প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ ফেব্রুয়ারী : বাংলাতেও মিডডে মিল নিয়ে হামেশাই ওঠে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।তা নিয়ে কেন্দ্র পদক্ষেপও গ্রহন করেছে।চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল ঘুরে মিডডে মিলের হাল খতিয়ে দেখে গিয়েছে কেন্দ্রীয় দল।এইসব নিয়ে তর্জা জারি থাকার মাঝেই এক দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কাশিরামদাস বিদ্যায়তনের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা।তাঁরা সমবেত ভাবে স্কুলের জমিতে চাষ করে সারা বছরের মিডডে মিলের প্রয়োজনীয় আলু উৎপাদন করেছেন।শিক্ষক ও পড়ুয়াদের এই কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কাটোয়ার শিক্ষানুরাগী মানুষজন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের
পরিপ্রেক্ষিতে সুনাম কোড়ানো বাংলার বিদ্যালয় গুলির অন্যতম কাটোয়া কাশিরামদাস বিদ্যায়তন।
পঠন পাঠনে গুরুত্ব দেবার পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা বিষয়ে পড়ুয়াদের হাতে-কলমে শিক্ষাও দিয়ে থাকেন। কৃষিকাজ কিভাবে করতে হয় তা হাতে কলমে বোঝাতে ইতিপূর্বে পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়েই শিক্ষকরা স্কুলের জমিতে নানা আনাজ ফলিয়ে ছিলেন। সেই আনাজ মিডডে মিলে লাগে। একই পথে হেঁটে এবছর শীতের মরশুমে পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়েই স্কুলের জমিতে আলু চাষ করেছিলেন শিক্ষকরা । কয়েক মাসের পরিচর্যায় সেই জমিতে ফলেছে ১৮ মন আলু।এই আলু স্কুলের মিডডে মিলের জন্য অনেকটা সহায়ক হবে জেনে পড়ুয়ারাও যারপরনাই খুশি ।
এই স্কুলের পড়ুয়াদের কাছে অতিপ্রিয় ভূগোলের
শিক্ষক টোটন মল্লিক।প্রতি বছর শীতের মরশুমে স্কুলের জায়গায় নানা ধরনের ফুল, আনাজপাতির গাছ বসানো তাঁর নেশা।যাতে করে পড়ুয়াদের মানসিক বিকাশ ঘটে তাই পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়েই তিনি এই কাজ করেন।টোটন বাবু গত কয়েক বছর যাবৎ স্কুলে শীতকালীন নানা আনাজ চাষ করেছিলেন। সেই আনাজ স্কুলের মিড-ডে মিলের কাজে লেগেছিল।এবছর শীতের মরশুম শুরুর প্রাক্কালেই তিনি স্কুলের কাছে থাকা স্কুলের পতিত জমিতে আলু চাষের পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেন। সেই মতই তিনি মাস তিন জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ বপন সবই পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে করে ফেলেন। জমিতে দাঁড়িয়েই শিক্ষক টোটন বাবু ছাত্রদের বুঝিয়ে যান, কি ভাবে আলু জমিতে সেচ দিতে হয় এবং রোগ পোকার দমনে কি কি করণীয়। পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে সপ্তাহ খানেক আগে তিনি ওই জমিতে ফলা আলু জমির মাটি থেকে তোলেন। নিজের হাতে স্কুলের জমিতে আলু ফলিয়ে আত্মহারা পড়ুরা নিজেরাই আলু ঝুড়িতে বোঝাই করে একের পর এক বস্তায় ভরে ফেলে।ফসল ফলানোর আনন্দে কোন ছেদ আজও পড়েনি পড়েনি পড়ুয়াদের মধ্যে।
শিক্ষক টোটন মল্লিক বলেন,প্রতি বছরই আমি ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে ফুল ও নানা ধরনের আনাজ চাষ করে থাকি। এতে ওদের মানসিক বিকাশও ঘটে।এবছর স্কুলের কাঠা দশেক জমিতে আলু চাষকরে প্রায় ১৮ মন আলু ফলাতে পেরেছেন।ওই আলুর সবটাই স্কুলের মিড-ডে মিলে লেগে যাবে ।
কাশিরাম দাস বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষক কমলকান্তি দাস বলেন,আমাদের স্কুলের শিক্ষক টোটন মল্লিক কৃষিকাজ নিয়ে হাতে কলমে ছাত্রদের যে ভাবে শিক্ষা দেন তাতে দেখে আমরাও খুশি । স্কুলের উঁচু ক্লাসের দাদারা স্কুলের জমিতে যেভাবে আলু ফলিয়েছে সেটা নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদেরও অনুপ্রাণিত করেছে। স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র মানসিক বিকাশ পাল এদিন জানায়,’স্কুলে টিফিন হবার পর আমি ও অন্য সহপাঠীরা মিলে ওই আলু চাষের জমি দেখতে যেতাম। আলু গাছ যত বড় হচ্ছিল আমাদেরও আনন্দ বাড়ছিল । কিছু দিন আগে টোটন স্যারের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে উঁচু ক্লাসের দাদারা যখন জমি থেকে ঝুঢ়িতে আলু তুলে একের পর এক বস্তায় ভরছিল তখন আমাদেরও খুব ভাল লাগছিল। ইচ্ছা হচ্ছিল ওই ভাবে বস্তায় আলু ভরার । উঁচু ক্লাসে পড়ার সময়ে এইরকমটাই করে দেখানোর বসনা প্রকাশ করেছে শুভাশিষ ও তার সহপাঠীরা।
এক পড়ুয়ার অভিবাবক বাসুদেব দাস বলেন,লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি স্কুলে কৃষিকাজ নিয়েও আমাদের বাড়ির ছেলেরা হাতে কলমে শিক্ষা পাচ্ছে। রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার বাসিন্দা হওয়ায় এটা আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি । আমাদের বাড়ির ছেলেরা স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া লেখার পাশাপাশি চাষের বিষয়েও হাতে কলমে শিক্ষা পাচ্ছে জেনে খুশি বলে অভিভাবক বাসুদেব দাস মন্তব্য করেছেন ।।