এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ আগস্ট : শেখ হাসিনাকে অনৈতিকভাবে উৎখানের পর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা এখন মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে চরমপন্থী ইসলামি গোষ্ঠীগুলির হাতে । নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে । চলছে ব্যাপক ধরপাকড় । গ্রেপ্তারি এড়াতে আওয়ামী লীগের সাংসদরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে । তাদের মধ্যে অনেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আত্মগোপন করে আছে বলে দাবি করা হয় । আওয়ামী লীগের ওই সমস্ত প্রাক্তন সাংসদদের মধ্যে সবথেকে বিতর্কিত একটি নাম হল বাহার উদ্দিন বাহার । বাংলাদেশের কুমিল্লার বাসিন্দা বাহার উদ্দিন বাহার চরম হিন্দু বিদ্বেষী এবং ভারত বিদ্বেষী বলে পরিচিত । মেয়ে তাহসীন বাহারকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মিছিল করেছিল ওই কুখ্যাত সংসদ । কুমিল্লার বহু হিন্দু পরিবার তার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার । হিন্দু ধর্মস্থল, ঘরবাড়ি দোকানপাটে হামলা, লুটপাট-ভাঙচুর-অগ্নি সংযোগ থেকে শুরু করে খুন এবং নারী অপহরণের মতো মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ৷ শেখ হাসিনার পতনের পর বাহার উদ্দিন বাহার সপরিবারে ভারতে পালিয়ে এসেছে এবং এখন সে কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনে আত্মগোপন করে আছে বলে দাবি করা হচ্ছে ।
আজ শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এনিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে ৷ ‘মৃদুল বিহাইন্ড ইউ’ ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে,বাংলাদেশের চরম হিন্দু বিদ্বেষী আজ পালিয়েছে হিন্দুদেরই দেশে। সে লুকিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের নিউটাউন রাজারহাট এলাকায়। এর নাম বাহার উদ্দিন বাহার।বাড়ি কুমিল্লায়। বাহারকে আশ্রয় দিয়েছে কারা ? ২০২১ সালে এই মাফিয়া সারাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ, মন্দির বাড়িঘর লুটপাট ভাঙচুর সব কিছুই এরই ইন্ধনে হয়েছে। একে ধরুন চরম শাস্তি দিন আর যদি না পারেন তাহলে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিন। ২০২১ সালে প্রায় ৪০টি জেলায় দফায় দফায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ ও মন্দির ভাংচুর করা হয়। নিউটাউন রাজাকার সহ পশ্চিমবঙ্গের সকল হিন্দুদের নিকট অনুরোধ এই বদমাইশ বাহার ও তার মেয়েকে খুঁজে বের করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’ ওই পেজে বাহার উদ্দিন বাহার ও তার মেয়ের ছবি পোস্ট করা হয়েছে । পাশাপাশি মুখের দাড়ি কেটে বর্তমানে বাহার উদ্দিন বাহারের একটা ছবিও দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতনের প্রমাণস্বরূপ কিছু ছবিও দেওয়া হয়েছে ।
বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের অ্যাডমিন শুভ রাজবংশী লিখেছেন,’প্রিয় ভারতবাসী বাংলাদেশের প্রাক্তন এমপি বাহার সাহেব এখন ভারতে গিয়ে শ্রী বাহার হয়ে গিয়েছেন।২০২১ রক্তাক্ত শ্বারদের কথা হয়তো আপনারা কেউ ভুলেননি এখনো,৪০০+ মন্দির ভাংগা কয়েকজনের প্রানহানী এছাড়াও ধর্ষনের শিকার হয়েছিলো হিন্দু মা বোনেরা। এই সকল ঘটনার পিছনে থাকা এই সেই বাহার যিনি সেই ঘটনার মাস্টার মাইন্ড। এমনকি ঘটনা পরবর্তীতে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখিয়ে তাদের উপরে নির্যাতন করে ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে গ্রেফতার হওয়া আসামীদের জামিনে মুক্তি দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দেন এই বাহারের চেলা চামচারা।ভারতীয়দের কাছে প্রশ্ন কিভাবে এইরকম অন্যায়কারীরা ভারতে রাজার মতো আপ্যায়ন পায়! বাংলাদেশি হিন্দুরাও ভারত বিদ্বেষী হয়ে যাবে যদি আপনারা এদের মতো হিন্দু খুনীদের মেয়ের জামাই বানিয়ে রাখেন নিজ দেশে। আপনারা কি পারবেন একে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে? তাহলে আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।’
জানা গেছে,কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বাহার উদ্দিনের মেয়ে ডাঃ তাহসীন বাহার সূচনা । তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন । তাহসীন বাহার কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বড় মেয়ে।
গত বছরে বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর একটা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল,অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, খুনের মামলার আসামি ও তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি—এই তিন শ্রেণির মানুষকে সব সময় নিজের আশপাশে রাখতেন কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার। যে কারণে মানুষ তাঁকে ভয় পেত। এর মধ্য দিয়ে কুমিল্লা শহর ও আশপাশের এলাকার রাজনীতি ও অপরাধ—দুটোই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তাঁর দাপট এতটাই ছিল যে আওয়ামী লীগের নেতারাও এখন বলছেন, কুমিল্লা শহরে কোনটি ‘ন্যায়’ আর কোনটি ‘অন্যায়’, সেটিও তিনি ঠিক করতেন। তিনি যেন কুমিল্লায় দুর্বৃত্তায়নের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
গত ১৫ বছরে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নিজের অনুসারী ও ঘনিষ্ঠজনদের দলীয় বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন। তাঁদের অনেককে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন। জ্যেষ্ঠ নেতাদের বঞ্চিত করে নিজের মেয়ে তাহসীন বাহারকে প্রথমে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করেন। গত মার্চ মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তাহসীনকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ঘোষণা করেন তিনি। ২০১৩ সালে কুমিল্লায় কোনটি ‘ন্যায়’ আর কোনটি ‘অন্যায়’, সেটিও ঠিক করতেন বাহার। দখল, চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, নিজ দলের বিরোধী পক্ষকে দমনসহ নানা অপকর্ম করেছেন বাহারের ঘনিষ্ঠরা। গত ১৫ বছরে কুমিল্লা শহরে অন্তত পাঁচজন দলীয় নেতা-কর্মী খুনে বাহারের সহযোগীরা সরাসরি জড়িত।
আজ বাংলাদেশের সংবাদপত্র যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মিছিল করা কুমিল্লার প্রাক্তন এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাকে নিয়ে কলকাতায় লুকিয়ে আছেন বলে দাবি করেছেন পূর্নিমা রানী শীল লগ্নজিতা নামে এক তরুণী। শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এবং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এই সেই কুকুর যে কি না আওয়ামী লীগের খেয়ে পরে মোদির সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় কাট মোল্লা নিয়ে মিছিল করে সে কেন ভারতের মাটিতে। আর বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায় জীবন বাঁচতে যেতে চায় তখন ভিসা দরকার ছি!’
তিনি আরও লেখেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশে দুর্গাপূজায় হামলার পেছনে বাংলাদেশি আওয়ামী লীগ নেতা বাহার উদ্দিন বাহার যিনি পূজা মণ্ডপে কোরআন রেখেছিলেন। তখন সারা বাংলাদেশে পুজোর বারোটা বাজিয়েছিল। তিনি এখন তার মেয়েকে নিয়ে কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনে লুকিয়ে আছেন…।’ ‘এই বাংলাদেশি রাজাকার আলবদরকে কোনো রকম সাপোর্ট করা কি ভারত সরকারের উচিৎ? অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক..রাজ্যে ও কেন্দ্র উভয় সরকারকে আবেদন জানাচ্ছি…!’ ‘আমি জানি এটি পৌঁছাতে পারবে কি না। তবে তাকে প্রশ্ন করা হোক, কোন কারণে এগুলো করেছে।’ এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রচারের পর একদিকে যেমন বাংলাদেশিরা তাকে ফেরত পাঠানোর দাবি তুলছে, পাশাপাশি অন্যদিকে ভারতীয়রা দাবি তুলছে তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হোক ।।