এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৯ ডিসেম্বর : বাংলাদেশ জুড়ে বর্তমানে ব্যাপকহারে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন চলছে । হিন্দু বিদ্বেষের পাশাপাশি ব্যাপক ভারত বিদ্বেষী মানসিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছেন বাংলাদেশী মুসলিমদের মধ্যে । সেভেন সিস্টার্স, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বৃহত্তর বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশী মৌলবাদীরা । এই আবহের মধ্যে বাংলা-বিহার-ওড়িশা দখলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খালেদা জিয়ার দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভি।সোমবার বিধানসভায় তাঁকে পালটা জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘ আপনার সেই ক্ষমতাও নেই, আর ভাববার কোনও কারণ নেই যে আমরা বসে ললিপপ খাব। আমরা যথেষ্ট সক্রিয় এবং যথেষ্ট ধৈর্যের পরীক্ষা দিই। আমরা সবাই সবাইকে রক্ষা করব।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারীর কাছে । পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রস্তাব দেন যে প্রকৃত যদি তিনি দেশপ্রেমী এবং হিন্দুদের প্রতি দায়িত্ব অনুভব করেন তাহলে প্রথমেই ইউনূস সমর্থক সিদ্দিকুল্লাকে সরান এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের লালন পালন বন্ধ করুন ।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’ওনার তো এগুলো ভাবার কোন ব্যাপার নেই । কারণ উনি বুঝেছেন বাংলাদেশের এই অত্যাচারের পরে এপারে থাকা বাঙালি হিন্দুসহ যারা আগে মুখ খুলতেন না সমাজের সেই ধরনের মানুষজন এবং প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউস, যে মিডিয়া হাউস সেকুলারিজম এর নামে হিন্দু অত্যাচারের কথা এতদিন দেখাতেন না, তারাও ব্যাপক জনমত দেখে সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়েছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই একটি বাক্য বলে তিনি সামগ্রিকভাবে যে আবহাওয়াটা তৈরি হয়েছে সেই আবহাওয়া থেকে নিজের ইমেজ বিল্ডআপ করতে চাইছেন । তার কারণ তার দলের সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী মোহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন করছেন । মুখ্যমন্ত্রীর যদি সত্যিকারে যদি সত্যিকারে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে চান প্রথমেই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে মন্ত্রীসভা থেকে ছেঁটে ফেলুন । কারণ সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী কোন ব্যক্তি নয় তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভার একজন সদস্য৷ মমতা ব্যানার্জির একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ।’ পাশাপাশি তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘দখল করতে এলে ওনার কি ? ওনার সিভিক ভলেন্টিয়ার্স আছে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভায় এসব না বলে আগে সিদ্দিকুল্লাকে ছেঁটে ফেলুন না । যিনি মোহাম্মদ ইউনুসকে সরাসরি সমর্থন করছেন । এই মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভাতে বিএসএফের বিরুদ্ধে রেজুলেশন এনেছিলেন । যদি বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসবাদী বা সেনার আক্রমণ হয় তাহলে প্রথম যাদের সঙ্গে দেখা হবে তারা হলো বিএসএফ ৷ আপনি বিএসএফকে ধর্ষক বলেছেন । বিধানসভায় রেজুলেশন এনেছেন । আপনি আর্মির ক্রেডিট অস্বীকার করেন । অবন্তিপুরার পরে পাকিস্তানের ভিতরে যখন আর্মি অভিযান চালিয়েছিল আপনি নবান্নর গেটে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ভিতরে ঢুকে যে মেরেছে তার প্রমাণ কোথায় ? আর্মি যখন তার রুটিন অনুযায়ী সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি কাউন্ট করছিল তখন আপনি বলেছিলেন আমার রাজ্যে আর্মি ঢুকিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার ।’
তিনি বলেন,’অর্থাৎ আপনার এই ধরনের দ্বিচারিতা সকলে জানে । আপনি কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে বিধানসভায় উদয় হয়েছেন। কোন মিনিটসে ছিল না । স্পিকার দলদাস৷ আপনার সঙ্গে সেটিং আছে । থাকা স্বাভাবিক কারণ তিনি দলের কর্ম সমিতির সদস্য হয়েছেন । হঠাৎ করে পাঁচ সাত মিনিটের বক্তব্য এবং বিধানসভার বক্তব্য ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট করা যায় না । অধ্যক্ষের ব্যবস্থাপনায় লাইভ হয় ।সেটাও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সিলেক্টিভ । ভারতবর্ষের সব বিধানসভায় লাইভ হয় কিন্তু এখানে হয়না । উনি ফেসবুকে দিয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গটা কেমন চলছে এটা বিধানসভার দিকে তাকালেই পরিষ্কার বোঝা যায়৷’
মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে রাজ্যে ব্যাপক হরে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন, ‘যত কট্টরপন্থী দলগুলো এ রাজ্যে ঢুকিয়েছে ৷ প্রায় এক কোটির মতো রোহিঙ্গা মুসলমানকে তিনি ঢুকিয়েছেন । সবাই জানে ভারত বাংলাদেশের যে ৪,০০০ কিলোমিটার বর্ডার আছে তার মধ্যে ২,২০০ কিলোমিটার বর্ডার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ৯টা জেলায় । এর মধ্যে ৯৩১ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যাচ্ছে না ৷ তার জন্য দায়ী কে ? মমতা ব্যানার্জি । ৯৩১ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নেই । অন্তত কুড়িটা চিঠি আছে… ২০২৩ সালে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহজি বিহার,ঝাড়খন্ড,উড়িষ্যা,পশ্চিমবঙ্গ মিলে ইস্টার্ন রিজিয়নের যে মিটিং সেটা নবান্নে করেছিলেন৷ আমরা মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফেরার সময় বিমানবন্দরে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমাদের বিরোধী দলনেতা আমার আগ্রহই আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি বলেছিলেম শুভেন্দু,বিরাট অংশের জমি পাচ্ছিনা৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলাম যে বিএসএফকে দেওয়ার জন্য বাজার মূল্যে আমরা জমি নিতে চাই,টাকা আমরা দেবো, আমি সেই অনুরোধ করতে এসেছিলাম । গত কয়েকদিন আগে যখন কর্মসূচিতে পেট্রোপোলে এসেছিলেন ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন তখন রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে মিটিং করে গেছেন স্বরাষ্ট্র সচিব । সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রী কেও বলেছিলেন । তিনি বারবার জমি দেওয়ার কথা বলেছিলেন ।
এমনকি লজ্জা রাখার জায়গা নেই, সীমান্তে এই মৌলবাদী জঙ্গিদেরকে আটকানোর জন্য ভারত সরকার সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত গেছে জমির জন্য । যখন অজয় ভাল্লা সচিব ছিলেন । ২২০০ কিমির মধ্যে ৯৩১ কিমি জমি দিচ্ছেন না মমতা ব্যানার্জি । যাতে ওই দিক দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানরা আসে এবং বাংলা সহ গোটা ভারতের ডেমোগ্রাফি পরিবর্তন করে দিয়ে সর্বনাশটা করেন ।’
তিনি বলেন,’উদাহরণ হল ডাবলু মান্নান, লালটু শেখ, যারা ধরা পড়েছিল সোনারপুরে । ১৭ টা ভুয়া আইডি কার্ড বেরিয়েছিল । আধার কার্ড, এপিক কাড হিন্দু নামে । ইন্দোরের সেক্স রেকেট ধরা পড়েছিল যারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে গেছিল । গত ২৫ দিন আগে ব্যাঙ্গালোরে আটজন বাংলাদেশ ধরা পড়েছে, যারা ভুয়া আধার কার্ড নিয়ে গেছে এবং তাদের বানিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে৷’
শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন,’বর্ডার এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকার সুযোগ নিয়ে যত জঙ্গি, মৌলবাদীদের ঢোকাচ্ছে । এবং হুজুররা প্রকাশ্য ধর্মীয় সভা করে বলছেন, ‘ওদের তো ২ টো আছে আমার ১২টা আছে’,’ওদের তো পরমাণু বোমা আছে আমি জনসংখ্যার বিবরণ ঘটাইয়া পৃথিবী দখল করিয়া ফেলবো ভারত তখন ছাড়’ ৷ তাদেরকে আপনি এখানে লালিত পালিত আশ্রিত করে ভু আধার কার্ড, বেআইনি এপিক কার্ড, রেশনের সুবিধা, ১০০ দিনের কাজের সুবিধা পর্যন্ত দিচ্ছেন৷ মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রামে ২০১৯-২০তে ধরা পড়েছে ১০০ দিনের কাজের টাকা বাংলাদেশের ব্যাংক একাউন্টে গেছে । তাই মমতা ব্যানার্জির কাছ থেকে এসব কথার কোন বাস্তবতা নেই । দম থাকলে দুটো কাজ করে দেখান মমতা ব্যানার্জি । মোহাম্মদ ইউনুস কে সমর্থন করার জন্য সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত আর বাজার মূল্য ভারত সরকার যে জমি চেয়েছে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য সেই জমি দিন ।’
মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বলেন,’করে দেখান আপনি৷ আপনি দেশভক্ত দেশপ্রেমিক,আপনি রাষ্ট্রের পক্ষে, আপনি মৌলবাদী জঙ্গিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আপনার কাজের মধ্যে আপনি প্রমাণ করুন । বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুকে পোস্ট করে কোন লাভ নেই ৷’।