এইদিন ওয়েবডেস্ক,নরওয়ে,০২ এপ্রিল : জনসমক্ষে কোরান পোড়ানোর জন্য পরিচিত এবং ইসলামি কট্টপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের কট্টর সমালোচক সালওয়ান মোমিকাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে নরওয়েতে । তাঁর পুরো নাম সালওয়ান সাবাহ মাত্তি মোমিকা (Salwan Sabah Matti Momika) । খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ৩৭ বছরের মোমিকা ২০১৮ সালে ইরাক থেকে পালিয়ে এসে সুইডেনে আশ্রয় নিয়েছিলেন । নাস্তিক মোমিকা কোরানকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক গ্রন্থ’ বলে অভিহিত করেছেন । সুইডেনে থাকাকালীন পুলিশি নিরাপত্তায় বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে কোরানের কপি লাথালাথি করে পোড়াতে দেখা গিয়েছিল মোমিকাকে ।
দিন পাঁচেক আগে, গত ২৭ মার্চ মোমিকা নিজের এক্স হ্যান্ডেলে সুইডিশ সরকারকে তুলোধোনা করে লেখেন,’আজ আমি সুইডেন ছেড়েছি এবং নরওয়েজিয়ান কর্তৃপক্ষের সুরক্ষায় এখন নরওয়েতে আছি৷ আমি নরওয়েতে আশ্রয় এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য আবেদন করেছি কারণ সুইডেন দার্শনিক এবং চিন্তাবিদদের আশ্রয় গ্রহণ করে না, তবে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের আশ্রয় গ্রহণ করে৷ সুইডিশ জনগণের প্রতি আমার ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা একই থাকবে, তবে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ দ্বারা আমি যে নিপীড়নের শিকার হয়েছি তা সুইডিশদের প্রতিনিধিত্ব করে না।’ পাশাপাশি তিনি ঘোষণা করেন,’আমি ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাব । যেহেতু আমি ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছি, আমি মূল্য পরিশোধ করেছি এবং চালিয়ে যাচ্ছি, এবং আমি তার জন্য প্রস্তুত আছি, যাই হোক না কেন।’
রেডিও জেনোয়া আজ মঙ্গলবার টুইট করেছে, ‘নরওয়েতে ইরাকি শরণার্থী ও ইসলাম সমালোচক সালওয়ান সাবাহ মাত্তি মোমিকার প্রাণহীন লাশ পাওয়া গেছে। মোমিকা সুইডেনে বিক্ষোভ সংগঠিত করার জন্য পরিচিত ছিলেন যেখানে তিনি প্রকাশ্যে বেশ কয়েকবার কোরান পোড়ান।’
সামকা ২০১৮ সালে এপ্রিলে ইরাকি উদ্বাস্তু হিসাবে সুইডেনে এসেছিলেন এবং ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তাকে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তিনি সুইডেনে ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরান বহুবার প্রলাশ্যে পুড়িয়েছেন । সুইডিশ কর্তৃপক্ষ তাকে দেশের অভ্যন্তরে জাতিগত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ার জন্য তদন্ত করছিল।
ইরাকের একজন প্রাক্তন মিলিশিয়া নেতা, মোমিকার ইরানপন্থী গোষ্ঠী পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের সাথে সম্পর্ক ছিল। তার ফেসবুক পেজে, তিনি নিজেকে একজন নাস্তিক এবং আলোকিত রাজনীতিবিদ, চিন্তাবিদ এবং লেখক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন । তার কোরান পোড়ানোর ভিডিওগুলি একাধিক মুসলিম দেশে ক্ষোভের জন্ম দেয়, বিভিন্ন দেশে দাঙ্গা ও প্রতিবাদকে উস্কে দিয়েছে।
সুইডিশ মিডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে যে সুইডেনের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ মোমিকাকে ২০২১ সালের অক্টোবরে ইরাকে নির্বাসনের পরিকল্পনা সহ তার আবেদনের ভুল তথ্যের উল্লেখ করে এই অনুমতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে ৷ তা সত্ত্বেও, নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে তার নির্বাসন বিলম্বিত হয়েছিল, কারণ মোমিকা যুক্তি দিয়েছিলেন যে তার জীবন তার জন্মভূমিতে ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
আগের বছরের জুনে, সালওয়ান মোমিকা বকরি ঈদে স্টকহোমের একটি মসজিদের বাইরে কোরানের কপি জ্বালিয়ে দেন,যেকারণে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে মুসলিমরা । এমনকি তিনি কোরান অপবিত্র করে উপহাস করে “আল্লাহ আকবর” উচ্চারণ করার সাথে সাথে তার উস্কানিমূলক ক্রিয়াকলাপকে আরও বাড়িয়ে তোলেন। সেই বছরের জুলাই মাসে, তিনি ইরাকের দূতাবাসের বাইরে স্টকহোমে আরেকটি বিক্ষোভ করেন, ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বাকস্বাধীনতার পক্ষে তার উদ্দেশ্য হিসাবে উদ্ধৃতি দিয়ে মুসলিম পবিত্র গ্রন্থের একটি কপি নিয়ে লাথি মেরে ফুটবল খেলেছিলেন। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে, ইরাক স্টকহোমে কোরান পোড়ানোর ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছিল। বহিষ্কারটি সালওয়ান মোমিকার দ্বারা প্ররোচিত প্রতিবাদের পরে, যার ফলে বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসে ঝড় ওঠে।।