সঞ্জয় মণ্ডল,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৩ এপ্রিল : স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ছিল সংসার । হতদরিদ্র পরিবারের স্বাচ্ছন্দ ফেরানোর আশায় সুদুর সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বিজয়পুর পলসোনা গ্রামের বাসিন্দা বছর ৫৪-এর প্রৌঢ় মঘলেচুর সেখ । সৌদি আরবের জেদ্দায় (Jaddah) জল বহনের ট্রাক চালকের কাজ করছিলেন তিনি । কিন্তু পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরানোর আশা অধরাই থেকে গেল তার । গত ২১ শে মার্চ জল বহনের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তার ট্রাক । গুরুতর জখম হন মঘলেচুর সেখ । তাকে জেদ্দার আল নুর বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে । কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ১০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় ভাতারের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়ের । তারপর থেকেই হাসপাতালের মর্গে রয়েছে ওই প্রৌঢ়ের মৃতদেহটি । এখন মৃতদেহ কিভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছে না পরিবার । আজ শনিবার ভাতার থানার দ্বারস্থ হন মৃতের স্ত্রী রওসোনা বেগম শেখ ও ছোট ছেলে শেখ জসিমুদ্দিনসহ পরিবারের লোকজন । ভাতার থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্তের কাছে তারা দেহ ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হওয়ার কাতর আবেদন জানিয়েছেন ।
জানা গেছে,বিজয়পুর পলসোনা গ্রামের বাসিন্দা মঘলেচুর সেখের দুই ছেলে । ছোট ছেলে শেখ জসিমুদ্দিন সদ্য স্নাতক হয়েছেন । দুই ছেলেই বেকার । মূলত তার উপার্জনেই সংসার চলত । অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবার । বছর পাঁচেক আগে তিনি সৌদি আরবের জেদ্দায় ট্রাক চালকের কাজ করতে গিয়েছিলেন । মৃতের স্ত্রী রওসোনা বেগম শেখ বলেন,’যে কোম্পানিতে আমার স্বামী কাজ করতেন সেই কোম্পানির তরফ থেকে গত ১১ এপ্রিল আমাদের কাছে ফোন করা হয় । করে বলা যে আমার স্বামী যে ট্রাক চালাত সেটি গত ২১ মার্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল । আমার স্বামীকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কিন্তু পয়লা এপ্রিল আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে । বর্তমানে দেহ মর্গে রাখা হয়েছে । ওরা ডেথ সার্টিফিকেটও পাঠিয়েছে । কিন্তু তারপর আমরা বারবার ফোন করা সত্ত্বেও ওরা আর আমাদের ফোন রিসিভ করছে না ।’
আরবি ও ইংরাজিতে লেখা ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারন হিসাবে বলা হয়েছে সন্দেহজনক পালমোনারি এমবোলিজম সহ শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতাই দুর্ঘটনায় জখম ব্যক্তিকে সরাসরি মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে । এদিকে মৃত্যুর খবর শোনার পর মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন জনের কাছে ছুটে যাচ্ছেন মঘলেচুর সেখের স্ত্রী ও দুই ছেলে । মৃতের ছেলে শেখ জসিমুদ্দিন বলেন, ‘আমরা ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর কাছে গিয়ে বাবার দেহ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছি । উনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন । ভাতার থানার ওসির কথামত আজ আমরা থানায় এসে যাবতীয় নথিপত্র জমা দিয়ে গেলাম । কেউ কেউ আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী এসএস আলুওয়ালাজির কাছে গিয়ে আবেদন জানানোর জন্য বলছেন । কিন্তু আমরা ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না ।’
পরিবারের লোকজনের দাবি,ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার মৃতদেহটি দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক । এদিকে স্বামীর দেহ ফেরানোর পাশাপাশি সংসার কিভাবে চলবে তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না মৃতের স্ত্রী রওসোনা বেগম শেখ । তিনি বলেন,’দুটো ছেলেই বেকার । স্বামী রোজকারে সংসার চলতো । এখন কিভাবে যে সংসার চলবে কিছুই বুঝতে পারছি না ।’।