পাওয়া এবং বিষণ্ণ হওয়া হলো একটি গুরুতর অসুস্থতার আবাসস্থল। শেষে এই রোগই শীলা দীক্ষিতের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শৌর্য্য মিশ্র(Shaurya Mishra) নামে একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রভাবশালী শীলা দীক্ষিতের শেষ জীবনের ওই করুন কাহিনী বর্ননা করে এক্স-এ লিখেছেন, প্রথম বোকামিটি করেছিলেন লতিকা, যিনি ছিলেন একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ কিন্তু কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ ক্ষমতাধর মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের মেয়ে, একজন জিহাদিকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে তাকে বিয়ে করেছিলেন; দ্বিতীয় বোকামিটি করেছিলেন অভিজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রী মা শীলা, যিনি তার মুসলিম জামাইকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে তার উপার্জনের হিসাব তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন; এবং তৃতীয় সবচেয়ে বড় বোকামিটি করেছিলেন শীলার ভাইঝি, যিনি তার বোনের অবিশ্বস্ত মুসলিম স্বামীকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে তার সাথে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যদি এইসব সম্পূর্ণ বুদ্ধিহীন মানুষের সাথে ঘটে, তাহলে কী হবে?
তিনি লিখেছেন, সমস্ত সনাতন ভাই, তাদের পরিবার এবং কন্যাদের এই অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত যে কীভাবে একজন মুসলিম একটি অত্যন্ত শক্তিশালী পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এবং লাভ জিহাদে তাদের পরিচয় ধ্বংস করেছিল । পরিশেষে তিনি লিখেছেন,এই ঘটনার সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক দিক এবং অভিজ্ঞতা হল, যখন একজন সাধারণ মুসলিম একটি রাজ্যের শক্তিশালী মুখ্যমন্ত্রী, তার মেয়ে এবং ভাইঝির বিরুদ্ধে এত বড় ষড়যন্ত্র করে, তাদের জীবন ধ্বংস করে, তাদের ব্যক্তিগত, আধ্যাত্মিক, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করে, তবুও তিনি এবং তার দল এবং শুভাকাঙ্ক্ষী নেতারা তার বিরুদ্ধে কিছুই করতে অক্ষম, তখন একজন সাধারণ মানুষ কী করতে পারে? আর আজকাল এর বাতাস প্রচণ্ডভাবে বইছে!
এদিকে স্বামীর এই বিশ্বাসঘাতকতার পর লতিকা তার দুই সন্তান নিয়ে শীলা দীক্ষিতের সাথে দিল্লির বাড়িতে থাকতে শুরু করেন । এবারের নির্বাচনে শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিত কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন । দাদার সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারও চালান লতিকা দীক্ষিত সৈয়দ । প্রচারে তিনি এও মন্তব্য করেছিলেন,’শীলা দীক্ষিত এখনও প্রতিটি ঘরে বেঁচে আছেন ।’।

