এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০৩ মার্চ : ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে গ্রেফতার করে ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়ে থাকে বাংলাদেশের আদালত । কিন্তু বছর দুয়েক আগে কুমিল্লা নগরের নানুয়ার দিঘির উত্তর পারে দূর্গাপূজো মণ্ডপে কোরান রেখে সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর ঘটনার মূল অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনেকে মাত্র ১ বছর ৪ মাস কারাদণ্ড দিয়ে দায় সারলো ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল । বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেছেন সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত । অথচ মণ্ডপে কোরান রাখার ঘটনার জেরে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর দূর্গাষ্টমীর দিন সাম্প্রদায়িক হিংসায় প্রাণ হারাতে হয়েছিল অন্তত ৩ জন হিন্দু যুবককে । ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল অসংখ্য দুর্গাপূজা মণ্ডপ । জিহাদিদের হামলার শিকার হয়েছিল হিন্দুদের বহু ঘরবাড়ি ও দোকানপাট । অথচ সেই সাম্প্রদায়িক হিংসার মূল পরিকল্পনাকারী জিহাদি ইকবালকে আদালত মাত্র ১ বছর ৪ মাসের কারাদণ্ড দেওয়ায় বাংলাদেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষরা এটাকে বিচারের নামে প্রহসন বলে মনে করছেন ।
নানুয়া দীঘির পাড়ের একটি পূজো মন্ডপে কোরান রেখে সেই ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তুলে পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিল জিহাদি ইকবাল । ইকবাল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগরসংলগ্ন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্কর পুকুরপাড় এলাকায় । সে পরিকল্পিতভাবে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ইসলাম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দেয় । আর তার পরে কট্টরপন্থীদের দল বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সংখ্যায় জমায়েত হয়ে দূর্গাপূজো মন্ডপে ভ্যাঙচুর চালাতে শুরু করে । চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং কক্সবাজারের পেকুয়ায় পূজো মন্ডপে হামলা করা হয় । ব্যাপক মারধর করা হয় পূজো উদ্যোক্তাদের । প্রতিবাদ করলে হামলাকারীরা কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায় । গুলি লেগে ৩ পূজো উদ্যোক্তার মৃত্যু হয় ।
ঘটনার পর বাংলাদেশ হিন্দু ইউনিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি ট্যুইট বার্তা জানানো হয়েছিল, ‘২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্ককজনক দিন । অষ্টমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের সময় অনেক পূজো মন্ডপ ভাঙচুর করা হয়েছে । হিন্দুরা এখন পূজোমন্ডপ পাহাড়া দিচ্ছেন । এই বিষয়ে আজ গোটা বিশ্ব নীরব । মা দূর্গা বিশ্বের সমস্ত হিন্দুদের রক্ষা করুন । মা এদের কখনো ক্ষমা করো না।’
কিন্তু এতবড় একটা ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীর মাত্র ১ বছর ৪ মাসের সাজা হওয়ায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । প্রশ্ন উঠছে একই দেশে মুসলিম ও হিন্দুদের জন্য পৃথক আইন কেন ? ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের এই রায়ে বাংলাদেশের জিহাদিদের হিন্দুদের উপর আক্রমণ করতে আরও উৎসাহিত করবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন ।।