এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ জুলাই : মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উল্লিখিত দিল্লি পুলিশের দ্বারা কথিত নির্যাতনের শিকার পরিবারের মহিলাকে নিয়ে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলনে করলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ । মহিলাকে মাঝে বসিয়ে তার মুখ দিয়ে দিল্লিতে বাঙালি নির্যাতনের কথা শোনান তৃণমূলের ওই দুই নেতা । কিন্তু ফিরহাদ হাকিম মাঝেমধ্যে মহিলার ভুল ধরিয়ে দেওয়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিজেপি । বিজেপির কথায়,এটাই তৃণমূলের দুর্বল চিত্রনাট্যের প্রমান ।
গত ২৭ জুলাই মমতা ব্যানার্জি এক্স-এ একটা ভিডিও পোস্ট করে লিখেছিলেন,’লিখেছিলেন,’জঘন্য! ভয়াবহ ! দেখুন দিল্লি পুলিশ কীভাবে মালদার চাঁচলের এক পরিযায়ী পরিবারের সদস্য একটি শিশু এবং তার মাকে নির্মমভাবে মারধর করেছে। দেখুন কীভাবে বিজেপির বাঙালিদের বিরুদ্ধে ভাষাগত সন্ত্রাসের শাসনকালে একটি শিশুও হিংসার নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না! তারা এখন আমাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?’
যদিও পূর্ব দিল্লী পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার অভিষেক ধানিয়া এই দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করে জানান যে মহিলার নাম সঞ্জানু পারভীন । কারিগরি ও স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি যে এই মহিলার বলা পুরো গল্পটি ভিত্তিহীন… জিজ্ঞাসাবাদের সময়, তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে তার আত্মীয়, যিনি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় থাকেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী, এবং তার অনুরোধে, তিনি এই ভিত্তিহীন ভিডিওটি তৈরি করে তার সাথে শেয়ার করেছেন। পরে, তিনি স্থানীয় মিডিয়াতে ভিডিওটি প্রচার করেছিলেন… পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং তদন্তের পর, আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে পুরো ভিডিওটি ভিত্তিহীন এবং বানানো । দিল্লি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই ভিডিওটি ইচ্ছাকৃতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। আরও তদন্ত এখনও চলছে।’ পাশাপাশি গতকাল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইমে এফআইআর দায়ের করে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে একটি এফআইআর দায়ের করেন ।
কিন্তু আজ দিল্লি পুলিশের উল্লিখিত সঞ্জানু পারভীন নামে ওই মহিলা দুই তৃণমূল নেতার মাঝে বসে সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেছেন, দিল্লির পাণ্ডবনগরে থাকতেন তিনি। পরিবার সহ বেশ কয়েক বছর ধরে দিল্লিতে আছেন তাঁরা। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁদের উপর অত্যাচার করা হয়৷ পুলিশের কবল থেকে রেহাই পেতে তিনি দিল্লি পুলিশকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার দাবিও করেন । মহিলা আরও দাবি করেন,’আমাদের বলল, পশ্চিমবঙ্গ মানেই তো বাংলাদেশি। তোমরা তো বাংলাদেশি। এত ভয় দেখাচ্ছিল, যে কী বলব। অনেক জায়গায় সই করিয়ে নিয়েছে৷’
তবে কথা বলার মাঝে মহিলাকে অন্যের সাহায্য নিতে দেখা যায় । এমনকি ফিরহাদ হাকিমকে পর্যন্ত মহিলার কিছু ভুল ধরিয়ে দিতে দেখা যায় । যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিজেপি । বিজেপি নেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে লিখেছেন,’প্রেস কনফারেন্সে বসে বারবার শিখিয়ে দিতে হচ্ছে, ব্যাপারটা ঠিক ভালো লাগছে না । বাঙালিদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে সেটা বলার জন্য বাং – আলী একজনকে খুঁজে বের করতে হলো? সেও আবার শিখিয়ে পড়িয়ে? খুব কাঁচা চিত্রনাট্য। তৃণমূলকে অনুরোধ করবো পরেরবার নাটকটা ভালো করে সাজাতে ।’
আর এক বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জির প্রতিক্রিয়া হল,’পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের টার্গেট করার ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়ার পরে, তার দুই অনুগত অনুচর তাকে জামিন পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি মনগড়া সংবাদ সম্মেলন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু যে মহিলা কে পীড়িত সাজিয়ে বিবরণ বিক্রি করার জন্য তাদের উত্তেজনায়, তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ভুলে গিয়েছিল- পুরো চিত্র নাট্টটা আগে অনুশীলন করা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দুর্বলভাবে লিখিত স্টান্টগুলি এখন হাস্যকর হয়ে উঠেছে। পরামর্শঃ আপনারা সময় নিন। নাটকে তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। পরের বার অন্তত লাইনগুলো মনে রাখবেন!’।

