এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৭ অক্টোবর : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । মৃত যুবকের নাম জামালউদ্দিন মণ্ডল (৩৩)। তার বাড়ি মঙ্গলকোট থানার সাকোনা নপাড়া গ্রামে । মৃতের পরিবার জানিয়েছেন,সোমবার রাত প্রায় দুটো নাগাদ নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফোন করে জানানো হয় যে জামালউদ্দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর তারা বর্ধমান হাসপাতালে গিয়ে জামালউদ্দিনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান । এদিকে আজ ভাতার বাজারে দমকল অফিসের পাশে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে এসে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় মঙ্গলকোটের সাকোনা নপাড়ার বেশকিছু লোকজন । পরে এনিয়ে ভাতার থানায় একটা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের স্ত্রী গোলচেহারা বিবি । তার অভিযোগ যে তার স্বামীকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ভাতারের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের লোকজন । ভাতার থানার ওসি অরুন কুমার সোম জানিয়েছেন,ঘটনার তদন্ত চলছে ।
জানা গেছে,মঙ্গলকোট থানার সাকোনা নপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জামালউদ্দিন মণ্ডলের বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী ও দুই সন্তান । জামালউদ্দিন বছর তিনেক ধরে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাকে নেশা ছাড়ানোর করার বহু চেষ্টা করেন । কিন্তু তারা ব্যর্থ হলে সম্প্রতি ভাতার বাজারে দমকল অফিসের পাশে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করে । জামালউদ্দিনসহ আরও কিছু মাদক আসক্তকে নিজেদের কাছে রেখে চিকিৎসা করছিল ওই কেন্দ্রটি।
মৃতের স্ত্রী গোলচেহারা বিবি বলেন,’আমার স্বামীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে দেওয়া হত না । শুধুমাত্র স্বামীর ছবি আমাদের মোবাইলে পাঠিয়ে এবং ফোন করে জানানো হত চিকিৎসা চলছে এবং আমার স্বামী ভালো আছেন । কিন্তু সোমবার রাত্রি প্রায় দুটো নাগাদ নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফোন আসে । বলা হয় যে আমার স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং তাকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । এই খবর পেয়ে আমরা বর্ধমান হাসপাতালে ছুটে যাও । কিন্তু হাসপাতালে আমার স্বামীক মৃত অবস্থায় দেখতে পাই ।’ মহিলার অভিযোগ,’আমার স্বামীর শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল । আমাদের সন্দেহ যে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে ।’
সূত্রের খবর,শনিবার রাতে ভাতার বাজারের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে পাঁচজন চিকিৎসাধীন ব্যাক্তি ঘরের জানালা ভেঙে পালিয়ে গিয়েছিলেন । ওই দলেই ছিলেন জামালউদ্দিন মণ্ডল । তিনি নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে রবিবার সকালে দিদির বাড়ি ভাতারের পাটনা গ্রামে চলে যান । যদিও তাকে সেখান থেকে ধরে আনে নেশামুক্তি কেন্দ্রের লোকজন । বাকি চারজনকেও বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনা হয় । জামালউদ্দিনের পরিবার জানিয়েছেন, জামালউদ্দিনকে তার দিদির বাড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় সে সুস্থই ছিল । কিন্তু তার হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুতে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা ।
যদিও মৃতের পরিবার প্রতিবেশীরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখানোর আগেই ভাতারের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের গেটে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায় কেন্দ্র পরিচালনের দায়িত্বে থাকা লোকজন । ফলে ওই কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের তরফে কোনো মতামত জানা সম্ভব হয়নি । পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে ।
এদিকে জানা গেছে,নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রের গেটে তালা দিয়ে চলে যাওয়ার সময় ভিতরে প্রায় ৩০ জন চিকিৎসাধীন ব্যক্তি ছিল। ওই রোগীদের মধ্যে ছিলেন ন’পাড়া গ্রামের রাকেশ শেখ নামে এক যুবকও । কেন্দ্রের এক চিকিৎসাধীন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য রাকেশের পরিবার ভয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে চান । কিন্তু কেন্দ্রের গেটে তালা লাগানো থাকায় তারা ভাতার থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন । শেষে ভাতার থানার ওসির নির্দেশে নেশামুক্তি কেন্দ্রের একজন কেয়ারটেকার রাকেশ শেখ নামে ওই রোগীকে ছেড়ে দেয় ।।