এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৪ ডিসেম্বর : ভুয়ো নথি দিয়ে জাল পাসপোর্ট তৈরির আন্তর্জাতিক চক্রের কিং পিন বারাসতের বাসিন্দা সমরেশ বিশ্বাস গ্রেফতার হওয়ার পর বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে । এই অপরাধ চক্রের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের কিছু কড়া প্রশ্নের মুকেও পড়তে হয় পুলিশকে । পুলিশকে বিচারকের স্পষ্ট প্রশ্ন ছিল যে যারা ধরা পড়েছেন তারা তো এই চক্রে শামিল, কিন্তু মাথারা কোথায় ? প্রশ্ন, নথি পরীক্ষা ছাড়া এত পাসপোর্ট ইস্যু হল কীভাবে ? জাল নথিতে কীভাবে পাসপোর্ট ইস্যু ? যাদের উপর এসব নথি পরীক্ষার দায়িত্ব ছিল, তারা কি ধরা পড়বেন ? তদন্তকারী অফিসার তদন্ত চলছে ও কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে পাশ কাটিয়ে যান । তবে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ মনে করছেন যে এই চক্রে শুধু পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীই নয় বরঞ্চ জড়িয়ে আছে পঞ্চায়েত ও পুলিশও । তার কথায় এই র্যাকেটটি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মালদা এবং বালুরঘাট সহ ভারতের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ।
রাজ্যের জাল পাসপোর্ট চক্রের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এক্স-এ ৪টি পোস্ট করেছেন দিলীপ ঘোষ । প্রথম পোস্টে তিনি লিখেছেন,পাসপোর্ট জালিয়াতির কিংপিন সমরেশ ধরা পড়েছে । তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের যোগসূত্র থাকার বিষয়টি উন্মোচন করেছে ৷ বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ভারতে এনে পাসপোর্ট জালিয়াতির র্যাকেট শুরু হয় -একবার ভারতে, তাদের স্থানীয় পঞ্চায়েত দ্বারা জারি করা আবাসিক শংসাপত্র সরবরাহ করা হয়েছিল ।’
দ্বিতীয় পোস্টে তিনি লিখেছেন,’সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি, যেমন স্কুল শংসাপত্র, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শংসাপত্র, আধার কার্ড, ইত্যাদি, জাল ছিল ৷ পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য পোর্টাল আপডেট এবং যাচাইকরণ সহ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় চক্রটি ওই সমস্ত জাল নথিপত্র ব্যবহার করেছিল।’
তৃতীয় পোস্টে তিনি লিখেছেন,’এই জাল পাসপোর্টগুলি যাচাই করার জন্য পুলিশ অফিসার এবং পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরাও জড়িত ছিল- শুধুমাত্র কলকাতাতেই গত পাঁচ বছরে ৩,০০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি এই ধরনের নথির মাধ্যমে প্রবেশ করেছে ৷ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর বিবেচনায় এ সংখ্যা কয়েক লাখ হতে পারে।’ সব শেষে দিলীপ ঘোষ লিখেছেন, ‘এই র্যাকেটটি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মালদা এবং বালুরঘাট সহ ভারতের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশেও কাজ করে, এজেন্ট এবং সাব- এজেন্টদের মাধ্যমে কাজ করে।’
প্রসঙ্গত,পশ্চিমবঙ্গে জাল পাসপোর্ট চক্রের জাল বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ এই চক্রের কিং পিন বারাসতের বাসিন্দা সমরেশ বিশ্বাস এখন পুলিশের হেফাজতে । গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে বেহালা থেকে দীপঙ্কর দাস নামে একজনকে পুলিশ পাকড়াও করে । উদ্ধার হয় প্রচুর জাল নথি, এসবিআই ও ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের সিল, ৩৬টি ভারতীয় পাসপোর্টের ফটোকপি এবং ব্রিটেনের ভিসা । দীপঙ্কর গ্রেফতার হবার আগেই গ্রেফতারির ভয়ে ১০ ডিসেম্বর সমরেশ সস্ত্রীক বাংলাদেশে পালিয়ে যায় । ১২ তারিখ তার বারাসতের বাড়িতে অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশ। সমরেশকে না পেয়ে তার ছেলে রিপনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে । এরপর ১৩ ডিসেম্বর সমরেশ দেশে ফিরতেই পরেরদিন সমরেশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।তদন্তকারীদের সন্দেহ যে বাংলাদেশেও সমরেশের কারবার রয়েছে। সেখানেও তার এজেন্ট রয়েছে , তার মাধ্যমে গোটা কারবার চলে। সমরেশের মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করে মিলেছে একাধিক বাংলাদেশি নাগরিকের নম্বর। তারা সমরেশের হয়ে সেখানে কাজ করছে বলে মনে করছে পুলিশ ।।