এইদিন ওয়েবডেস্ক,কন্যাকুমারী,০১ জানুয়ারী : তামিলনাড়ুতে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ৷ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির মধ্যে একজন ১২ বছর বয়সী ভলিবল খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মহিলারা পর্যন্ত যৌন নিপিড়নের শিকার হয়েছেন । নির্যাতিতা ভলিবল খেলোয়াড় কিশোরী গত ২৫ ডিসেম্বর সবেমাত্র ত্রিচিতে একটি ভলিবল টুর্নামেন্ট থেকে ফিরেছিল এবং কন্যাকুমারীতে সে যৌন নিপীড়নের শিকার হয় ।
জানা গেছে,কিশোরী ক্রীড়াবিদ নিজের স্কুলের বাইরে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল তখন ৩৭ বছর বয়সী ফয়সাল খান সেখানে আসে । মেয়েটিকে বাথরুম ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা বলে তাকে পাশের বাড়িতে নিয়ে যায় ফয়সাল খান । সেই বাড়ির
একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে মেয়েটিকে জোর করে ঢুকিয়ে যৌন নির্যাতন করে । মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসে এবং তার বাবা-মাকে ঘটনার কথা জানায় । এরপর মার্থান্ডাম মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় । পুলিশ যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা (পকসো) আইনে ফয়সাল খানকে গ্রেপ্তার করে। আরও তদন্তে নির্যাতিতার ছেলেবন্ধু, ২১ বছর বয়সী রেজিস কুমারের জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা প্রকাশ পায়, যে তিনি অন্য ছাত্রদের ফয়সাল খানের বাসভবনে যেতে সাহায্য করেছিলেন কিনা তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ । এই ঘটনাটি ১৯ বছর বয়সী আন্না ইউনিভার্সিটির ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে ঘটেছে , যা তামিলনাড়ুতে মহিলাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক যৌন নিপিড়নের জন্য সম্মিলিত ক্ষোভকে উসকে দিয়েছে ।
আরেকটি ভয়ঙ্কর ঘটনায়, কল্লাকুরিচি জেলায় নির্মলা নামে ২৮ বছর বয়সী এক মহিলাকে নির্মমভাবে যৌন লাঞ্ছিত ও হত্যা করা হয়েছিল। চার বছর আগে মহিলার স্বামী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়, নির্মলা তার দুই তরুণী মেয়েকে একাই বড় করছিলেন। গত ২৬ শে ডিসেম্বর, তিনি দুধ সরবরাহ করতে বেরিয়েছিলেন কিন্তু পরের দিন কাছের একটি আখ ক্ষেতে তার দেহ উদ্ধার হয় । ঘটনাস্থলে ধ্বস্তাধস্তির চিহ্ন দেখে তদন্তকারীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল।
এই ঘটনাক্রমে আরও ভয়াবহতা প্রকাশ্যে এসেছে তামিলনাড়ু থেকে । চেন্নাইয়ের আন্নামালাইপুরমে একজন ৪৭ বছর-বয়সী যাজক, টি. কেনিথ রাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যখন একজন মহিলা তাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন ভূত ছাড়ানোর নামে । নির্যাতিতা অভিযোগ করেছেন যে যাজক তার ভুত ছাড়ানোর নাম করে তাকে যৌন নির্যাতন করেছে, ঘটনাটি প্রকাশ করলে তার পরিবারের ক্ষতির হুমকিও দেয় ওই যাজক ।
এছাড়া শিবগাঙ্গাইর একটি পেন্টেকস্টাল চার্চের একজন কর্মচারী মহেশ, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যখন এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে সে একটি ৩৪ বছর বয়সী বিবাহবিছিন্ন মহিলাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গর্ভবতী করে দেয় । পরে প্রসবের পরে মা এবং সন্তান উভয়ের কোনো দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে মহেশ, যার ফলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই যৌন নির্যাতনের ঘটনাক্রমের মধ্যে তমিঝার কাচি পার্টির আইটি শাখার কর্মকতা শক্তিভেলের বিরুদ্ধে তার কর্মক্ষেত্রে একাধিক মহিলাকে গর্ভধারণের অভিযোগ ওঠে । একজন ২৫ বছর বয়সী নির্যাতিতা তরুনী শক্তিভেলের বিরুদ্ধে লাগাতার যৌন হয়রানি এবং চাপের কথা জানিয়েছেন,যে কোনও ভিন্নমতকে দমন করার জন্য তার প্রভাব ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ।
তামিলনাড়ুতে ব্যাপক যৌন নির্যাতন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়েছে, যা স্থানীয় কলা ও বিজ্ঞান কলেজের জিয়াউদিন নামে একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে । একজন ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং অর্থ ও গয়না চুরির মাধ্যমে তাকে আর্থিকভাবে শোষণ করার জন্য তার বিরুদ্ধে পকসো আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আর একটি উদ্বেগজনক মামলায় ২০ বছর বয়সী নার্সিং ছাত্রী সোমিয়া নিখোঁজ হওয়ার পর পুডুকোট্টাই জেলার একটি কূপে তার লাশ পাওয়া যায়। অভিযোগ উঠেছে যে তার মৃত্যু তার কথিত প্রেমিক মণিকন্দন দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল ।
গত ২১ শে ডিসেম্বর, আভুদাইয়ারকোইল সরকারি হাসপাতালের একজন নার্সকে স্থানীয় ডিএমকে কর্মকর্তা, আর. ভারতী রাজা, তার ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদাবাজির পরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশি হস্তক্ষেপের জন্য তার মরিয়া আবেদন সত্ত্বেও, সময়মত পদক্ষেপের অভাবে তিনি অসহায় বোধ করেন এবং তাকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়। কলেজের তৃতীয় বর্ষের নার্সিং ছাত্রী সৌমিয়া (২০), নিখোঁজ হওয়ার পর গত ২৭ ডিসেম্বর পুদুকোট্টাই জেলার করমবাকুডির কাছে একটি কূপে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল । প্রথমে ধর্ষণ-খুন মনে হলেও নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তাকে তার কথিত প্রেমিক মণিকন্দন হত্যা করে লাশ কুয়ায় ফেলে দিয়েছে ।
অন্য একটি ঘটনায়,২১শে ডিসেম্বর, আভুদাইয়ারকোইল সরকারি হাসপাতালের নার্স তার জীবন শেষ করার চেষ্টা করেছিল যখন ডিএমকে পরিবেশ শাখার কর্মকতা আর ভারতী রাজা তার নগ্ন ছবি এবং ভিডিও আপলোড করে ব্লাকমেলিং করে ১০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিতে না পারায় জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তামিলনাড়ুতে এই প্রকার ঘটনা হিমশৈলের চুড়া মাত্র । দ্রাবিড় মডেল ডিএমকে সরকারের অধীনে মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য অপরাধের অবাধ প্রবাহ ছাড়াও মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।।