প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ জানুয়ারি : স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অভিযানে ফাঁস হল সেই হেরোইন তৈরি ও পাচারের সাথে যুক্ত আন্ত রাজ্য চক্রের।অভিযানে ধরা পড়েছে মোট ৬ জন।তাঁদের মধ্যে দু’জনকে এসটিএফ রবিবার রাতে ধরে বর্ধমানের শ্রীপল্লীর একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে।পৌরসভা ভোটের আগে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সোমবার সকাল থেকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে বর্ধমানের বাসিন্দা মহলে ।
এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে ,বর্ধমানের শ্রীপল্লী থেকে ধৃতদের নাম বাবর মণ্ডল ও রাহুল মণ্ডল ।এঁরা সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। এই দুই ধৃতর আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গকোটে। তবে ১০ বছর আগে সেখান থেকে চলে এসে তাঁরা ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বর্ধমানে পালার- শ্রীরামপুর এলাকায় থাকতে শুরু করে।পরে তাঁরা শহর বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ে বাড়ি তৈরি করে । রবিবার রাতে এসটিএফ বাবর মণ্ডল ও রাহুল মণ্ডলদেরবর্ধমানের ডেরায় অভিযান চালিয়ে ১৩ কেজি হেরোইন ও হেরোইন তৈরির রাসায়নিক উপকরণ রাজেয়াপ্ত করেছে ।যার আনুমানিক মূল্য ৬৫ কোটি টাকা বলে এসটিএফের দাবি।এছাড়াও ধৃতদের ডেরা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২০ লক্ষ ১০ হাজার ১০০ টাকা। বাকি চার ধৃতর মধ্যে ২ জন ওড়িশা ও ২ জন মণিপুরের বাসিন্দা।এঁদের বিষয়ে হাওড়ার গোলাবারি থানা মামলা রুজু করেছে ।হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট মামলার তদন্ত শুরু করেছে । তদন্তকারীরা মনে করছেন বাবর মণ্ডল ও তাঁর ছেলে বর্ধমানের ডেরার হেরোইন তৈরি করে ওড়িশা ও মণিপুরে পাচার করতো ।
তদন্তকারীদের কথায় জানা গিয়েছে, হাওড়ার গোলাবাড়ি থানার রুজু হওয়া একটি মামলার সূত্র ধরে এসটিএফ ওড়িশা ও মণিপুর থেকে ৪ মাদক-পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন বর্ধমানের দু’জনের কাছ থেকে তাঁরা মদক দ্রব্য কেনে। বর্ধমানের মাদক কারবারীদের ৫ জন এজেন্ট ওড়িশাতে থাকার কথাও জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে । এমনকি বর্ধমানে দৈনিক ৪-৫ কোটি টাকার মাদক তৈরি হয়ে পাচারের তথ্যও তদন্তকারীদের কাছে উঠে আসে। এরপরেই রবিবার রাতে এসটিফ কর্তা আমিনুল ইসলাম খাঁনের নেতৃত্বে বর্ধমানের শ্রীপল্লীতে বাবর মণ্ডল ও রাহুল মণ্ডলদের ডেরায় অভিযান চালানো হয় ।
এসটিএফের দাবি বাবর ও রাহুলদের বর্ধমানের শ্রীপল্লীর ডেরা থেকে ১৩ কেজি হেরোইন,হেরোইন তৈরির রাসায়নিক উপকরণ ও নগদ ২০ লক্ষাধীক টাকা ছাড়াও টাকা গোনার যন্ত্র এবং অন্যান সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে ।দু’টি বাড়ির ভিতরে ‘বস্তাবন্দি’ করে বড় বড় প্লাস্টিক ড্রামের ভিতর হেরোইন ও অন্যান্য সামগ্রী লুকিয়ে গুলি রাখা ছিল। তদন্তকারী
জেনেছেন,বর্ধমানে বাবর ও রাহুলের গোপন ডেরায় যে হেরোইন তৈরি হত তার কাচা মাল আসতো মণিপুর থেকে । হেরোইন তৈরি হয়েদেওয়ার পর তা পাচারের জন্য দেওয়া হত ওড়িশার এজেন্টদের হাতে । হেরোইনের কারবারী চক্রে বর্ধমানের আর কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়েও এসটিএফ খোঁজ খবর চালাচ্ছে । হেরোইনের কারবারের বিষয়ে বর্ধমান অভিযান চালিয়ে এসটিএফ প্রচুর হেরোইন সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলেও পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারেই ছিল । এদিন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না ।’।