এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,০২ সেপ্টেম্বর : তালিবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানি মহিলাদের জীবন যাপন দুষ্কর হয়ে উঠেছে । সারা শরীর ঢাকা বোরখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । একা ভ্রমনের উপরেও রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ । আফগানি মেয়েদের প্রতিটি পদক্ষেপের উপরেই কার্যত বিভিন্ন ফতোয়া জারি করে রেখেছে তালিবান । এদিকে খোদ তালিবানরা একাধিক বিয়ে করছে । তালিবানদের লালসার শিকার হতে হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের । কাবুল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী এলাহা দেলাওয়ারজাই( Elaha Delawarzai) সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি ভিডিও বার্তায় তাঁর উপর চলা পাশবিক অত্যাচারের কথা তুলে ধরলে তালিবানদের আসল স্বরূপ সামনে আসে ।
এলাহা ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘তালিবানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন মুখপাত্র ক্বারি সাইদ খোস্তি(Qari Saeed Khosti) প্রথমে তাঁকে গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন । তারপর তাঁকে নিজের হেফাজতে রেখে জোর করে বিয়ে করে ।’ মেয়েটি দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমাকে অনেক মেরেছে । প্রতি নিয়ত ধর্ষণ করত । আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না । এমনকি সাইদ খোস্তি আমার অশ্লীল ভিডিও রেকর্ড করে প্রকাশ করার হুমকি দিত ।’
এলাহা দেলাওয়ারজাই আরও বলেন,’আমি আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু তোরখাম সীমান্ত পাস থেকে আমাকে ধরে আনে সাইদ খোস্তি । সীমান্তে ধরা পড়ার পর তালিবানরা আমাকে ক্ষমা চাইতে এবং খোস্তির পায়ে চুম্বন করতে বাধ্য করে ।’
এমনিতেই আফগানিস্তানের মহিলাদের উপর মানবধিকার লঙ্ঘনের বিস্তর অভিযোগ উঠছে । তার উপর কাবুল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রীর উপর ঘটে যাওয়া নিদারুন অত্যাচারের কাহিনী শোনার পর তালিবানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিশ্ববাসী । এমনকি বহু আফগান মহিলা সোশ্যাল মিডিয়ায় “ধর্ষক” খোস্তির নিন্দা করেছেন এবং এলাহা দেলাওয়ারজাই-এর জন্য ন্যায় বিচারের জন্য দাবি করছেন ।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ক্বারি সাইদ খোস্তি দাবি করেছেন, ‘বিয়েটি সম্মতিক্রমে হয়েছিল এবং ৬ মাস আগে দেলাওয়ারজাইয়ের কাছ থেকে প্রস্তাবটি এসেছিল । আমি তাকে মারিনি । আমার শরিয়া (আইনি) অধিকার ব্যবহার করে, আমি তার সাথে বিচ্ছেদ করেছি এবং তাকে তালাক দিয়েছি ।’ এদিকে দেশ জুড়ে রটে যায় আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইলাহা নামের ওই ছাত্রীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ জারি করেছে । যদিও আদালতের তরফ থেকে এটিকে গুজব বলা হয়েছে । তবে ভিডিও বার্তায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি খুন হয়ে যেতে পারেন । তিনি চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, ‘এই ভিডিওটি প্রকাশের পর সম্ভবত কেউ আমাকে আর দেখতে পাবে না । আমি সম্ভবত মারা যাবো । কিন্তু বারবার মরার চেয়ে একবার মরে যাওয়া অনেক ভালো ।’
তবে সাইদ খোস্তি একা নন। এক বছর আগে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর অনেক তালিবান কর্মকর্তা দ্বিতীয়, তৃতীয়, এমনকি চতুর্থবার পর্যন্ত বিয়ে করেছেন । যদিও তাদের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা তাদের একাধিকবার বিয়ে করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন । কিন্তু কে শোনে কার কথা । সম্প্রতি আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্ব প্রদেশ তাখার জেলার তালিবান গভর্নর শামসুদ্দিন একটি স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই মহিলাকে বিয়ে করে শিরোনামে এসেছিলেন । আর তালিবানরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জোর করে বিয়ে করছে বলে অভিযোগ । কিন্তু নির্যাতিতা মহিলাদের সিংহভাগ অশিক্ষিত হওয়ায় দেলাওয়ারজাইয়ের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের আওয়াজ তুলতে সমর্থ হচ্ছেন না ।।