এইদিন ওয়েবডেস্ক,আমেঠি,১১ ফেব্রুয়ারী : উত্তরপ্রদেশের আমেঠিতে অভিনব এক প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে । বাবার সঙ্গে দিল্লিতে পড়াশোনা করা আমেঠির খড়ৌলির বাসিন্দা অরুণ নিখোঁজ হয়েছিলেন ২০০২ সালে । সংবাদ মাধ্যম দৈনিক জাগরণের প্রতিবেদন অনুযায়ী,সম্প্রতি খড়ৌলি গ্রামে অরুণের পরিবার তাদের ছেলের চেহারার এক ব্যক্তিকে নিয়ে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতে দেখে হতবাক হয়ে যায়। তারা ওই ছদ্মবেশিকেই অরুণ ভেবে স্বীকার করে নেয় । পরিবারের সদস্যরা চেষ্টা করছিলেন কোনোভাবে ছেলেকে সাধুর ছদ্মবেশ ত্যাগ করে পারিবারিক জীবনযাপন শুরু করতে। প্রথমে লোকটি প্রত্যাখ্যান করলেও পরে সে ফোন করে বলে যে সাধুর বেশ ত্যাগ করার জন্য তার মঠে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে।
পরিবারটি তাদের ছেলেকে ফেরত খুব আগ্রহী ছিল, তাই তারা তাদের ১৪ বিঘা জমি বিক্রি করে তাদের ছেলেকে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি শুরু করে। যদিও সম্পূর্ণ চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় চূড়ান্ত হয় । কিন্তু এরই মধ্যে জানা গেল যে ছেলেটির জন্য পরিবার সবকিছু বিক্রি করতে প্রস্তুত ছিল সে তাদের ছেলে নয় বরং গোন্ডার টিকরিয়া গ্রামের মহম্মদ নাফীস নামের একজন দুষ্কৃতী ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,নাফীসের চার ভাই। তাদের একজনের নাম রশিদ। রশিদও সাধুর ছদ্মবেশ ধরে লোক ঠকাত । ২০২১ সালের ২৯ জুলাই রশিদ মির্জাপুরের চুনার থানা এলাকার সহসপুর পরসোধা গ্রামে গিয়েছিল । ওই গ্রামের বাসিন্দা বুধিরাম বিশ্বকর্মার ছেলে রবি ওরফে আন্নু ১৪ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিল। আন্নু সেজে রশিদ বুধিরামের স্ত্রীকে মা সম্বোধন করে বলে যে, তুমি আমাকে ভিক্ষা দাও, যাতে আমার যাত্রা সফল হয়। তখন বুধিরামরা রশিদকে নিজেদের ছেলে ভেবে বসে । কয়েকদিন পর রশিদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে যায় । পরে পুলিশ তাকে আটক করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।
একই বছরের ১৪ জুলাই, বারাণসীর চোলাপুর থানা এলাকার হাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা কাল্লু রাজভারের বাড়িতেও একই ঘটনা ঘটে । কাল্লু রাজভারের ছেলে সুনীল ১৫ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যায়, সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে তার বাড়িতে যায় নাফীসের মাসতুতো ভাই টিকরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুনীল । সে কাল্লুর স্ত্রীর কাছে ভিক্ষা চাইতে গিয়ে তার মনোষ্কামনা পূরণ করে দেওয়ার কথা বলে । তারপর ওই প্রতারক কাল্লু রাজভারের বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় ।
মহম্মদ নাফীস জানিয়েছিল সে ঝাড়খণ্ডের পরশনাথ মঠে শিক্ষা গ্রহণ করেছে । তার গুরুর নির্দেশ ছিল অযোধ্যা ভ্রমণের পর গ্রামে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে ভিক্ষা করে আশ্রমে ফের আসুক, তবেই সন্ন্যাসী হওয়ার দীক্ষা সম্পন্ন হবে। যদিও ঝাড়খণ্ডে এই নামের কোনো মঠ নেই। সেখানে অবশ্যই জৈন মন্দির আছে ।
পরে সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে জানতে পারে নাফীস যে গ্রামের বাসিন্দা সেই গ্রামের কিছু মানুষ প্রতারণার অভিযোগে জেলে পর্যন্ত গেছে । গ্রামের এই ব্যাবসাকেই রপ্ত করে নাফীস। সে একজন হিন্দু সাধুর ছদ্মবেশ ধরে গত ২৭শে জানুয়ারী আমেঠির খারউলি গ্রামে হানা দেয় এবং সন্তান হারানো একটা পরিবারকে নিশানা করে । সে ওই পরিবারকে বোকা বানানোর জন্য তাদের আবেগকে কাজে লাগায় ।
নাফীসের কাছে একথা শুনে ওই পরিবার তাকে পয়লা ফেব্রুয়ারি তিন লাখ ৬০ হাজার টাকার, ১৩ কুইন্টাল শষ্য এবং যোগাযোগ রাখার জন্য একটি মোবাইল ফোনও দেয়। পরে মালাপত্র পিকআপে বোঝাই করে অযোধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারী পরিবারের এক সদস্য অযোধ্যায় তার ঠিকানায় পৌঁছালে দেখে যে সেখানে কিছুই নেই । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ঝাড়খণ্ডে এমন কোনও মঠ নেই যার নামে নাফীস এই প্রতারণা চালায়নি। এই ঘটনার পর পুলিশ জনগণকে এ ধরনের ঠগীদের থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এর পর কোনো পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতারণার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে পুলিশ । পুলিশ মহম্মদ নাফীসের সন্ধান চালাচ্ছে ।।