প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ জুলাই : তৃণমূলকে ফাঁসাতে নিজেদের বাড়িতে বোমা মারানোর ঘটনা ঘটিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া সিপিএম প্রার্থী ও কর্মীকে নিয়ে রহস্য যেন ক্রমসই গড় হচ্ছে । দু’জনেই এখন রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশের হেপাজতে। পুলিশের দাবি,সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত মণ্ডল এবং তার সহযোগী সিপিএম কর্মী রাম সরকারকে হেপাজতে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে আরো বোমা ও আগ্নেআস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।পঞ্চায়েত ভোটের আগে এরা কি উদ্দেশ্যে কোথা থেকে এত বোমা ও আগ্নেআস্ত্র আমদানি করেছিল সেটাই এখন পুলিশকে ভাবিয়ে তুলেছে । এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পেতে মরিয়া পুলিশ ।তাই পাঁচ দিনের পুলিশি হেপাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার সুলান্ত মণ্ডলকে রবিবার রর্ধমান আদালতে পুণরায় হেপাজতে নিয়েছে পুলিশ।পাশপাশি পুলিশ অপর সিপিএম প্রার্থী তথা সুশান্তর স্ত্রী দেবিকা দেবনাথ ও সুশান্তর ভাইের খোঁজ চালাচ্ছে ।
পঞ্চায়েত ভোটে জামালপুর ১ পঞ্চায়েতের ১৪১ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন সুশান্ত মণ্ডল।
আর তাঁর স্ত্রী দেবিকা দেবনাথ একই পঞ্চায়েতের ১৩৯ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন।২৪ জুন
গভীর রাতে এই প্রার্থী দম্পতির বাড়িতে বোমা মারার ঘটনা ঘটেছে বলে সিপিআইএম জামালপুর-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । সেই
অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ নিশ্চিৎ হয় সুশান্ত মণ্ডলই পরিকল্পনা করে বোমা মারার ঘটনা ঘটিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই পুলিশ প্রথমে সিপিএম কর্মী রাম সরকারকে গ্রেপ্তার করে ।পরে গ্রেপ্তার করে সুশান্ত মণ্ডল কে। সুশান্ত ও তাঁর স্ত্রী
দেবজানি ’গতিধারা’ প্রকল্পের যে সাদা রঙের
এসইউভি গাড়িটি ব্যবহারর করতো সেটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ )
সুপ্রভাত চক্রবর্তী এদিন বলেন,’তদন্ত চলছে । এখনও অনেক রহস্যের উদঘাটন বাকি রয়েছে ।’
পুলিশের দাবি , ওই গাড়িতে করেই নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বোমা আনা হয়েছিল ।পুলিশ এও জানতে পেরেছে,ওই গাড়িটি রাজ্য সরকারের ’গতিধারা’ প্রকল্পে ২০২০ সালের ১৮ জুন গাড়িটি কেনা হয়েছিল।। গাড়িটির মালিক যদিও সুশান্ত বা দেবিকা নায় গাড়িটির মালিক কলকাতার টালিগঞ্জের জনৈক এক মহিলা। ওই গাড়িটি কী ভাবে সিপিএমের প্রার্থী-দম্পতির কাছে এল তার খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি,’গতিধারা প্রকল্পের গাড়ি হস্তান্তর করা যায় না। তবুও সেই গাড়ি সিপিএমের প্রার্থী-দম্পতির কাছে কি ভাবে এল তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ।’
এরই মধ্যে উত্তরমোহনপুর গ্রাম নিবাসী সিপিএম প্রার্থী দম্পতির কয়েকজন জানান, বেআইনি অর্থ লগ্নিকারী সংস্থার (চিটফাণ্ড)সঙ্গে জড়িত ছিলেন ওই দম্পতি। তাঁদের কথায়, ওই সংস্থায় অর্থলগ্নি করে অনেকে প্রাতারিত হন । তা নিয়ে গ্রামে ক্ষোভ ছড়ায়। তা জন্য প্রায় বছর দশেক আগে দম্পতি উত্তরমোহনপুর ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যান । পরে তাঁরা জমি-জায়গা বিক্রি করে গ্রামের লোকজনের পাওনা মেটান।বছর দেড়েক হল ফের দম্পতি উত্তরমোহনপুর গ্রামের বাড়িতে এসে থাকা শুরু করেন। প্রথমে তাঁরা তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়ান। পরে হঠাৎ করেই দম্পতি
সুশান্ত মণ্ডল ও দেবিকা দেবনাথ সিপিএমের প্রার্থী হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী,সশান্ত নিজেকে আইনজীবী বলেও গ্রামবাসীদের কাছে পরিচয় দিত।উত্তর ২৪ পরগণার সোদপুরে ফ্ল্যাট বাড়ি,,গাড়ি ও বাসের ব্যবসা রয়েছে বলেও সুশান্ত তাদের বলতো ।
পুলিশ জানিয়েছে,বোমা মারার ঘটনায় সিপিএম কর্মী রাম সরকার কে গ্রেপ্তার করে তাকে আট দিনের পুলিশি হেপাজতে নেওয়া হয় । এর পর ধৃত রামের কথা মতো এবং তাঁরই দেখানো তাঁদের বাড়ি লাগোয়া জোপ জঙ্গল থেকে এক রাউণ্ড কার্তুজ সহ একটি আগ্নেআস্ত্র উদ্ধার হয় । সেই আগ্নেআস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একই ভাবে পাঁচ দিনের পুলিশ হেপাজতে থাকা সুলান্তর দেখানো তাঁর উত্তরমোহনপুর গ্রামের বাড়ি লাগোয়া ঝোপ থেকে দুটি বোমা উদ্ধার হয় । বোম ডিসপোজাল স্কোয়াড জামালপুরে এসে উদ্ধার হওয়া ওই বোমা নিষ্ক্রিয় করে।
এইসব ঘটনা যত সামনে আসছে ততই অস্বস্তিতে বাড়ছে সিপিএম নেতৃত্বের। দলের জামালপুর-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন, “এখন লোকে অনেক কিছুই বলছে। এ সব তো আগে শোনা যায়নি।তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা রয়েছে দেখেই তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছিল ।তবে যা শোনা যাচ্ছে , ঘটনা যদি সত্যি তাই হয় ,তবে দল ওই দম্পতির পাশে দাঁড়াবে না।কারণ সিপিএম পার্টি অন্যায়কারীর সঙ্গে আপোস করে না“।আর তৃণমূলের জামালপুর ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খাঁন বলেন,সিপিএমের আসল স্বরুপ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।এখন মুখ লোকানোর জায়গা পাচ্ছে না সিপিএমের নেতারা ।’।