এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ জুলাই : সোমবার চাকরিহারা শিক্ষকদের নবান্ন অভিযান ব্যর্থ হয়েছে । এই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন চাকরিহারাদের একাংশ । গতকালই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অধিকারী ‘মাকু মনোভাবাপন্ন লোকজন মিশে গিয়ে আন্দোলন মাঝপথে ভেস্তে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন । সেই সমস্ত ‘মাকুদের চিহ্নিত করে’ আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে রাখার জন্য ‘রাষ্ট্রবাদীদের’ পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি । অবশেষে শুভেন্দু অধিকারী চিহ্নিত “মাকু” ও “রাষ্ট্রবাদী” চাকরি হারা শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হল দ্বন্দ্ব । নবান্ন অভিযান ব্যর্থতার জন্য চাকরিহারাদেরই একাংশকে দুষেছেন “রাষ্ট্রবাদী” চাকরিহারারা । অভিযোগ উঠছে যে শিক্ষক শিক্ষা অধিকার মঞ্চ’ নামে একটি পৃথক সংগঠন প্রচুর লোক ঢুকিয়ে দিয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমার এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে দিয়েছে ।
অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়োগের অভিযোগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের(এসএসসি) ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । রাজ্য সরকার অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ না করায় দশ হাজারের অধিক যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মী চাকরি হারিয়েছেন । ‘এসএসসি ২০১৬ প্যানেলের যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী এবং যোগ্য চাকরি প্রার্থীবৃন্দ (ওয়েটিং নট কলড ফর ভেরিফিকেশন)’ এর ডাকে সোমবার ফের নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু হাওড়া রেলস্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছে মিছিল করে নিউ কমপ্লেক্সের ক্যাব রোড ধরে এগিয়ে বঙ্কিম সেতুর নীচে জমায়েত হওয়ার আগেই বিশাল পুলিশবাহিনী তাদের আটকে দেয় । ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে সাক্ষাৎ অধরা থেকে যায় । পরিবর্তে শিবপুর পুলিশ লাইনে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমার এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন । কিন্তু সেই বৈঠকে ‘শিক্ষক শিক্ষা অধিকার মঞ্চ’ নামে একটি পৃথক সংগঠনের তরফে প্রচুর লোক ঢুকিয়ে আলোচনা বানচাল করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । আন্দোলনের প্রধান মুখ অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্যকে বৈঠকে সামিল পর্যন্ত হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে ‘শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ নামে ওই সংগঠনটির বিরুদ্ধে ।
‘এসএসসি ২০১৬ প্যানেলের যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা- শিক্ষাকর্মী এবং যোগ্য চাকরি প্রার্থীবৃন্দ (ওয়েটিং নট কলড ফর ভেরিফিকেশন)’-এর আহ্বায়ক সুমন বিশ্বাস জানান, তাঁদের শিবপুর পুলিশ লাইনে মুখ্যসচিবের সঙ্গে সদর্থক আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু বৈঠকের মাঝে একটি পৃথক সংগঠন প্রচুর লোক ঢুকিয়ে আলোচনা বানচাল করে দেয়। আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য তিনি ‘শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর নেতা চিন্ময় মন্ডল, অমিত রজ্ঞন ভুঁইয়া এবং মেহেবুব মণ্ডলদের দায়ি করেছেন । তবে তিনি জানিয়েছেন যে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’ আগামী ২৮ জুলাই যে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে তাতে ‘যোগ্য শিক্ষক- শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী এবং যোগ্য চাকরিপ্রার্থীবৃন্দ (ওয়েটিং নট কলড ফর ভেরিফিকেশন)’ শামিল হবে।
অন্য দিকে, ‘শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র নেতা মেহেবুব মণ্ডল জানিয়েছেন, সোমবারের নবান্ন অভিযানের ডাক তাঁদের সংগঠনের তরফেও দেওয়া হয়েছিল । মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনায় তাঁরা খুশি নন বলেও জানান তিনি ।
এদিকে সোমবারই শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে চাকরিহারা যোগ্য প্রার্থীদের সতর্ক করে লিখেছিলেন, ‘প্রিয় যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী বন্ধুগণ, আজ আবার আপনাদের নবান্ন অভিযানের ডাক অসম্পূর্ণ রয়ে গেলো। বৃষ্টি বাদলের দিনে, কষ্ট করে ভিজে দুর্গে পরিণত নবান্ন চত্বর পৌঁছানোর জন্য পুলিশের নানা রকম বাধা বিপত্তি পেরনোর চেষ্টা করেও মুখ্যমন্ত্রীর বদলে মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলো, তাও নবান্নে নয় শিবপুরে হাওড়া পুলিশ লাইনে ! আপনাদের আন্দোলনের এই অসম্পূর্ণতার একটা বড় কারণ হলো আপনাদের মধ্যে মিশে থাকা কিছু ‘মাকু’ মনোভাবাপন্ন লোকজন। এই ধরণের ব্যক্তিদের উপস্থিতি ও হস্তক্ষেপের কারণে ‘আর জি কর’ আন্দোলনও মাঝপথে ভেস্তে যায়।
আমার অনুরোধ, আপনারা এই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করুন ও নিশ্চিত করুন যাতে আন্দোলনের রাস এদের হাতে না থাকে, নয়তো আপনাদের আন্দোলনের পরিণতি ‘আর জি কর’ এর মতো হবে। রাষ্ট্রবাদীরা একত্রিত হোন, বিজেপি আপনাদের পাশে আছে। আপনারা এই লড়াইতে একা নন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো করে জানেন কি ভাবে ধোকা ও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আপনাদের ছত্রভঙ্গ করবেন, এবং ওনার হাত শক্ত করবেন আপনাদের মধ্যে মিশে থাকা এই ‘মাকু’ মনোভাবাপন্ন লোকজন। তাই আগামী দিনে সঠিক পথ চয়ন করতে ও সঠিক দিক নির্ণয় করতে রাষ্ট্রবাদীদের সাথে আলোচনা করুন।’।