এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব মেদিনীপুর,০২ জুলাই : ওবিসি তালিকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি রাজ্য রাজনীতির একটা বড় ইস্যু । বিজেপিসহ বহু সাধারণ মানুষের অভিযোগ যে মুসলিম ভোটব্যাংক সুরক্ষিত রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অবৈধভাবে হিন্দু ওবিসিদের কোটা কেড়ে মুসলিমদের পাইয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করছেন । এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক প্রসূন মৈত্রের নেতৃত্বে “আত্মদীপ” নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন দীর্ঘ দিন আইনি লড়াই লড়ছে ৷ মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের অন্তর্গত ময়না বাজারে একটি জনসভায় ভাষণে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাষণেও ফের উঠে এসেছে ওবিসি বিতর্ক ৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে “জালি হিন্দু” বলে অবিহিত করে বলেছেন,’হিন্দু ওবিসিদের বাদ দিয়ে সব মুসলমান সম্প্রদায়কে ওবিসি বানাতে চান মমতা৷’
তিনি বলেছেন,মমতা ব্যানার্জি একটা জালি হিন্দু । ওবিসি হিন্দুদের অধিকার মমতা কেড়ে নিয়েছেন । আজ স্কুল কলেজে পরীক্ষা বন্ধ । ভর্তি বন্ধ । কারণ কি ? কারণ মমতা ব্যানার্জি আমাদের হিন্দু ওবিসিদের বাদ দিয়ে সব মুসলমান সম্প্রদায়কে ওবিসি বানাতে চান । হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট মানকে নারাজ ।’
শুভেন্দু বলেন,’অবৈধভাবে মাহেশ্ব, তিলি, তেলি, কামার, কুমোর, স্বর্ণকার, মালাকারদের আজ ওবিসি-বি এর তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে । আর ওবিসি-এ তে মুসলমানদের নিয়ে আসছে । একশোর মধ্যে ৯৮ টা মুসলমানকে ওবিসির তালিকায় আনতে গিয়ে আজকে নাপিত থেকে শুরু করে সমগ্র হিন্দু ওবিসিকে মমতা শেষ করে দিচ্ছেন ।’ এরপর তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে ‘ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান জানান ।
কি এই ওবিসি মামলা ?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র সংরক্ষণের কোটা কেটে মুসলিমদের পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল । রাজ্যে ওবিসি সার্টিফিকেট পদ্ধতি মেনে দেওয়া হয়নি এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সব ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে প্রায় ১২ লক্ষ সার্টিফিকেট অকেজো হয়ে যায় । রায়ে হাইকোর্ট বলেছিল,’এই সম্প্রদায়গুলিকে ওবিসি হিসেবে ঘোষণা করার ক্ষেত্রে ধর্মই একমাত্র মাপকাঠি বলে মনে হচ্ছে। ৭৭টি শ্রেণীর মুসলিমদেরকে পিছিয়ে পড়া হিসেবে নির্বাচন করা সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অপমানজনক৷’ হাইকোর্ট ২০১০ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রদত্ত ৭৭টি শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ বাতিল করে দেয় ।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। হাই কোর্টের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরও। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দেয় যে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা যাবে না । নতুন ওবিসি তালিকা তৈরি করার জন্য রাজ্য সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেয় সর্বোচ্চ আদালত । কিন্তু এরপর আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এবং বিধি না মেনে, নামমাত্র সমীক্ষা করে তড়িঘড়ি নতুন ওবিসি তালিকা প্রকাশের অভিযোগ রাজ্যের বিরুদ্ধে। নতুন তালিকার উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয় মামলাকারীর পক্ষ থেকে। সেই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার জানিয়েছে যে তারা নিজেদের ভুল শুধরে আপাতত ওবিসি ক্যাটাগরিতে নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। আদালত এই বিষয়ে রাজ্যকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে । মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৪ জুলাই, বিকেল ৩ টের সময় নির্ধারিত করা হয়েছে ।
যদিও বিধানসভা অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশে নতুন অনগ্রসর সম্প্রদায়ের তালিকা তৈরি হয়েছিল। কোন কোন জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে তার নির্দিষ্ট তালিকাও কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছিল অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশন। নতুন তালিকাতে ওবিসি হিসেবে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করেছে। ওইদিন ওবিসি তালিকা নিয়ে বিধানসভায় বিস্তারে ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘রাজ্যে ২৬ শতাংশ এসসি সংরক্ষণ রয়েছে। এসটি সংরক্ষণ ৬ শতাংশ। প্রত্যেকে হিন্দুদের মধ্যে পড়ে। রাজ্যে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছে। পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘুদের খেতে-পরতে দেবো না, তা হতে পারে না। সামাজিক এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়ার উপর ভিত্তি করে মণ্ডল কমিশন অনুযায়ী ওবিসি সংরক্ষণ করা হয়েছে।’।

