জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান), ০৩ মে : গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সকাল হতে না হতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে যাত্রা শুরু করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একসময় সেটা অর্ধ সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। উদ্বিগ্ন চিকিৎসককুল প্রতি মুহূর্তে সতর্ক বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অস্তিত্ব সংকটের মুখে জীবকুল। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে পরিবেশ দূষণ জনিত কারণে সূর্য থেকে আগত রশ্মি পৃথিবীতে এলেও সেগুলোর একটা বড় অংশ মহাশূন্যে ফিরে যেতে পারছেনা। এরসাথে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার। যারা এই তাপমাত্রা কমাতে পারত সেই উদ্ভিদকুলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দরকার ৩৩ শতাংশ উদ্ভিদ। একদল মানুষের সীমাহীন লোভের জন্য সেটার পরিমাণ প্রয়োজনের থেকে অনেক কম। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ।
ঠিক সেই সময় আর এক বিপদ দুয়ারে এসে হাজির হয়েছে। ‘ধানের গোলা’ হিসাবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে। কোথাও যন্ত্রের সাহায্যে, কোথাও বা কৃষিশ্রমিক ব্যবহার করে ধান গাছ কাটা হচ্ছে। মাঠের মধ্যে পড়ে থাকছে ‘নাড়া’। কুটুরিগুলো জড়ো করে রাখা হচ্ছে মাঠের মধ্যে। তারপর অতীতের মত সেগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। এই জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে সৃষ্ট প্রচণ্ড তাপ পরিবেশের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে।
গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এইগুলি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনিক তরফ থেকে যেমন সক্রিয় উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা তেমনি সাধারণ মানুষও পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারছেনা। কথা হচ্ছিল বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ .নাদিরা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বললেন, সবকিছু আইন করে বন্ধ করা যায়না। দরকার মানুষের বিবেকবোধ। আগুন লাগানোর জন্য পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি ক্ষতি হচ্ছে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তির। কারণ আগুনের তাপে জমিতে থাকা কৃষির পক্ষে উপকারী অণুজীবগুলো মারা যাচ্ছে। তাছাড়া মাটির উপরের অংশটা পুড়ে গিয়ে সেগুলি চাষের পক্ষে অনুপযুক্ত হয়ে উঠছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা নিজেদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কৃষি আধিকারিক বললেন, প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের লোকবল ও অর্থবল কম। ফলে একটা ব্যানার টাঙিয়ে এলাকার চাষীদের সতর্ক করা ছাড়া আমরা বিশেষ কিছু করতে পরিনা। এতে যে খুব একটা কাজ হচ্ছেনা সেটা আমরা বুঝতে পারি। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্লক কৃষি দপ্তর যৌথভাবে কাজ করলে হয়তো সমস্যা দূর হতে পারে।।