এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ এপ্রিল : হাঁসখালির কিশোরীর ধর্ষণ-মৃত্যু ঘটনা এবং দীর্ঘ সময় পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য নিয়ে এযাবৎ মুখ খোলেননি লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, নচিকেতা চক্রবর্তী, সুবোধ সরকার, শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, জুন মালিয়া,শ্রীজাত, রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কবীর সুমন-এর মত তাবড় তাবড় বুদ্ধিজীবীরা । কিন্তু চুপ থাকতে পারলেন না চিত্রপরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় । হাঁসখালির ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সোমবার সৃজিত ফেসবুকে লেখেন, ‘হাঁশখালির ধর্ষণ মামলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অচিন্তনীয় আপত্তিকর ও অসংবেদনশীল মন্তব্য । নির্বাক এবং নির্বোধ ।’
হাঁসখালি প্রসঙ্গে ঠিক কি বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ? সোমবারই বিশ্ববাংলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে ঘটনাকে আদৌ ধর্ষণ বলা যায় কিনা তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন,’আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লাভ অ্যাফেয়ার বলবেন? না কি শরীরটা খারাপ ছিল? না কি কেউ ধরে মেরেছে ? আমি পুলিশকে বলেছি ঘটনাটা কী ? মেয়েটার না কি লভ অ্যাফেয়ার ছিল শুনেছি ।’ এছাড়স অভিযোগ জানাতে পাঁচ দিন দেরি হল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘মেয়েটি মারা গিয়েছে ৫ তারিখে । অভিযোগ জানানো হয়েছে ১০ তারিখে । যদি অভিযোগ থেকেই থাকে তবে ৫ দিন আগে অভিযোগ জানালেন না কেন?’ মেয়েটির দেহ দাহ করার পর অভিযোগ জানানোয় পুলিশের তদন্তে সমস্যা হবে বলেও মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে । কিন্তু এমন একটা মারাত্মক ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকার ‘হালকা’ মন্তব্যের কারন কি ? অভিজ্ঞমহলের মতে আসলে এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে হাঁসখালির কিশোরীর ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের কার্যত দিশা নির্দিষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
নদীয়া জেলার হাঁসখালি-১ নম্বর ব্লকের গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামনগর গ্রামে বাড়ি বছর ১৪-র নিহত কিশোরীর । একই গ্রামে বাড়ি অভিযুক্ত যুবক ব্রজগোপাল গোয়ালা ওরফের সোহেলের । তার বাবা সমর গোয়ালা হাঁসখালি এক নম্বর পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য ।
এই প্রসঙ্গে রানাঘাট জেলা পুলিশ সুপার সায়ক দাস সোমবার বলেন,’গত ৫ এপ্রিল তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যে ছেলে মূল অভিযুক্ত সোহেল গোয়ালীর বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল ওই কিশোরী । সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে আসে সে। বাড়ি ফিরেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। শেষ রাতে গ্রামের একজন চিকিত্সকের কাছে ওষুধ আনতে ছোটেন পরিবারের সদস্যরা। ফিরে এসে দেখেন নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে।’ কিশোরীর সঙ্গে সায়কের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং ছেলে মেয়ে দু’জনেই ওইদিন মদ্যপান করেছিল বলে তিনি জানিয়েছেন ।
পাশাপাশি তিনি বলেন,’তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কি কারণে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই তড়িঘড়ি দাহ করে দেওয়া হলো। অভিযুক্ত যুবককে জেরা করে সেদিন ঠিক কি ঘটেছিল, আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না খোঁজ নেওয়া হবে ।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধর্ষণের পর অসুস্থ নাবালিকার জন্য গ্রাম্য চিকিৎসক অসিত কুমার বিশ্বাসের কাছে ওষুধ আনতে যায় নাবালিকার পরিবার । ওই গ্রাম্য ডাক্তারের এবং শ্মশানকর্মীর গোপন জবানবন্দীও নিয়েছে পুলিশ । অভিযোগ দায়েরের পর মূল অভিযুক্ত সোহেলকে গ্রেফতার করা । ধৃতকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে । গ্রেফতার করা হয়েছে সোহেলের এক বন্ধুকেও । এদিকে হাঁসখালির কিশোরীর ধর্ষণ-মৃত্যু ঘটনায় অ্যাডভোকেট অনিন্দ্য সুন্দর দাস সিবিআই তদন্ত চেয়ে পিআইএল দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে ।।
ছবি : উৎস সোশ্যাল মিডিয়া ।